২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবিতে ছাত্রদলের ওপর আবারো ছাত্রলীগের হামলা

২ ছাত্রীসহ আহত ৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা :নয়া দিগন্ত -

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর আবারো হামলা করেছে ছাত্রলীগ। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ছাত্রদলের দুই নারী নেত্রীকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার ঘটনা স্বীকার করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অন্য দিকে হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা ঘোষণা দেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যতই তারা বাধার সম্মুখীন হন, তারা পিছপা হবেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক আইডি থেকে ছড়ানো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন করে তারা। এ সময় তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুন এবং ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আল সনেট মাহমুদ।
অন্য দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ফেসবুক হ্যাক হওয়ায় তা থেকে বিভিন্ন রকম অপতথ্য প্রচার হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে বের হয়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে রওনা দেয় তারা। কিন্তু সোপার্জিত স্বাধীনতার দিকে যেতেই ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এ সময় তারা ডিবি পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান। পরক্ষণেই তাদের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল মধুর ক্যান্টিনে যান। সেখানে তারা টেবিল চেয়ার না পেয়ে প্রতিবাদস্বরূপ মাটিতে বসেন।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা করে। আতর্কিত হামলায় ছাত্রদলের নেতারা মধুর ক্যান্টিন ত্যাগ করেন। এ সময় তাদের ৯ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মামুন খান, জিয়া হলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান শাওন, একই হলের তারেক হাসান মামুন, সূর্যসেন হলের সদস্য মাহফুজুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সহ মানবাধিকার সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম রুম্মন, সাবেক সহ নাট্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মাজেদ ও ওবাইদুল্লাহ নাঈম। এদের মধ্যে মামুন খান গুরুতর আহত হন। এ সময় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত কমনরুম ও ক্যাফেটোরিয়া বিষয়ক সম্পাদক কানেতা-ইয়া-লামলাম এবং শামসুন্নাহার হলের সহসভাপতি প্রার্থী মানসুরা আলমকে লাঞ্ছিত করা হয়।
হামলার প্রতিবাদে বিকেলে ঢাবির সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদলের ঢাবি শাখা। এ সময় সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের বর্বর হামলায় আমাদের ৯ জন আহত হয়েছেন। তারা আমাদের দুই নেত্রীকে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও লাঞ্ছিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন ঢাবি মুক্ত ও গণতন্ত্রচর্চার সর্বোচ্চ স্থান। এখানে ছাত্রলীগ হামলা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এর আগে যে হামলা হয়েছে, তার বিচার দাবিতে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন কোনো বিচার করেনি। তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এ জন্য এমন হামলা আবার হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সবসময় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য কথা বলছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও আমরা এ দাবি জানাচ্ছি। আমরা যখনই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। তারা প্রতিটি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের আঁতুরঘর বানিয়েছে।
ক্যাম্পাসে এসে ডিবি পুলিশের গ্রেফতার করার চেষ্টার বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, আমরা এখানে সকালে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে বের হলেই ডিবির কয়েকটি টিম আমাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছে। আমাদের প্রশ্ন হলোÑ ঢাবি প্রশাসন ছাড়া কেন তারা আমাদের ঢাবি ছাত্রদের গ্রেফতার করবে? আমরা এখনো ঢাবির ছাত্র।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন মধুর ক্যান্টিনে যায় তখন আমাদের জন্য কোনো চেয়ার-টেবিল থাকে না। আমরা প্রতিবাদস্বরূপ ফোরে বসি। আজকেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে চেয়ার-টেবিল না পেয়ে ফোরে বসেছি। সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা আগামী দিনে সাধারণ ছাত্রদের জন্য কাজ করে যাবো। সেখানে যত বাধাবিঘœ আসুক, আমাদের কাজ আমরা করেই যাবো। তার অভিযোগ, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে যারা হত্যা করেছিল তারাই আমাদের ওপর হামলা করেছে।
হামলার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিএনপি-ছাত্রদলের নেতারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। তাদের পূর্বসূরিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দেবো না। এ সময় তিনি বিএনপি-জামায়াত এবং এদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-শিবিরকে স্থায়ী নিষিদ্ধের দাবি জানান। হামলার বিষয়ে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এক ছাত্র আরেক ছাত্রকে মারতে পারে না। এটি কাম্য নয়।
বেলা ১১টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া এবং তা থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। এ সময় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, আমি ও আমার সভাপতির বর্তমানে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ‘৭৫-এর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার হচ্ছে। যা দল ছাত্রদল সমর্থন করে না। ডাকসুর জিএস তার যে নৈতিক স্খলন সেটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যই এটি নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদেরকে বিতর্কিত করার জন্যই আমাদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলেই কেউ এটি প্রচার করছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বায়ো ভাইরাল হয়। যেখানে লেখা ছিল ‘৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। এ গুজবের প্রতিবাদেই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এ সময় ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ছাত্রদল প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমদের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি। আদর্শ অনুযায়ী আমরা ভিন্নমতকে লালন করি। তিনি বলেন, ‘৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ লেখাটি ফেইক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হচ্ছে। যা ১৯৭৫-এর সেই মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডকে আমার দল কখনোই সমর্থন করে না। আমাদের ক্যাম্পাসে যে সহাবস্থান সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই কেউ আমাদের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেই এটি প্রচার করছে। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট আছে। যেটির বিরুদ্ধে তারাও জিডি করেছে আমরাও জিডি করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement