চুয়াডাঙ্গায় চাকরির প্রলোভনে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে কোম্পানি উধাও
- চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা
- ০৯ মার্চ ২০২১, ১১:৪৮
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে স্টার গোল্ড ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড স্টার গোল্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের একটি ভুয়া কোম্পানি অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে। ভুয়া কোম্পানিটির কর্মকর্তারা উপজেলার শতাধিক বেকার যুবককে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে জামানতের নামে অর্থ হাতিয়ে নেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রত্যাশী যুবকরা জামানতের টাকা ফেরত পেতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শহরের আঁশতলা পাড়ার ইকতিয়ার উদ্দিনের বহুতল বাড়ির দ্বিতীয় তলায় জোনাল অফিসের নামে গত বছরের ১ অক্টোবর ওই কোম্পানি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। এরপর ওই বাড়িতে স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড স্টার গোল্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের একটি বিশাল সাইনবোর্ড লাগায় তারা। পরে ভুয়া কোম্পানিটির কর্মকর্তারা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদের টার্গেট করে কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখায়। একপর্যায়ে বেকার যুবকরা চাকরির আশায় জামানত হিসেবে ওই কোম্পানির কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে জমা দেন। এভাবে তারা শতাধিক বেকার যুবকের থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, জামানতের টাকা নিয়ে তাদের হাতে ভুয়া নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হলেও কোনো কাজ ও বেতন দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দিলে ভুয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হন। বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যুবকরা গত রোববার বিকেলে ওই অফিসে তালা লাগিয়ে দেন ও বেতনসহ জামানতের টাকা ফেরত পেতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের সুজন হোসেন জানান, ‘সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিকে কর্মরত মো: মোস্তাক আহম্মদের কাছ থেকে জানতে পারি স্টার গোল্ড ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানিতে লোক নিয়োগ করা হবে। আমি ওই অফিসে যোগাযোগ করার পর মোস্তাক আহম্মদের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে ২০ হাজার টাকা বেতনে শাখা ব্যবস্থাপকের চাকরি নিই। কিন্তু আজ অবধি আমাকে কোনো কাজও দেয়া হয়নি, কোনো বেতনও দেয়া হয়নি। এখন বুঝতে পারছি আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে ওই কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না, তাদের মোবাইল ফোনে কল করলেও ফোন ধরছে না।’
একই অভিযোগ করেন ওই কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হাসিব ইকবাল ও প্রকল্প সহকারী বখতিয়ার উদ্দীন। তারাও মোস্তাক আহম্মদের মাধ্যমে একজন ৩০ হাজার ও অরেকজন ১২ হাজার টাকা জামানত দিয়েছেন চাকরির আশায়। নিয়োগপত্র পেলেও কোনো বেতন পাননি তারা।
এ ছাড়াও বিভিন্ন পদে চাকরির জন্য জামানত হিসেবে নাজিবুল হক ২০ হাজার টাকা, নাসের আলী ২০ হাজার, রুবিনা আক্তার ১৫ হাজার, রেবেকা সুলতান ২০ হাজার, নাদিয়া জাহান তানিয়া ১৫ হাজার, আশরাফুল হক ১০ হাজার, সাগরিকা আক্তার ৮ হাজার টাকাসহ শতাধিক ব্যক্তি অর্ধকোটি টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
উথলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত রুবিনা আক্তার বলেন, স্টার গোল্ড ইলেক্ট্রনিক্স নামের ভুয়া কোম্পানির কাছে বাড়িভাড়া দেয়া মালিক ইকতিয়ার উদ্দীন দায় এড়াতে পারেন না। তিনি কিছু না জেনে ভুয়া কোম্পানির কাছে বাড়িভাড়া দিয়ে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
ওই ভুয়া কোম্পানিটির বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাকিল আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
এ বিষয়ে জীবননগর থানা পুলিশের ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মুনিম লিংকন জানান, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রতারকচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা