২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মন্ত্রিসভায় আজ উঠছে প্রাথমিকের স্কুল ফিডিং কর্মসূচির নীতিমালা

-

দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০২০) থেকে চালু হতে পারে। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে আজ মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। এটিকে ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’ বলে প্রাথমিকভাবে অভিহিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ বা ‘মিড ডে মিল’-র সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে ‘জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি’। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা এবং সব শিশুকে শিক্ষার আওতায় এনে তাদের স্থায়িত্ব করা। কারণ এখন প্রায় শতভাগ ভর্তি হলেও প্রাথমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই অনেকেই ঝরে পড়ছে। প্রাথমিকের আগেই ঝরে পড়া রোধ করতেই স্কুলে ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ বা ‘মিড ডে মিল’ কর্মসূচি চালু করতে চায়। ঝরে পড়ার হার শহরে প্রাথমিকের চাইতে দরিদ্রপ্রবণ এলাকায় বেশি। মন্ত্রণালয় বলছে, প্রাথমিকের সব শিশুর জন্য স্কুল মিল চালু করতে বছরে লাগবে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এ টাকার সংস্থান রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (পিইডিপি-৪) এ। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে টাকা কোনো সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে এতে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন গতকাল নিজ দফতরে নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে দেশের ১০৪ উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় চালু রয়েছে। আমরা সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু করতে চাই। এ জন্য অংশীজনদের মতামত ও একাধিক কর্মশালার মাধ্যমে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদন হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো। তিনি জানান, আজ সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নীতিমালার খসড়া উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের(২০২০) শুরুতেই এ কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও পরীক্ষামূলকভাবে আগামী অক্টোবর ‘১৯ থেকে দেশের ১৬ উপজেলায় ‘মিড ডে মিল’ নামে রান্না করা পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার পরিবেশন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিমালার অনুমোদন পাওয়া গেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফও) আওতায় ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিস্কুট বিতরণ শুরু হয়। সারা দেশের ১০৪টি দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলার সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি অংশ হিসেবে বিস্কুট বিতরণ চলে আসছে। এ বিতরণকৃত বিস্কুটের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও এবং বিতরণকৃত বিস্কুট শিশু শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হলেও এ কর্মসূচির চালু রয়েছে। এ কর্মসূচির ফলে ঝরে পড়া রোধে কিছুটা হলেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
২০১৩ সালে বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবানের লামা উপজেলায় ডব্লিউএফপির আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘মিড ডে মিল’ বা দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় স্কুলে ‘মিড ডে মিল’ বা স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতা বাড়াতে উদ্ধুদ্ধ হয় কর্র্তৃপক্ষ। চালু থাকা এ সব প্রকল্প আগামী ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ‘জাতীয় স্কুল মিল’ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ২০১৭ সালে এ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হলেও তা বেশি দূর এগোয়নি। ২০১৮ সালের শেষ দিকে বর্তমান সচিব দায়িত্ব নেয়ার এবং ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বর্তমান সরকার আবারো ক্ষমতায় আসার পর ‘জাতীয় স্কুল মিল’ নীতিমালা বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা- ২০১৯’ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজকের মন্ত্রী সভার বৈঠকে নীতিমালাটির খসড়া অনুমোদন পেলে পুরোপুরি সরকারি পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১৬ জেলায় আগামী অক্টোবর ’১৯ থেকে চালু হতে পারে ‘জাতীয় স্কুল মিল’ কার্যক্রম। এরপর দেশের আরো ১০৪টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে। এ প্রকল্পটি সারা দেশে চালু করতে প্রতি বছর খরচ হবে আট হাজার কোটি টাকা।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, একটি শিশুর প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র্য আনতে পুষ্টিচাল, ডাল, পুষ্টি তেল, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন মওসুমি তাজা সবজি, ফল এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ডিম দিয়ে খাবার তৈরি করা হবে। অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণের সাথে পরামর্শ করে খাবারের মেনু ঠিক করা হবে। জানা যায়, স্কুল ফিডিং হিসেবে এতদিন রান্না করা গরম খাবারের কথা ভাবা হলেও এখন বিকল্প হিসেবে ডিম, কলা, পাউরুটি ও বিস্কুটের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। মূলত রান্না করার নানা ঝামেলা থেকে মুক্ত হতেই এই বিকল্প প্রস্তাবের কথা চিন্তা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নীতিমালা পাসের পর এ ব্যাপারগুলো মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।
‘মিড ডে মিল’ নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, শিশুদের নির্ধারিত খাবার দেয়া হবে পূর্ণ দিবস বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে রান্না করা খাবার দেয়া হবে সপ্তাহে পাঁচদিন। একদিন দেয়া হবে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুট। অর্ধদিবস বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ হার হবে ৫০ শতাংশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement