২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলার মূল হোতাসহ ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার

রাজশাহী পলিটেকনিক
রাজশাহী পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার মামলায় আটক ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মী : নয়া দিগন্ত -

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ট্রেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার মূল হোতাসহ ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও চন্দ্রিমা থানা পুলিশ গত সোমবার রাতে নগরীর বেলপুকুর ও সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, ঘটনার মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র কামাল হোসেন সৌরভ (২৪)। সৌরভ নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার চঁচকোড় বাজার এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে। অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ফুটেজ মামলার দুই নম্বর আসামি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ছাত্র মুরাদ হোসেন (১৯)। মুরাদ রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে। মামলার তিন নম্বর আসামি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র সাব্বির আহম্মেদ শান্ত (২২)। সাব্বির পাবনার সদর থানার দাপুনিয়া এলাকার রইচ শেখের ছেলে। মামলার চার নম্বর আসামি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রোমেডিক্যাল বিভাগের ছাত্র সালমান ওরফে টনি (২২)। টনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ বাজার এলাকার শামিমুল ইসলামের ছেলে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে অপর এজাহারনামীয় আসামি রায়হানুল ইসলাম হাসিবকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। হাসিব মহানগরীর ভদ্রা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, এই নিয়ে এখন পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় মোট ১৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হলো। এর মধ্যে এজাহারে নাম উল্লেখ করা আট আসামির মধ্যে সদ্য গ্রেফতার পাঁচজন রয়েছে। মামলার এজাহারে আটজনের নাম উল্লেখ করলেও আরো ৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এর আগে আরো ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার পর থেকে মামলার মূল আসামি সৌরভসহ অন্যরা পলাতক ছিল। এর মধ্যে সোমবার গভীর রাতে সৌরভসহ মূল পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হলো। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে বাকি আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
ওই মামলায় গ্রেফতারকৃতদের দুপুরের দিকে আদালতে পাঠানো হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করার কথা রয়েছে।
এর আগে গত ২ নভেম্বর রাতে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৫০ অজ্ঞাতপরিচয় শিক্ষার্থীর নামে মামলা করেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ওই দিন দুপুরে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীরা। ঘটনার পর মূল হোতা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। একই সাথে শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্র।
মিডটার্মে ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা এই সৌরভকেই ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে ২ নভেম্বর সকালে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের কার্যালয়ে গিয়ে চাপ দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এরপর পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। তবে মূল হোতারা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে মূল হোতা সৌরভসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এ নিয়ে ছাত্রলীগের মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement