২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঢিমেতালে ভূমি অধিগ্রহণ আরেক দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
-

ঢিমেতালে চলছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ ও দখল কার্যক্রম। দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভৌত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। এখন দেড় বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও প্রকল্প পরিচালক বলছেন, স্থানীয় জনগণের বাধা, আন্দোলন ও মামলা করার হুমকির কারণেই জমি অধিগ্রহণ সঠিকভাবে করা যায়নি। নির্মাণকাজও বিলম্বিত হচ্ছে।
নতুন প্রস্তাবনা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। যার মূল ব্যয় ছিল ৮৬৯ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন হলো ৮২৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নকারী সংস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি বর্ধিত মেয়াদে শেষ করার কথা। কিন্তু সেটাও হয়নি। এখন আবার আরো দেড় বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বাস্তবায়ন কমিটির তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পের জন্য ৯১৫.৭৪ একর জমির মধ্যে ৩০৯.৬৭ একর জমির দখল পাওয়া গেছে। ওই ভূমির উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ ও ভূমি সুরক্ষা কাজ চলমান আছে। গত ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ৬০৬.০৭ একর জমির ক্ষতিপূরণের মূল্য বাবদ ১১৩ কোটি ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৪.৫৭ টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৬৪ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭১ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৩ টাকা জেলা প্রশাসকের অনুকূলে চেক পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গত ২৩ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লিমিটেডের সাথে ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল ৩১৬ কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ এক বছর ছিল। উন্নয়নতব্য ভূমির পরিমাণ ৬৩৪ একর।
প্রকল্প পরিচালকের তথ্যানুযায়ী, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় চুক্তিতে বর্ণিত মেয়াদকালে মাত্র ২০৯.৫৪ একর জমি উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ মে চুক্তিটি সমাপ্ত হয়। যার কার্যমূল্য ছিল ১০৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। বাকি ৪২৪.৪৮ একর ভূমির উন্নয়নের জন্য ডিজেল প্লান্ট লিমিটেডের সাথে ২৪৮ কোটি ৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকার চুক্তি হয় গত ১০ জুন। ওই চুক্তির আওতায় গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৪৬.২৬ শতাংশ।
সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ৬০৬.৭ একর ভূমির দখল পাওয়ার পর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ করে বর্ণিত পূর্ত নির্মাণকাজ আগামী মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরে শুরু করা সম্ভব হবে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, ভূমি সুরক্ষা, আনুষঙ্গিক পূর্ত কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। যা মূল প্রকল্প অর্থাৎ পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ পাওয়া সত্ত্বেও আবাসন-২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকরা তাদের স্থাপনা অপসারণ করছেন না। ফলে পুনর্বাসনের জন্য বাড়ি নির্মাণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। বাড়ির মালিকরা আগে তাদের বাড়ি নির্মাণ ও পরে তাদের অপসারণের দাবি করছেন।
বিদু্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন বাড়িঘর বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসক প্রক্কলন প্রস্তুত করায় স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না দেয় সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে বলা হযেছে। ভূমি মালিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আরপিসিএল বোর্ড ও বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করে প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement