২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৫০০ বছরের পুরনো ছুটি খাঁ মসজিদ

অনন্য স্থাপত্য
-

মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ছুটি খাঁ মসজিদ। গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা লস্কর পরাগল খাঁ এবং তার ছেলে ছুটি খাঁর আমলে তৈরি হয় এটি। প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্থান পেয়েছে মসজিদটি। ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরনো মহাসড়কের পশ্চিম পাশে স্থানীয় ছুটি খাঁ দীঘির পূর্ব পাড়ে মসজিদটির অবস্থান। উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজার থেকে মাত্র ৫০০ গজ উত্তরে।
গবেষক আহমদ মমতাজের ‘মিরসরাইর ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন লস্কর পরাগল খাঁ। পরে তার ছেলে ছুটি খাঁ। পরাগল খাঁর পিতা রাস্তি খাঁও গৌড়ের শাসনকর্তা রুকুনুদ্দীন বরবাক শাহের শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন। পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁর শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসনকেন্দ্র ছিল পরাগলপুর। এ সময় এখানে বেশ কিছু দীঘি ও কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জানা গেছে, ছুটি খাঁ মসজিদের মূল নকশা অনেক দিন আগে ভেঙে পড়েছে, যা পরে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়। তবে মূল মসজিদের বেশ কিছু ছোট-বড় পাথর ও শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়। পুরনো মসজিদের কিছু নিদর্শন (ধ্বংসাবশেষ) প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর কর্তৃক সংরক্ষণ করা হয়েছে। মসজিদের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথর ও শিলালিপি দেখে বিভিন্ন সময় প্রতœতত্ত্ববিদরা ধারণা করেছেন, পঞ্চদশ শতাব্দীতে এ মসজিদ তৈরি করতে ভারতের রাজস্থান বা অন্যান্য প্রদেশ থেকে পাথর ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী আনা হয়েছে।
দেখা গেছে, কৃষ্ণবর্ণের নানা নকশা ও আকৃতির পাথরগুলো মসজিদ প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখনো। মসজিদের ভেতরে একাধিক শিলালিপি রয়েছে। যার মধ্যে একটি শিলালিপিতে পবিত্র কুরআন শরিফের আয়াতুল কুরসি লেখা আছে। ছুটি খাঁ মসজিদলিপি খোদিত পাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত ছিল। সেগুলো এখনো পড়ে আছে বর্তমান মসজিদের আঙিনায়। এসব লিপি তোগরা হরফে কুরআনের নানা আয়াত ও আরবি দোয়া। তবে ঐতিহাসিক মূল্যবিশিষ্ট কোনো লিপি পাওয়া যায়নি এখানে।
ছুটি খাঁ কর্তৃক এ মসজিদ স্থাপন করা হয় ১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে। তবে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা পরাগল খাঁ নাকি ছুটি খাঁ, এর কোনো লিখিত সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। নির্মাতা যেই হোন, মসজিদটি অদ্যাবধি ৫০০ বছর ধরে এ অঞ্চলের শাসক, ত্রিপুরা ও আরাকানি অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক ছুটি খাঁর স্মৃতি হিসেবে টিকে আছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি শুক্রবার ও ঈদের সময় বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ও মসজিদ প্রাঙ্গণে। শত শত মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন।
মসজিদ কমিটির কর্মকর্তারা জানান, ছুটি খাঁ মসজিদ দেশের একটি প্রাচীনতম স্থাপত্য। এটি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় সাধারণ নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে মেরামতের কারণে এটির মূল নকশা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনো সময় আছে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার। জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকসুদ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি দেশের প্রতœতত্ত্ব ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত পুরোপুরি বিনষ্ট হওয়ার পূর্বে এটিকে সংরক্ষণ করা।’

 


আরো সংবাদ



premium cement