২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গণতন্ত্র থাকলে রামপাল ও রূপপুর প্রকল্প বহু আগেই বাতিল হতো : আনু মুহাম্মদ

-

দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকলে রামপালে কয়লাভিত্তিক ও রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরকার বহু আগেই সরে আসত বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিএমএ মিলনায়তনে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদু্যুৎবন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
‘সুন্দরবন ও উপকূল বিনাশী’ কয়লা বিদু্যুৎ এবং ‘দেশবিনাশী’ পারমাণবিক প্রকল্প বাতিল, গ্যাস রফতানিমুখী পিএসসি ২০১৯ বাতিল এবং গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন দাবি সামনে রেখে হচ্ছে এবারের সম্মেলন। বিডি নিউজ
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, দেশে গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে জাতীয় কমিটির আন্দোলন এত দীর্ঘ হতো না। কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের মতো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তত্ত্ব ও বিশেষজ্ঞ মতও গুরুত্ব পায়।
সেগুলো গুরুত্ব পেলে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প বহু আগেই বাতিল হতো। জনবহুল দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হতো। দেশের উন্নয়নের জোয়ার বিষাক্ত জোয়ারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমাদের পানি বিষাক্ত, নদী বিষাক্ত, বাতাসে শ্বাস নেয়ার উপায় নেই। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশে সর্বনিকৃষ্ট বায়ুদূষণ।
‘নদীদূষণ, পানিদূষণে বাংলাদেশ রেকর্ড করছে। সন্ত্রাসে রেকর্ড করছে। গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নে রেকর্ড করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে রেকর্ড করছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ ঝুঁকির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অথচ সরকার নদী, বন, মানুষবিনাশী সব প্রকল্প নিয়ে দেশকে আরও বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ‘কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত পুরো উপকূলজুড়ে প্রায় ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়োজন করা হচ্ছে।’
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য ফের চক্রান্ত শুরু হয়েছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারের লক্ষ্য মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নয়, দেশী-বিদেশী কোম্পানিকে ব্যবসা দেয়া। আর তাদের আধিপত্যের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। আর দেশের ভেতরে বৃহত্তর ব্যবসায়ীগোষ্ঠী আছে তাদের লুণ্ঠন, দুর্নীতি-আগ্রাসন ও জমি দখল সেগুলোকে নিশ্চিত করা।
সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। আমরা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। এই ধ্বংস প্রকৃতি দাঁড় করায়নি। মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। সেই মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা করে দেয়ার জন্য।
এত বড় ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশটিকে আজকে আবার দেখছি ভয়ঙ্করভাবে একটা দুবর্ৃৃত্তায়নের চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ নাম দিয়ে যুদ্ধ করলাম। আমরা শুধু একটা ভূখণ্ড দখলের জন্য যুদ্ধ করিনি।
তিনি বলেন, সরকার জনবান্ধব ও নারীবান্ধব সরকার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। তারা এখন শুধু ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মূল যে লড়াই তা হবে সামাজিক বিপ্লবের লড়াই, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। পুঁজিবাদকে বিদায় করতে না পারলে ভবিষ্যৎ নেই। সামাজিক বিপ্লবের জন্য আমাদের জ্ঞানের দরকার হবে। পৃথিবীটা বদলাবার জন্য দরকার জ্ঞান। এই জাতীয় কমিটি সেই দায়িত্ব অনেকটা পালন করছে।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের সভাপতিত্বে ও সিপিবির নেতা লুনা নুরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
মহাসমাবেশ ৩ এপ্রিল
এদিকে প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষ রক্ষায় সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় মহাসমাবেশসহ বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন মিলনায়তনে জাতীয় কনভেনশন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে দেশব্যাপী মানববন্ধন, জেলা-উপজেলায় সমাবেশ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন। মার্চ মাসে ফুলবাড়ী থেকে দিনাজপুর পদযাত্রা এবং বিভাগীয় ও উপকূলীয় সমাবেশ। এ ছাড়াও সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন লংমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ। পরিচালনা করেন যৌথভাবে রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং লুনা নূর।
কনভেনশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেনÑ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, খালেকুজ্জামান, টিপু বিশ্বাস, সাইফুল হক, মোশারফ হোসেন নান্নু, জোনায়েদ সাকি, ইকবাল কবির জাহিদ, মোশরেফা মিশু প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement