২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাঁচপুর রণক্ষেত্র

শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৩০; লাঠিচার্জ টিয়ার শেল রাবার বুলেট নিক্ষেপ; রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ; ২ ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ : নয়া দিগন্ত -

নিয়মিত বেতন, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টাকালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে শ্রমিকদের নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলের জবাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে ১০ পুলিশসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিককে ভর্তিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। একই সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ জোন-৪ এর ইনচার্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত এ শাহীন জানান, সকালে শ্রমিকেরা তাদের দাবি নিয়ে বিক্ষোভসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পাল্টা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় ওপেক্স গ্রুপের সিনহা গার্মেন্টের শ্রমিকেরা প্রতিদিনের মতো সকালে গার্মেন্টের ভেতর প্রবেশ করে কাজে যোগদান না করে কারখানা এলাকায় জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, ছুটিকালীন ভাতা প্রদান, প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে মাসিক বেতন পরিশোধ ও ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় শ্রমিকেরা লাঠিসোটা নিয়ে কারখানার প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা গার্মেন্টের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। অবরোধ করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে কমপক্ষে ২০ শ্রমিক আহত হয়। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অর্ধশত টিয়ার শেল ও ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে বলে জানা গেছে।
শ্রমিকেরা জানায়, সিনহা গার্মেন্টে অনেক মহিলা শ্রমিক কাজ করে। মহিলা শ্রমিকদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, ছুটিকালীন ভাতা প্রদান, মাসিক বেতন প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে পরিশোধ ও ভাতা বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিচ্ছে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি দাবি করায় অনেক মহিলা শ্রমিককে কারখানা থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাদের কাজ বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এর আগেও গত শনিবার সকালে শ্রমিকেরা একই দাবিতে বিক্ষোভ করে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে কারখানা ছুটি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে কর্তৃপক্ষ।
সুইং অপারেটর আকলিমা আক্তার আঁখি জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকেরা দাবি করে আসছে। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি করায় অনেক শ্রমিককে কারখানা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শ্রমিক আসাদুর রহমান জানান, গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন পরিশোধ করে না। তাদের মনগড়া মতো বেতন পরিশোধ করে। আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের বেতন, বাসা ভাড়া ও দোকান বাকি পড়ে যায়। এতে আমাদের আর বাকি দিতে চায় না দোকানদারেরা।
সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, কাঁচপুরের সিনহা গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও তার নেতৃত্বে সোনারগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের মহাসড়কে অবস্থান নিতে বাধা দেয়ায় শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
শিল্প পুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদ জানান, গতকাল সকালে শ্রমিকেরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে প্রায় ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।


আরো সংবাদ



premium cement