২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাতক্ষীরা বান্দরবানে গুলিতে দুই আ’লীগ নেতাসহ নিহত ৩

-

সাতক্ষীরা ও বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা নিহত হয়েছে। সাতক্ষীরায় পৃথক হামলায় নিহত হয়েছে অপর যুবক। গুলিতে নিহত দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে কারা হত্যা করেছে তা এখনো শনাক্ত করতে পারেনে পুলিশ। হামলায় ঘটনাটি জমিসংক্রান্ত হওয়ায় পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতীরায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম (৪৮) ও তালায় প্রতিপক্ষের হামলায় খালেক সরদার (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরতলীর কাসেমপুর স্টোন ব্রিকস এলাকায় এবং সকাল ৭টার দিকে তালা উপজেলার মুড়াগাছা গ্রামে পৃথক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা মো: নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের মৃত নিছার আলীর ছেলে। তিনি সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। অপর দিকে, খালেক সরদার তালা উপজেলার মুড়াগাছা গ্রামের আবু সাঈদ সরদারের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহতের চাচা রাজ্জাক সরদার।
আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি জানান, আ’লীগ নেতা নজরুল ইসলাম সকালে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে স্থানীয় কদমতলা বাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সদর উপজেলাধীন কদমতলা-বৈকারী সড়কের কাসেমপুর স্টোন ব্রিকস এলাকায় পৌঁছালে অপর একটি মোটরসাইকেল যোগে দুর্বৃত্তরা এসে তার পেছন দিক থেকে দুই রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মটারসাইকেল চালিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে কাসেমপুর হাজামপাড়া এলাকায় এসে মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা যান নজরুল ইসলাম। ঘটনার পরপরই এলাকাবাসি সাতীরা-বৈকারি সড়ক অবরোধ করে রাখে।
খবর পেয়ে সাতক্ষীরা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিশ ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মো: নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য আ’লীগ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত নজরুল ইসলামের ছেলে পলাশ হোসেন জানান, স্থানীয় সাবেক মেম্বার তৌহিদুলের সাথে তার বাবার বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে তার বাবাকে তৌহিদ মেম্বারের লোকজন হত্যা করতে পারে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিশ জানান, নিহত আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। এর আগে তার ভাই সিরাজুল ইসলামকে বোমা মেরে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা। বছর দুয়েক আগে তার ভাইপো যুবলীগ নেতা রাসেল কবীরকেও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
এ দিকে তালায় নিহত খালেক সরদারের ফুফা আবদুস সামাদ সরদার জানান, তালা উপজেলার মুড়াগাছা গ্রামের ধোনা সরদাররের সাথে একই গ্রামের সাইদ সরদারের পারিবারিক রাস্তা তৈরি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে সোমবার সকালে ধোনা সরদারের ছেলে রহমত সরদার, স্ত্রী ইছামতী, দুই মেয়ে নুরি বেগম ও শরবানু বেগম এবং পুত্রবধূ হালিমা বেগম লোহার রড, শাবল ও ইট দিয়ে প্রতিপ সাইদ সরদারের ছেলে খালেক সরদারকে পিটাতে থাকে। এ সময় খালেককে উদ্ধার করতে তার চাচা রাজ্জাক সরদার এগিয়ে আসলে তাকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা।
হামলায় গুরুতর আহত খালেক ও রাজ্জাককে উদ্ধার করে প্রথমে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। মারাত্মক আহত খালেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী খালেক সরদারকে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে আহত হয় কয়েকজন। এরপর গুরুতর আহত খালেক সরদারকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানের সদর উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মং মং থোয়াই মারমাকে (৫৫) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার বেলা ১টার দিকে বান্দরবান রোয়াংছড়ি সড়কের সামুখ ঝিরি এলাকায় মোটরসাইকেল করে আসার সময় দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। স্থানীয়রা খবর পাওয়ার পর তাকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ দিকে সদর হাসপাতাল এ ঘটনার পর নেতাকর্মীরা লাশ দেখতে ভিড় করে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি থেকে কাজ সেরে মোটরসাইকেল নিয়ে বান্দরবান জেলা শহরে আসার পথে সামুকঝিরি এলাকায় দুর্বৃত্তরা তার উপর বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে। গুলি মং মং থোয়াই-এর বুকে ও পিঠে লাগে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন কারা গুলি করেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রোয়াংছড়ি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, জনসংহতি সমিতির সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন। পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে জনসংহতি সমিতি সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে ইতোমধ্যে সেখানে সেনাবাহিনী পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত দুই মাসে বান্দরবানে জনসংহতি সমিতি ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে উভয় দলের অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement