২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শরণখোলায় শিক্ষক দম্পতির অত্যাচারে অবরুদ্ধ এক জেলে পরিবার

খালের উপর কাঠ দিয়ে তৈরি পথ - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাবা আমরা অত্যন্ত গরীব মানুষ, টাকা পয়সা নাই, ক্ষমতার জোর নাই, বড় কোনো আত্মীয় স্বজন কিংম্বা রাজনৈতিক নেতাও নাই। স্বামীও বেঁচে নাই, তাই অসহায় অবস্থায় এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে সরকারি এই খাস জমিতে বসবাস করছি। একমাত্র ছেলেটা লোকজনের সাথে জঙ্গলে (সুন্দরবনে) মাছ ধরে। সপ্তাহ শেষে বাড়ি আসে। ব্যাচা-বিক্রি শেষে যে কয় টাকা ভাগে পায় তা দিয়া কোনো মতে আমাদের সংসার চলে। এ দেশে মোগো গরিবের পক্ষে কোনো লোক নাই। যদি থাকতো তাইলে (তাহলে) ক্ষমতা দেহাইয়া (দেখাইয়া) ঘরের সামনের রাস্তাটা ওরা (প্রতিপক্ষরা) এক্কেবারে বন্ধ হরতে (করতে) পারতো না। এহোন (এখন) এই কষ্ট আল্লাহ ছাড়া দেহার (দেখার) আর কেউ নাই। আক্ষেপের সাথে কথাগুলো বলছিলেন সুন্দরনবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জেলে ফোরকান হাওলাদারের বিধবা মা সেতারা বেগম (৫৫)।

জানা গেছে, উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রতিয়া রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রুস্তুম আলী হাওলাদার কয়েক বছর পূর্বে মারা গেলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সেতারা বেগম তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ওই ওয়ার্ডের একটু সরকারি খাস জমিতে জীবন-যাপন করতে থাকেন। কিন্তু রুস্তুম হাওলাদারের প্রথম সংসারের বড় ছেলে ও রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল হালিম (বিএসসি) ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রতিবেশী বিধবা সেতারা বেগম যেন এক প্রকার তাদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে হালিম ও তার সহযোগীরা সেতারা বেগমকে তার ছেলে-মেয়ে সহ সরকারি ওই খাসজমি থেকে তাড়ানোর জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র শুরু করেন।

সম্প্রতি আঃ হালিমের নেতৃত্বে বিধবা সেতারা বেগমের বসত ঘরটি পিছনে ফেলে সরকারী সড়কের প্রায় ১৩০ ফুট দৈঘ্যের সম্পত্তি জবর দখল করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আঃ হালিম ও তার প্রতিবেশী মোঃ আলম আকন এবং মোঃ মোস্তফা হাওলাদার একটি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেন। যার কারণে সেতারা বেগমের ওই বাড়িতে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে গেলে একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পরিবারটি।

সেতারা বেগমের ছেলে জেলে মোঃ ফোরকান আলী হাওলাদার বলেন, মার্কেট শুরু আগে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য একটু পথের দাবি করি আমরা। ওই সময় শালিসিদার ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন খান, স্থানীয় সমাজ সেবক মোঃ ইউনুচ আলী শিকদার ও মোঃ আঃ রহমান হাওলাদার সহ স্থানীয়রা বলেন, তোমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে এখানে কোনো মার্কেট হবে না। পরে দেখি রাস্তা না রেখেই কাজ শুরু হয়েছে। তখন আমি আমার সৎ ভাই মোঃ আঃ হালিম ও তার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা শাহিনুর বেগমের পা জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেও মন গলাতে পারিনি। তারা বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার ব্যবস্থা না করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ওই জমিতে লাল নিশান দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে তাকে ওরা (প্রতিপক্ষরা) ম্যানেজ করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় রাজাপুর বাজারের বাসিন্দা মোঃ মনির হাওলাদার ও তার স্ত্রী সাফিয়া আক্তার দুলালী বলেন, ওই জেলে পরিবারের পক্ষে আমরা কথা বলায় হালিমসহ প্রতিপক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করে হয়রানির চেষ্টা চালাচ্ছেন। অসহায় পরিবারটি কারো কোনো সহয়তা না পাওয়ায় আজ তারা গৃহবন্দী। এছাড়া ধানসাগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিপক্ষের কাছে ম্যানেজ হওয়ায় রহস্যজনক কারণে তিনি নির্মাণ কাজে এখন আর কোনো বাঁধা দিচ্ছেন না।

ইউপি সদস্য জাকির হোসেন খান বলেন, জেলে ফোরকান ও তার পরিবারটি যাতে গৃহবন্দী হয়ে না পড়ে সে জন্য আমরা স্থানীয়রা বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীতে আমি কিছু চেরাই কাঠ ম্যানেজ করে তা দিয়ে খালের মধ্য থেকে আপতত একটি পথ করে দিয়েছি। ওই পরিবারটির রাস্তায় বের হওয়ার জন্য কেউ এক ইঞ্চিও জমি দিতে রাজি হননি। ফোরকানের সৎ ভাই আঃ হালিম একটু দয়া করলে কোনো সমস্যা থাকতো না।

মোঃ আলম আকন ও মোঃ মোস্তফা হাওলাদার বলেন, আমরা এখনও ওই পরিবারের জন্য জমি ছাড়তে রাজি আছি। কিন্তু ফোরকানের ভাই হালিম রাজি না থাকায় ওরা অবরুদ্ধ হয়ে আছে। সেখানে আমরা কি করব?

অপরদিকে শিক্ষক আব্দুল হালিম দাবি করেন, আমি ফোরকানদের পথের জন্য ১০ ফুট জমি ছেড়ে দিয়েছি। শালিসিদারা পথ বের করে না দিলে সে দোষ আমার না।

এ বিষয়ে ধানসাগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশীলদার) বাবু শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, সরকারী ওই জমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি না করার জন্য হালিম সহ অন্যদের নোটিশ করে সংশ্লিষ্ট স্থানে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তা অমান্য করে যদি কেউ (পাকা ইমারত) মার্কেট নির্মাণ করেন তার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement