২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেয়ের পছন্দের স্কুলে ভর্তি হওয়ায় শিক্ষক বাবার বেতন বন্ধ!

-

মেয়ের পছন্দের স্কুলে ভর্তি হওয়ায় কাল হয়েছে শিক্ষক বাবার। স্কুল পরিচালনা কমিটি এই অজুহাতে দফায় দফায় বন্ধ করেছে এক শিক্ষকের বেতন। বেতন বন্ধ করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি তার বেতন ছাড়ের অনুরোধ করেও পাচ্ছেন না।

২০০২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বাকড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) পদে যোগদান করেন। তার মেয়ে অনন্যা সিংহ ২০১৯ সালে বাকড়ি প্রি-ক্যাডেট স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) উত্তীর্ণ হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে বাবার স্কুল বাকড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়।

শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহ জানান, তার মেয়ে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিতর্ক শিখতে চায়। তার বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম না থাকায় সে চলতি বছর পাশের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

এ কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বিদ্যালয় পরিপন্থি কার্যকলাপ করছেন উল্লেখ করে জবাব চাওয়া হয়। তিনি জবাব দেয়ার পরেও তার ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। গত ৯ মার্চ থেকে নিয়মিত হাজিরা খাতার পরিবর্তে আলাদা খাতায় শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে।

সুরেন্দ্রনাথ জানান, পরিচালনা পরিষদ সভাপতি, কয়েকজন সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের কাছে বারবার বেতন ছাড়ের অনুরোধ জানানোর পর মার্চ মাস থেকে তার বেতন নিয়মিত করা হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আর দেয়া হয়নি। গত এপ্রিলে বিদ্যালয়ে মেয়ের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়ে তাকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। তিনি তার জবাবও দেন। এরপর গত জুলাই মাস থেকে পুনরায় বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘মেয়েটিকে অনেক বুঝিয়েছি। সে আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিতর্ক শিখতে চায়। এসব কার্যক্রম না থাকায় সে আমার বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছিল না। বোঝানোর সময়ে মেয়েটি অঝোরে কাঁদতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী তাকে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে।’

তিনি বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। সাথে ডায়াবেটিস রয়েছে। শরীর খুব খারাপ। দুই দিন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছি। সংসারে অভাব। বেতন বন্ধ থাকায় কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। এখন আমার মরা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিমা রাণী লস্কর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধ করেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আমিরুল আলম খান বলেন, ‘কোন শিক্ষার্থী কোন প্রতিষ্ঠানে পড়বে এটা সম্পূর্ণ ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে বাধ্যবাধকতার কোনো সুযোগ নেই। বুঝিয়ে শিক্ষার্থীকে কোনো প্রতিষ্ঠানে রাখা যেতে পারে। আইনগতভাবে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।’

বাকড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পরিমল গোলদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিটি সহকারী শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সিংহের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি তার বেতন বন্ধ করেছি। সব কিছু নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে।’

বাঘারপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন খান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে, এ ব্যাপারে ওই শিক্ষক কোনো আবেদন করেননি। আবেদন পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement