২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মির নিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা : র্যাব ডিজি

-

ভারতের কাশ্মির ইস্যুতে দেশের অভ্যন্তরে কেউ পানি ঘোলা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, কাশ্মির ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের নিজস্ব বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আশা করব ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি নিয়ে কেউ দেশে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে ঈদে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশে আলট্রা ইসলামিস্টের সংখ্যা বেশি নয়। যারা রয়েছে তারা ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রয়েছে। যেহেতু কাশ্মির বাংলাদেশের সমস্যা বা বিষয় নয়, তাই সেটি নিয়ে দেশে অনাকাক্সিক্ষতভাবে, অযাচিতভাবে ঝামেলার চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
ঈদের নিরাপত্তার বিষয়ে বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যারা গাড়ি নিয়ে নিজ এলাকায় ঈদ করতে যাবেন, তারা যেন ‘জয় রাইডে’ বের না হন। সড়কপথে এবার ধীরগতি আছে। ধীরগতি হলে দুর্ঘটনা কমে যায়; কিন্তু আমরা দেখি যে ঈদ-পরবর্তী দিনে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এতে চালকদের তো বড় ভূমিকা আছেই, যাত্রীদেরও রয়েছে। যারা গ্রামে গাড়ি নিয়ে ঈদ করতে যাবেন, দয়া করে ঈদের দিন বা ঈদের পরদিন জয় রাইডে বের হবেন না। জয় রাইডে বের হয়ে প্রাণ হারাবেন না।
র্যাব ডিজি জানান, সারা দেশের ৪২টি স্থান দুর্ঘটনাপ্রবণ। সেসব স্থানে র্যাব নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদযাত্রার ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। নগরবাসীকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, যেখানে সেখানে কোরবানি দিলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে। তিনি বলেন, অনলাইনে কোরবানির গরু কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এগুলোকে নিয়মের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, সারা দেশে ১৮ হাজার গরুর হাট বসেছে। সাড়ে ৫০০ হাট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাটগুলোতে এক কোটির বেশি গরুর আমদানি হয়। বিক্রেতারা যাতে নির্বিঘেœ হাটে গরু নিতে পারেন এবং ক্রেতারা কোনো ঝামেলা ছাড়াই গরুর কিনতে পারেন, হাসিলের নির্ধারিত অর্থের বাইরে আর্থ আদায় না হয় সেসব বিষয়ে র্যাবের নজরদারি রয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকায় পাঁচ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়। সেখানে যদি ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করে দেয়া হয়, আর তারা যদি তিন দিনব্যাপী কোরবানির ব্যবস্থা করে, তাহলে নির্ধারিত স্থানে ঢাকার বাইরেও কোরবানি দেয়া যেতে পারে। এতে পশুর চামড়া, হাড়Ñ সবই কাজে লাগানো যাবে। এটা করলে সারা শহর অস্বাস্থ্যকর হওয়া থেকে নিস্তার পাবে। সিটি করপোরেশন বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে। চামড়া ব্যবসায়ীদের আগেই মূল্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী চামড়া কেনার অনুরোধ করেন বেনজীর আহমেদ।
র্যাব ডিজি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা জানি যে, ইকোনমিক বুমের কারণে প্রচুর উন্নয়নকাজ হচ্ছে। রাস্তাঘাট হচ্ছে, ব্রিজ হচ্ছে, নতুন নতুন বিল্ডিং হচ্ছে। এসব নির্মাণাধীন জায়গায় যাতে পানি জমে না থাকে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। নিজের কাজটা দায়িত্ব নিয়ে পালন করলেই এ সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। তিনি জানান, কিছু কিছু জায়গায় র্যাবের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে মশাপ্রতিরোধী ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে ডেঙ্গু প্রিভেনশন অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে, যাতে করে র্যাব সদস্যরা সতর্ক থাকেন। তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত না হন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম একজনকে নিয়োগ দেয়া উচিত। যারা ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছেন তারা যেন ডেঙ্গু আক্রান্ত না হন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বেনজীর আহমেদ আরো বলেন, ঈদ ছাড়াও সামনে জাতীয় শোক দিবস ও জš§াষ্টমী রয়েছে। এ বিষয়ে র্যাব বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে গরুর হাট, টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, জাল টাকাসহ বিভিন্ন অপকর্ম যেন না ঘটে, সে বিষয়ে নজরদারি রয়েছে র্যাবের। ঈদ জামাত ঘিরেও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাব নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর ঈদযাত্রা আরামদায়ক ছিল। এবার বন্যা পরিস্থিতির কারণে কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে একটু সমস্যা হতে পারে। এরই মধ্যে হাটিকুমরুল, টাঙ্গাইল, সাভার এবং নবীনগর এলাকায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। ঈদযাত্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই নৌপথের যাত্রীদের অধিক সতর্ক থাকতে হবে। কেউ ঝুঁকি নেবেন না।
র্যাবের কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ। তার বিষয়ে র্যাবের কোনো উদ্যোগ আছে কি? তাকে খুঁজে না পাওয়াটা ব্যর্থতা কি না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় না। খুঁজে না পাওয়াটা শুধু এ দেশের সমস্যা না। অনেক দেশেই লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। একজন লোক খুঁজে না পাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। আর খুঁজে না পেলেই কারো ব্যর্থতা হয় না। তবে র্যাব বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। র্যাবের পক্ষ থকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কারো কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে তা র্যাবকে জানাতে অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, ডিবি পরিচয়ে পল্লবীর বাসা থেকে হাসিনুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে পল্লবী থানায় জিডি করেছে তার পরিবার। হাসিনুর রহমান র্যাব-৫ ও র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক। তিনি বিজিবিতেও বেশ কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement