টানা বৃষ্টিতে শরণখোলায় ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি
- শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা
- ২৯ জুলাই ২০২১, ২১:২৫
তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে শরণখোলার ১৩ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। বৃষ্টির পানিতে উপজেলার সর্বত্র তলিয়ে রয়েছে। এতে বেশি কষ্টে রয়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে পানিবন্দি অনেক পরিবারে।
মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, দেড় হাজার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে পানিতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ জানায়, আমনের বীজতলা, রোপা আউশ ও সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল শতভাগই পানির নিচে। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চলনও বন্ধ রয়েছে।
এ দিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত শরণখোলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ দেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রায়হান উদ্দিন শান্ত, ইউএনও খাতুনে জান্নাত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা তার সাথে ছিলেন।
এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৩৩৩ নম্বর ফোন করে কেউ খাদ্য সঙ্কটের কথা জানালে তার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
অপর দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত পানিবন্দি পরিবারে শুকনা খাবার ও রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বৃহস্পতিবার খিঁচুড়ি বিতরণ করেছেন।
উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের জামাল চাপরাসী ও আনোয়ার হাওলাদার জানান, তাদের ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি। দু’দিন রান্না হয় না। ঘরের মধ্যে টং বানিয়ে তার ওপর থাকেন। চিড়া খেয়ে কাটছে তাদের দিন। ওই গ্রামের প্রত্যেকের বাড়িতে একই অবস্থা বলেও জানান তিনি।
উত্তর সোনাতলা গ্রামের শাহ আলম ফকির জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে উত্তর সোনাতলা আদর্শ গ্রামের ১২০ পরিবার পানিতে ডুবে আছে। তাদের ঘরে খাবার নেই। বাজার থেকে চিড়া কিনে ওই সব পরিবারে বিতরণ করেছেন তিনি।
রায়েন্দা বাজার শ্রমিক আ: লতিফ, ফুলমিয়া হাওলাদার ও রুবেল ঘরামী জানান, তাদের হাতে কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর।
একইভাবে দুর্ভোগে রয়েছে উপজেলা সদরের কয়েকহাজার দিনমজুর, ভ্যানচালক, হোটেল শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ।
শরণখোলার বাসিন্দা শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: রিয়াদুল ইসলাম সোহেল জানান, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইস গেট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং যেসব গেট রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার অভাবে এই দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মো: লাকিদুল ইসলাম জানান, পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারে শরণখোলায় ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ১৬টি ড্রেনেজ স্লুইস গেট ও ১৫টি ফ্লাশিং স্লুইস গেট রয়েছে। অপর দিকে শহর রক্ষাবাঁধের রায়েন্দা ফেরিঘাট থেকে বান্দাঘাটা পর্যন্ত ১১টি ড্রেন রয়েছে। যেহেতু বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। তাই পানি নিষ্কাশনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দুর্যোগ মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজনে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির (ডব্লিউএমজি) কাছে কয়েকটি গেটের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত বলেন, শরণখোলার ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জরুরিভাবে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ছাড়া, ৩৩৩ নম্বরে কল দিলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা