২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল প্রকৃতির মাঝে আলোর বাতিঘর

-

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের অপরূপ দৃষ্টি সীমায় ‘জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল’। দেশের প্রথম ও একমাত্র বোর্ডিং স্কুল এটি। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি যেন প্রকৃতির মাঝে আলোর বাতিঘর। স্কুলটির সামনে তাকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় যেন আকাশকে ঠেকিয়ে রেখেছে। পাহাড়ের দিকে তাকালে চোখে পড়ে নেমে আসা ঝরণা বা জলপ্রপাত। স্কুলটির পেছনে তাকালে দিগন্ত বিস্তৃত খালি প্রান্তর। যত দূর চোখ যায়, যেন ছোট ছোট বিল। এক অপরূপ দৃশ্য শিক্ষার্থীর একাকিত্বকে যেন নিমিশেই মুছে দেয়। দৃষ্টিনন্দন এমন প্রকৃতির মাঝে মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রতিবেশী ভারতে মেঘালয়, শিলিগুড়ি ও অন্যান্য রাজ্যে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্পন্ন আদর্শ এবং আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যাপীঠ হচ্ছে জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল। সিলেটের প্রকৃতির কন্যা জাফলং যাওয়ার পথে দেখা যাবে টিলাঢ টিলায় কঠোর নিরাপত্তার মাঝে স্কুলটির নানা ভবন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য শতভাগ আবাসিক সুবিধা নিয়ে দেড় শ’ একর এলাকাজুড়ে প্রকৃতিকে অবিকল রেখে গড়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন। লাগোয়া টিলায় টিলায় রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য ডরমেটরি আর হোস্টেল। এখানেই সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করেন স্কুলটির অধ্যক্ষ ভারতীয় শিক্ষক বিরাজ কিশোর ভরদ্বাজ। এ ভবনগুলোর একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হয়েছে কংক্রিটে ঢালাই করা রাস্তায়। রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট নানা ফুলের বাগান তৈরি করে এক স্বর্গীয় পরিবেশের আমেজ দেয়া হয়েছে।
জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল পরিচালিত হচ্ছে সম্পূর্ণ দেশী শিক্ষাক্রম ও জাতীয় কারিকুলাম অনুসরণ করে। নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য ইংরেজি ভার্সন এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা-ইংরেজি দু’টো ভার্সনই রয়েছে। আগামীতে নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরেও বাংলা ভার্সন চালু করবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দানে সক্ষম সৎ দূরদর্শী এবং নৈতিক-মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরিই একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছে উদ্যোক্তাদের সবাই। এটি নিশ্চিত করতে মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল সহকারী বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখনই রয়েছেন এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ দেশী-বিদেশী শিক্ষক-শিক্ষিকা। যেটি যেমন তেমনই রেখে টিলা আর সবুজের সমারোহে গড়ে ওঠা চারটি চারতলা ভবনে ৬৫টি ক্লাসরুম, চারটি অত্যাধুনিক ল্যাব, কম্পিউটার সেন্টার, দেশী-বিদেশী সহায়ক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপযোগী সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। এরপরও রয়েছে ছয়টি খেলার মাঠ, তিনটি হোস্টেল-ডরমেটরি ব্লক, ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা, স্টাফ কোয়ার্টার, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। আবার স্কুল ক্যাম্পাসেই টিলার ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে চাবাগান আর ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মাঠ। যদিও ক্রিকেট মাঠটি এখনো পূর্ণতা পায়নি।
২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারী ভারতের খ্যাতিমান শিক্ষক বিরাজ কিশোর ভরদ্বাজ নয়া দিগন্তকে জানান, প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছে পড়তে। এরা সবাই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। দার্জিলিং বেশি যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের শিক্ষার্থীদের দেশীয় পরিবেশে রেখেই যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। অধ্যক্ষ ভরদ্বাজ বলেন, এ দেশের কোনো অভিভাবক একবার স্কুলটির সাথে পরিচিত হলে, তিনি তার সন্তান নিয়ে বিদেশে যেতে চাইবেন না। সন্তানকে দেশে রেখেই ন্যাশনাল কারিকুলামে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।
অধ্যক্ষ জানান, স্কুলটি শুধুই উচ্চবিত্তের জন্য নয়। এখানে পড়ালেখার খরচটাও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। টিউশন ফি, স্পেশাল ক্লাস, হোস্টেল চার্জ ও লন্ড্রিসহ সব খরচ মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীর মাসে খরচ মাত্র ২০ হাজার টাকা। সেশন ফি ৬০ হাজার টাকা। কেউ চাইলে পুরো টাকা একাধিক কিস্তিতেও দিতে পারবেন।
স্কুলটির প্রধান নির্বাহী ও অধ্যক্ষ বিরাজ কিশোর ভরদ্বাজ জানান, এখানে ক্যাডেট কলেজের মতোই নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় শিক্ষার্থীদের। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও নাশতা পায় শিক্ষার্থীরা। সকালে ঘুম থেকে উঠে জগিং করতে হয়। ক্লাসের পাশাপাশি স্পেশাল ক্লাস, কোচিং ও সাংস্কৃতিক চর্চার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সব সময় শিক্ষকদের সাহায্য পায় শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী স্কুলের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক এমরাজ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রথাগত প্রাইভেট-কোচিং ধারণার বাইরে গিয়ে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি সহশিক্ষার দিকে নজর দেয়া হয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুবিধা। আইসিটি ল্যাব ও সমৃদ্ধ পাঠাগার নিয়মিত ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক। প্রাকৃতিক পরিবেশ, খেলাধুলা ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের দিকে লক্ষ রাখা হয়।
শুরু থেকেই কর্মরত স্ত্রীসহ এখানেই বসবাসকারী প্রভাষক এমরাজ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে আরো জানান, তার স্ত্রী এখানেই প্রশাসনিক বিভাগে কর্মরত। তিনি জানান, ছাত্রদের ডরমেটরি পদ্মা, মেঘনা, সুরমা ও কুশিয়ারা চার ভাগে বিভক্ত। এখানে সবার স্বতন্ত্র খাট, টেবিল, আসবাবপত্র রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার অভিভাবকদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে শিক্ষার্থীদের সুযোগ রয়েছে। আর প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ছাত্রদের সাথে অভিভাবকদের সাক্ষাতের সুযোগ রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসেই ছাত্রদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
এখনই প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিয়ে গত এক বছর আগে চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১২০ জন আবাসিক ছাত্র ও ২১ জন শিক্ষক রয়েছেন। রয়েছেন প্রিন্সিপালসহ তিনজন ভারতীয় শিক্ষক। শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হাফিজ মজুমদার ট্রাস্টের রিসোর্স সেন্টারে শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
স্কুলটির মূল উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন সিলেট-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার। অন্য উদ্যোক্তারা হচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, ওপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ আর সিনহা, নিট এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিন চৌধুরী, শারমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন, মাহিন গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement