২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে নাকচ শিক্ষকদের আন্দোলনের হুমকি

-

সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় সরাসরি নাকচ করে তা ফেরত পাঠিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সারা দেশের সহকারী শিক্ষকরা। গত কয়েক দিন সহকারী শিক্ষকদের ফেসবুক গ্রুপে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। আবুল কাশেমের নেতৃত্বাধীন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি আগামী শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন সভাপতি নিজেই। তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন। কর্মসূচিতে কী থাকবে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বেতনবৈষম্য দূর করা না হলে প্রয়োজনে ২০০৬ ও ২০১৩ সালের মতো লাগাতার ক্লাস বর্জন, কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন শিক্ষকরা। এর আগে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে ধরন দেখেই পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি নির্ধারিত হবে।
অপর দিকে, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোট শরিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ শিক্ষক নেতৃবৃন্দের বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। এ বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জোটের একাধিক নেতা। সহকারী শিক্ষক নেতারা জানান, দীর্ঘ আন্দোলন এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা ছিল সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেয়া হবে। সেটিকেও উপেক্ষা করে মন্ত্রণালয় ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেহেতু সেটিও নাকচ হলো সে ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষকদের বসে থাকার আর সময় নেই। শিক্ষক নেতারা বলেন, ১১তম গ্রেডের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে মহাজোট।
এ দিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বীয় দফতরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন সহকারী শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসনের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত আসার কথা স্বীকার করে নয়া দিগন্তকে বলেন, সহকারী শিক্ষকদের বেতনবৈষম্যের বিষয়ে সরকার আন্তরিক ও সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই অর্থমন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কেন ফেরত পাঠানো হয়েছে, তা এখনো আমি দেখিনি। কারণ ফাইলটি এখনো আমার দফতরে আসেনি। এ ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে তিনি জানান, ‘আজই বুধবার আমি বিষয়টি নিয়ে অর্থ সচিবের সাথে কথা বলেছি। তিনি (অর্থ সচিব) রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার পর পাঠানো প্রস্তাব নিয়েই কথা হবে। অর্থ সচিবও এ ব্যপারে সম্মতি দিয়েছেন।’ প্রাথমিকের সচিব আকরাম আল হোসেন আরো বলেন, যোগ্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতেই বেতনবৈষম্য দূর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করি বৈঠকে বসলেই সব অস্পষ্টতা দূর করা যাবে।
গত ৩১ জুলাই ১৯ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন স্বাক্ষরিত বেতনবৈষম্যদূরীকরণ প্রস্তাবনায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ গ্রেড অর্থাৎ ১৬০০০-৩৮৬৪০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের ১২ গ্রেড অর্থাৎ ১১৩০০-২৭৩০০ টাকা সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবনার বেতনবৈষম্য নিরসনে ১১ দফা যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ¯œাতক। নিয়োগের পর ৯ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাসের বাধ্যতামূলক ডিপ-ইন-এড প্রশিক্ষণ কোর্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় প্রণীত এবং তাদের (ইনস্টিটিউট) কর্তৃক সনদ দেয়া হয়। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৮ অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রস্তাবনাটি অনুমোদিত হলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণবিহীন বলে বিভাজনও থাকবে না। সব শিক্ষককে একই মান দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement