২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিষ প্রয়োগের নানা শ্বশুরকে হত্যার অভিযোগ নাত জামাইয়ের বিরুদ্ধে

চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় শামসুল শেখের - ছবি : নয়া দিগন্ত

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছিতে শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে শামসুল শেখ নামে (৬০) এক রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই নাত জামাই জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শামসুল হক চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামের ঈদগাপাড়ার মৃত করিম শেখের ছেলে। আর অভিযুক্ত জাহিদ হাসান দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের দলিয়ারপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।

শামসুল শেখের স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, ‘আমার নাতনী কামনা খাতুনকে আমি নিজে লালন-পালন করে বড় করেছি। সে আমার কাছেই থাকতো। বছর দুয়েক আগে জাহিদ হাসানের সাথে পারিবারিকভাবে কামনাকে বিবাহ দিই। বিয়ের পর থেকেই আমার নাতনীকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতো নাত জামাই জাহিদ। নাতনীর সুখের কথা চিন্তা করে যৌতুক বাবদ নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তারপরও থামেনি নির্যাতন। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও মারধর করতো জাহিদ। পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পারায় ছয় মাস আগে আমার নাতনী বাধ্য হয়ে ডিভোর্স দেয় জাহিদকে।

মারধর ও নির্যাতন না করার প্রতিশ্রুতি দিলে তিন মাস পর আবারো তাদের বিয়ে হয়। এর কয়েকদিন পর আবারো নির্যাতন করতে থাকে জাহিদ।

গত শনিবার (২৭ নভেম্বর) দ্বিতীয়বারের মতো জাহিদকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় কামনা। এর মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর আমাদের বাড়িতে আসে জাহিদ। এ সময় তার সাথে আমাদের বাগবিতণ্ডা হয় এবং সে চলে যায়।

রাতে আমার স্বামী ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিল। এসময় জাহিদ হাসান আমার স্বামীর ঘাড়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ফুটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েলে রাত ১টার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আজ সকালে তিনি মারা গেছেন।

আমার স্বামী জীবিত অবস্থায় বলেছিলেন, তার নাত জামাই হাসান সিরিঞ্জের ভিতর বিষ দিয়ে তার ঘাড়ে ফুটিয়ে দিয়েছে।’

নাতনী কামনা খাতুন বলেন, ‘ডিভোর্সের পর থেকেই আমি নানা-নানীর কাছে আছি। এরপর থেকে জাহিদ আমাকে ও আমার নানাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১২টার দিকে আমার নানা ঘাড়ের ব্যাথায় কাতরাতে থাকে। পরে আমি ও আমার নানী গিয়ে দেখি নানার বিছানার পাশে একটি খালি ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পড়ে আছে। এসময় আমার সাবেক স্বামী জাহিদ ও অজ্ঞাত দুজনকে পালিয়ে যেতে দেখি।’

তিনি আরো বলেন, আমাদের বাড়িতে কোনো প্রাচীর না থাকায় নানার ঘরে যে কেউ সহজে ঢুকতে পারেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমার নানার উপর প্রতিশোধ নিলো জাহিদ। ঘটনার কিছুক্ষণ পর নানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: সাজিদ হাসান জানান, ‘বিষক্রিয়ায় কারণে শামসুল শেখের মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তে বিস্তারিত বলা যাবে।’

এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নিহতের নাতনী জানায়, জাহিদ হাসান তার নানাকে একটি ইনজেকশন পুশ করেছিল। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আমরা জাহিদকে আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছি। আটকের পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।

তিনি আরো জানান, লাশ সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন। শামসুল শেখের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement

সকল