১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চৌগাছায় চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে নেই চোখের ডাক্তার

চৌগাছায় চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে নেই চোখের ডাক্তার - প্রতীকী ছবি

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। পদ থাকলেও দীর্ঘ দিন উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নেই চোখের ডাক্তার। বেকায়দায় পড়েছেন চক্ষু রোগীরা। ছোঁয়াচে এ ভাইরাল ইনফেকশন রোগ দেখা দিয়েছে উপজেলাব্যাপী।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চোখে ছোঁয়াচে ভাইরাল ইনফেকশন ডিজিজ (রোগ) হচ্ছে। এ রোগে চোখ লাল হয়ে ফুলে যায়। চোখ চুলকায়, ব্যথা হয়। প্রচণ্ড যন্ত্রণা করে। তবে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। পরিবারের একজন সদস্য এ ভাইরাল রোগে আক্রান্ত হয়ে অসাবধানভাবে চলাফেরা করলে পুরো পরিবার আক্রান্ত হতে পারে। তবে চিকিৎসা নিলে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠেন। গণহারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় চোখের ড্রপের সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

জানা যায়, উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসকের পদ থাকলেও দীর্ঘ দিন চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। অনেকে বাধ্য হয়ে জেলা শহর যশোর ও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন। শরণাপন্ন হচ্ছেন প্রাইভেট চক্ষু চিকিৎসকের। গত কয়েকদিন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় প্রায় সব বয়সের মানুষ এ ছোঁয়াচে ভাইরাল ইনফেকশন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বড়দের তুলনায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

এ রোগে আক্রান্ত পৌর শহরের সেলিনা বেগম বলেন, প্রথমে আমি ও আমার মেয়ে দুই জনেই আক্রান্ত হই। একদিন পরে আমার পরিবারের আরো দুই জন আক্রান্ত হয়। দু’চোখ হঠাৎ করে লাল হয়ে যায় এবং চোখ ফুটতে (খচখচ) ও ব্যাথা শুরু হয়। শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন অনেকটা কম হয়েছে।

শহরের চৌগাছা কামিল মাদরাসার পরীক্ষা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা দিতে আসা রাকিব হাসান বলেন, দু’দিন যাবৎ চোখ লাল ও প্রচণ্ড ব্যথা করছে। পরীক্ষা দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমাদের গ্রামের অনেক মানুষের চোখে এ রোগ হয়েছে।

পৌর শহরের মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল আহমেদ বলেন, আমার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে এ রোগে আক্রান্ত। স্কুলে প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছে ১২ জনের মতো। বর্তমানে পূজার ছুটি চলছে। তবে এ রোগের প্রভাব ব্যাপক হারে বেড়েছে। ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

গদাধরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, আমার পরিবারের শিশুসহ সবাই এই চোখ ওঠা ভাইরাসে আক্রান্ত। হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তার দেখাতে হয়েছে।

চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আল-ইমরান বলেন, গত দু’দিনে চোখে ভাইরাস আক্রান্ত শতাধিক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত রোগীকে আলাদাভাবে থাকতে বলা হচ্ছে। তার ব্যবহৃত তোয়ালে, গামছা, রুমালসহ অন্য সবকিছু আলাদা রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস যে ব্যবহার করবে সেই আক্রান্ত হবে। চোখ ওঠা এই রোগ থেকে বাঁচতে নিজেদের সচেতন হতে হবে। চোখে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে। চোখে নিয়মিত ড্রপ দিতে হবে ও মুখে এন্টিহিস্টামিন খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকি বলেন, গরম আর বর্ষা মৌসুমে চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে তবে এ রোগ সারা দেশেই বিস্তার লাভ করছে। একে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস বা চোখের আবরণ কনজাংটিভার প্রদাহ। সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে। ফলে অল্পতেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ হলো চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা, খচখচ করা বা অস্বস্তি ও চুলকানি। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। পদ থাকলেও দীর্ঘ দিন যাবৎ উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নেই চোখের ডাক্তার। তবে আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি ও পরিবারের লোকজন ও লোক সমাগম থেকে কিছুটা আলাদা থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement