২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আবার সময় বৃদ্ধির আবেদন

খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্প দ্বিতীয় দফায়ও শেষ হয়নি

-

দু’ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি খুলনা-মংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের। ফলে তৃতীয় দফায় আবারও সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। ধীর গতির কারণে বারবার সময় নিয়েও কাজ শেষ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও নকশা জটিলতা সংক্রান্ত কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বাগেরহাট অংশের চারটি স্টেশনের ভূমি অধিগ্রহণের আবেদনে ভূমি মন্ত্রণালয় এখনও সাড়া দেয়নি। ফলে প্রকল্পের কাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে সেটি বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প মেয়াদ ছিল ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ ছাড়া তৃতীয় দফায় ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুলনায় রেলপথ ও স্টেশন বিল্ডিংয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন খুলনা অংশে রেলস্টেশনের অ্যাপ্রোচ রোডের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। তবে প্রকল্পের বাগেরহাট অংশের চারটি স্টেশনের জন্য ১২ দশমিক ১৯ একর জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এই জমি অধিগ্রহণের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা এখনও অনুমোদন পায়নি। ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়াদে কাজ সম্পন্ন হবে সেই প্রস্তুতি নিয়ে ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়। তবে নানা জটিলতার কারণে ২০১৭ সালে সেই কাজ শুরু হয়। ফলে দুই বছর পিছিয়ে যায়। সেই দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবদুর রহিম জানান, আগস্টের প্রথম দিকে প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছে। এখন রূপসা রেল সেতু দৃশ্যমান। দ্বিতীয় স্প্যানটি চলতি মাসের শেষদিকে বসানো হবে। ইতোমধ্যে ফুলতলা রেলস্টেশন ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আড়ংঘাটা ও মোহাম্মদনগর স্টেশনের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ ও টেন্ডারপ্রক্রিয়াসংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি অংশে বিভক্ত। যার একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। আর রূপসা নদীর উপরে হজরত খানজাহান আলী সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এ ছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং ব্রিজের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর ব্রিজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন অ্যান্ড টাব্রু নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠানকে।


আরো সংবাদ



premium cement