১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৭ মাসের জন্য সুদহার কমল ১ শতাংশ

খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন রফতানিকারকরা

ইডিএফ তহবিল সমন্বয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; উভয় সঙ্কটে ব্যাংকিং খাত
-

খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন রফতানিকারকরা। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অনেকেই পরিশোধ করতে পারছেন না। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ব্যবহারকারীরা। ইডিএফ তহবিলের অর্থও অনেকেই ফেরত দিতে পারছেন না। যথাসময়ে ফেরত দিতে না পারায় বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট থেকে সমপরিমাণ অর্থ সমন্বয় করে নিচ্ছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে উভয় সঙ্কটে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। একদিকে রফতানিকারকরা ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, এ জন্য ব্যাংকের আয় থেকে অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদে আসলে পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাংকের নিট আয় কমে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে তৈরী পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রফতানিকারকদের সুবিধার্থে এ তহবিল থেকে ঋণের সুদহার ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে অনেকেই সময়মতো পণ্য ডেলিভারি করতে পারছেন না। অনেকের রফতানির অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অনেকেই সময়মতো কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না। কেউ কেউ শ্রমিক ছাটাই করছেন। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের অর্থ তারা কিভাবে ফেরত দেবেন।
জানা গেছে, অনেক সময় রফতানিকারক পুঁজির অভাবে রফতানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে না। কাঁচামালের অভাবে পণ্য উৎপাদন করতে না পারায় যথাসময়ে পণ্যও সরবরাহ করা যায় না। এতে প্রভাব পড়ে সামগ্রিক রফতানি আয়ের ওপর। রফতানি আয় বাড়াতে ব্যবসায়ীদের পুঁজির যোগান দেয়ার জন্য ১৯৮৯ সালে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তহবিলের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ডলার। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে পর্যায়ক্রমে তা ৩৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এ তহবিল বরাদ্দ দেয়া হয়। এতদিন রফতানিকারকের সর্বোচ্চ সুদ লাইবর রেটের সাথে আড়াই শতাংশ গুনতে হতো। আড়াই শতাংশের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পেতো এক শতাংশের সাথে লাইবর রেট (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক রেট) ও বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে পায় দেড় শতাংশ। গতকাল তা পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পাবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের সাথে লাইবর রেট। আর ব্যাংকগুলো রফতানিকারকদের কাছ থেকে পাবে দেড় শতাংশের সাথে লাইবর রেট।
রফতানিকারক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আবার ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ ফেরত দিয়ে থাকে। একজন রফতানিকারক সর্বোচ্চ আড়াই কোটি ডলার ঋণসুবিধা পান এ তহবিল থেকে। আর তারা এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন বা ৬ মাসের জন্য এ ঋণসুবিধা পান। কেউ ৬ মাসের মধ্যে ঋণ ফেরত দিতে না পারলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো ৯০ দিন বা তিন মাস বাড়ানো হয়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২৭০ দিনের জন্য এ ঋণসুবিধা পান রফতানিকারকরা।
ইডিএফ তহবিলের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ইডিএফ থেকে অর্থ নেবে। আবার গ্রাহক ব্যাংককে পরিশোধ করলে ব্যাংক তাদের তাদের সার্ভিস চার্জ রেখে বাকি অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক অর্থ ফেরত না দিলে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সাথে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট (এফসি) থেকে সমন্বয় করে নেবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে অনেক রফতানিকারকই রফতানি উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ফেরত দিতে পারছেন না। এতে তারা দুই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। প্রথমত, ইডিএফ ঋণ ২৭০ দিনে পরিশোধ করতে না পারলেই তা খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। আর খেলাপি হলেই ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট থেকে লাইবরের সাথে এক শতাংশ সুদসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমন্বয় করে নিচ্ছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সমন্বয় করায় তাদের বৈদেশিক মুদ্রা আটকে যাচ্ছে। এর ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইডিএফ তহবিল ব্যবহারের সুদহার এক শতাংশ কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এর ফলে চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা অনেকটা স্বস্তি পাবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement