২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুঘল নির্মাণশৈলীর খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ অনন্য স্থাপত্য

-

ঢাকায় প্রাচীনকাল থেকে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ। এ জন্যই ঢাকা মসজিদের নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর প্রতিটি মসজিদের রয়েছে নানা ইতিহাস, নানা গল্প। অনেক গল্পই আবার হারিয়ে গেছে কালের বিবর্তনে। কিন্তু মসজিদগুলো আজো দাঁড়িয়ে স্বমহিমায়। খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ ঢাকার প্রাচীন একটি মসজিদ। পুরান ঢাকার লালবাগে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ তার একটি। তবে মসজিদটির এই নাম খুব কম মানুষই জানেন। এমনকি এলাকারও অনেকেই জানেন না। তবে স্থানীয়রা এটিকে দোতলা মসজিদ হিসেবেই চিনেন।
মসজিদটির অবস্থান পুরান ঢাকার আতশখানায়। লালবাগ কেল্লার মেইন গেট থেকে গলি দিয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে মসজিদটি। এখানে আসলেই মসজিদটির নান্দনিক নির্মাণশৈলী দেখে যে কারো চোখ আটকে যেতে বাধ্য। লাল ইট আর চুনাপাথরের মিশ্রণে স্থাপনাটির রঙ অনেকটা পোড়া মাটির মতো। মাটি থেকে প্রায় ১৭ ফুট উঁচু স্থাপনাটি দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হবে স্থাপনাটি পোড়ামাটির তৈরি। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরতি খান মোহাম্মদ মৃধার এ অমর কীর্তিটি আজো জমজমাট মুসল্লিদের পদচারণায়। এ এলাকার অলিগলিতে অনেক মসজিদ থাকার পরও বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন।
মসজিদের চারপাশজুড়ে অনেক খোলা জায়গা। মুসল্লির চাপ থাকলে সেখানে চাটাই বিছিয়ে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু জুমার দিনে মূল মসজিদ ও এর চারপাশ ভরেও জায়গা হয় না অনেক মুসল্লির। তাই বাইরের প্লাটফর্মের নিচের খোলা জায়গা, অজুখানার সামনের জায়গা ভরে সামনের সড়কে দাঁড়িয়েও অনেকে নামাজ আদায় করেন বলে জানান এখানে নিয়মিত নামাজ আদায়কারী কয়েকজন মুসল্লি।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী, ১৭০৪-১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার প্রধান কাজী কাজী খান মোহাম্মদ এবাদউল্লাহর নির্দেশে খান মোহাম্মদ মৃধা এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় ১৭ ফুট উঁচু প্লাটফর্মের ওপর বানানো হয়েছিল মসজিদটি। মূল মসজিদের কাঠামো তিন গম্বুজবিশিষ্ট এবং এর চারিদিকে ছোট ছোট প্রায় বিশ-পঁচিশটি মিনারের মতো কাঠামো আছে। মসজিদের নিচের তলায় লালবাগ কেল্লার কর্মচারীদের থাকার স্থান করে দেয়া হয়েছে। ওপর তলায়ই নামাজ পড়া হয়।
মসজিদটির উত্তর-পূর্ব কোণে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে একটি অজুখানা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই অজুখানাটি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের নির্মাণ করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা দেয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, অজুখানা নির্মাণের সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। প্রতœতত্ত্ব¡ বিভাগ দীর্ঘদিন টালবাহানার পরও অজুখানা নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসী প্রায় সাত লাখ টাকা চাঁদা তুলে অজুখানাটি নির্মাণ করেছেন। অজুখানার পাশেই আছে একটি পরিত্যক্ত কুয়া। আগে এ কুয়া থেকেই মসজিদের পানি সরবরাহ করা হতো। মসজিদ আর মাদরাসা ছাড়া বাকি অংশ উন্মুক্ত। ধারণা করা হয়, এখানেই শিার্থীদের পাঠদান করা হতো। আর নিচের ঘরগুলো ছিল থাকার জায়গা।
বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর একে সংরতি প্রতœসম্পদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এর প্রাঙ্গণে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদকে সংরতি প্রতœসম্পদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। অধিদফতরের অনুমতি ব্যতিরেকে এর কোনো অংশ ধ্বংস বা তিসাধন করা যাবে না। যদি কারো দ্বারা কোনো ক্ষতি হয় তবে তার এক বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মসজিদটি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকলেও কমিটির মাধ্যমে স্থানীয়রা এটি পরিচালনা করছেন বলে জানালেন মসজিদের মোতাওয়াল্লির ছেলে মইনুদ্দিন রাসেল। মসজিদটিতে বর্তমানে মোট পাঁচজন স্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন। একজন প্রধান ইমাম, একজন সহকারী ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন এবং দু’জন খাদেম। জুমার দিনে দানবাক্সে যে টাকা ওঠে তা দিয়ে ও এর সাথে দুই মোতাওয়াল্লি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদটি পরিচালনা হয়ে আসছে বলে জানালেন কমিটির একজন সদস্য।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের আইন অমান্য করে মসজিদটির পাশে নির্মিত হয়েছে বহুতলবিশিষ্ট ভবন। মসজিদের একটা অংশ ব্যবহার করছেন লালবাগ কেল্লার প্রায় ২০ জন কর্মচারী। আগে দু’জন মালী নিয়মিত থাকলেও গত তিন মাস ধরে কোনো মালী নেই বলে জানালেন মসজিদের খাদেম। এতে বাগান পরিচর্যায় বিঘœ ঘটছে।
এ ব্যাপারে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক রাখি রায় বলেন, মসজিদের বাইরের কাজটা প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরই করে। কিন্তু ভেতরের অংশে রঙ বা কোনো আসবাবপত্র লাগাতে হলে অধিদফতরের অনুমতি সাপেে স্থানীয়রাই তা করে থাকেন। তিনি বলেন, কর্মচারী কম থাকায় নিয়মিত মালী দেয়া সম্ভব নয়। প্রতœতত্ত্ব আইন অমান্য করে যদি কেউ মসজিদের জায়গায় বা পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement