২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পাঠক-লেখকের সেতুবন্ধন ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ

এক প্রজন্ম বই পড়ে, আরেক প্রজন্ম ব্যস্ত মোবাইল ফোনে হনয়া দিগন্ত -

গ্রন্থমেলায় পাঠক-লেখকের সংযোগ সেতু হিসেবে তৈরি হয়েছে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চটি। লেখক-পাঠকের প্রাণবন্ত আলোচনার একটি প্লাটফর্ম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে। গত বছর প্রথমবার এটি সংযোজনের পর থেকেই বেশ জমে ওঠে। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে লেখকের বর্ণনায় তাদের সফলতার পেছনের গল্প শুনতে প্রতিদিন ভিড় করছেন সব শ্রেণীর পাঠক।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরে তৈরি এ মঞ্চে প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক তাদের প্রকাশিত বইয়ের বিষয়বস্তু এবং লেখক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প তুলে ধরার পাশাপাশি পাঠকের কথাও শুনছেন। এ আয়োজনকে ঘিরে লেখক ও পাঠকদের অনেকটা সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে লেখক তার পাঠকের সাথে মন খুলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। পাঠকও তার প্রিয় লেখককে প্রশ্ন করে নিজের অজানাকে জেনে নিচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত এ মঞ্চে প্রায় শতাধিক লেখক তাদের অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন।
‘লেখক বলছি’ মঞ্চের এই আয়োজনে আগের বছরের ১ মার্চ থেকে পরবর্তী বছরের অমর একুশে বইমেলা পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের লেখকরাই কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে নিয়মানুযায়ী যেদিন লেখক কথা বলবেন তার আগের দিন তার বই জমা দিতে হবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে প্রতিদিন যাদের নির্বাচন করে দেয়া হয় তারাই পরে আলোচনায় অংশ নেন। তবে এ পর্বের জন্য লেখক ও বই বাছাই করে দেন মেলা কর্তৃপক্ষ।
মঞ্চটি দেখতে দৃষ্টিনন্দন। সামনে পাঠক-দর্শকদের বসার জন্য রাখা হয়েছে চেয়ার। আলো-আঁধারী মঞ্চে নির্ধারিত কবি অথবা লেখক বসেন। তার নতুন বই নিয়ে প্রশ্ন করেন উপস্থাপক। একজন কবি বা লেখক নিজের লেখালেখি সম্পর্কে, বই সম্পর্কে কথা বলার জন্য সময় পান ২০ মিনিট। নিয়মিত এ আয়োজনে প্রতিদিন লেখকরা তাদের লেখক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প তুলে ধরছেন। গতকাল অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আসলাম সানী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান এবং আহম্মেদ শরীফ।
এদিকে গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৩৫টি। বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ৭ মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং ড. কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
প্রাবন্ধিক বলেন, সামগ্রিকভাবে এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক দর্শন, শিক্ষা ভাবনা, দ্বিতীয় বিপ্লব, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর আত্মদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নানা দিক সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আলোকে লেখক নিজস্ব ভঙ্গিতে নতুন বিশ্লেষণে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ফলে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনাদিকাল ধরে এই ভাষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল ধরনের বৈষম্য, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রণোদনা জোগাবে।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুজিবুল হক কবীর, আয়শা ঝর্না, চঞ্চল আশরাফ এবং মাজুল হাসান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মেহেদী হাসান, তিতাস রোজারিও এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। আজ ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’ এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আলম দেওয়ান, মোক্তার হোসেন, রহিমা খাতুন, শারমিন সুলতানা এবং মো: মাহাবুল ইসলাম। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), মো: হাসান মিয়া, (বাংলা ঢোল), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কি বোর্ড) এবং মো: খোকন (বাঁশি)।
আজ মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাহিদুল হক এবং জাফর ওয়াজেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সম্পদ বড়–য়া। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গ্রন্থমেলার মধ্য সময়ে গতকাল মেলায় তেমন ক্রেতা ছিল না। যারা এসেছে তারা হাঁটাহাঁটি ও আড্ডার মধ্যেই সময় ক্ষেপণ করেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন ছাড়া মেলায় বিক্রি তেমন নেই। এখন মাসের মাঝামাঝিতেও আশানুরূপ বিক্রি নেই। এদিকে মেলায় এসেছে আকবর আলি খানের বই ‘দারিদ্র্যের অর্থনীতি : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। এটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। ‘রক্তমাখা স্মৃতির সাগর’ বইটির লেখক রিজিয়া রহমান। এটি প্রকাশ করেছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের বই ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’। বইটির প্রকাশক জিনিয়াস পাবলিকেশন্স। প্রকাশনী কালো এনেছে মাসুম বিল্লাহর গল্পগ্রন্থ ‘পিঙ্গল প্রেম’। সোহেল রানা লিখেছেন ‘দ্য কিংডম অব আউটসাইডারস’। বইটির প্রকাশক মাতৃভাষা প্রকাশ। আনিসুর রহমান নয়নের ‘আত্মরক্ষায় স্বাস্থ্যরক্ষায় মার্শাল আর্ট’। বইটির প্রকাশক দেশ পাবলিকেশন্স।

 


আরো সংবাদ



premium cement