আবরার হত্যার ঘটনায় কূটনীতিকদের মন্তব্য অনভিপ্রেত : তথ্যমন্ত্রী

আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর উদ্বেগের কড়া সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হয়, গত মাসেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যখন স্কুলে গুলিবর্ষণে ছাত্রছাত্রীরা হতাহত হয়, পাকিস্তানে শিয়া মসজিদ পুড়িয়ে দেয়া হয়, তখন কি তারা সবসময় উদ্বেগ প্রকাশ করেন? যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদেরকে বলব, কূটনৈতিক শিষ্টাচার যাতে রক্ষিত হয়, সেভাবে যেন আপনারা বক্তব্য রাখেন। এভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বক্তব্য রাখা সমীচীন নয়। বুয়েটে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের মন্তব্য অনভিপ্রেত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর শত শত ছাত্রছাত্রী হতাহত হওয়ার ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি বিদেশী মিশন আবরার হত্যাকাণ্ডের পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ আমাদের সব উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রকে তাদের ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েই বলতে চাই, এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য অনভিপ্রেত। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার বক্তব্যে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং সমাজের বিবেক তৈরির অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে বিবিসি বাংলা অনলাইনসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এবং চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অশোধিত পেট্রোলিয়াম পরিশোধনের সময় উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত এলপিজি বা তরল গ্যাস আমাদের ব্যবহারের পর উদ্বৃত্ত অংশ ভারতে রফতানি করব, আর তারা লিখেছিল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির কল্পিত সংবাদ। আবার ভারত আমাদের নৌবাহিনীকে গ্রান্ট হিসেবে ২০টি রাডার দিচ্ছে, আর কিছু সংবাদমাধ্যম লিখেছিল, ভারত রাডার বসিয়ে চীনের ওপর নজরদারি করবে। এগুলো অসত্য সংবাদ, যা হলুদ সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি দলমত নির্বিশেষে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, যা অতীতে অন্য কেউ নেয়নি। দাবি তোলার আগেই বুয়েটের ন্যক্কারজনক ঘটনায় সন্দেহভাজন সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তল্লাশি চালিয়ে অপরাধের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১১ বছরের সরকারে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এই আবর্জনা পরিষ্কার করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ঠিক এ অবস্থাতেই বিএনপির কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে, যা সফল হবে না। বিএনপির উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, বুয়েটে সনি হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে বিএনপি কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিল? না, নেয়নি। একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে এমনটি দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কয়েকজন নেতা কয়েক দিন ধরে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের কারো কারো বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বদ্ধ উন্মাদ। অতীতে একটু ফিরে তাকান, তার পর নিজের কাছে প্রশ্ন রাখেন। এরপর দয়া করে কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক মাহমুদুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, ডিবিসি টিভির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফোরামের মহাসচিব শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।