২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিচারের নামে যুবকের ওপর নৃশংস নির্যাতন

নির্যাতনের শিকার আশাদুল হক - ছবি : নয়া দিগন্ত

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়ার এক যুবকের বিরুদ্ধে বাবার কথিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তারের নির্দেশে চৌকিদার - দফাদার নির্মম এ নির্যাতন চালায় বলে যুবক আশাদুল হকের (৪০) অভিযোগ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আশাদুল জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া মিস্ত্রিপাড়ার আফসার আলী ভদা মন্ডলের ছেলে।

তিনি অভিযোগ করেন, ঘরে আমার সৎ মা। আমি সৎ মা আর বাবার প্রতিহিংসার শিকার। বাবার মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ আমাকে নোটিশ করলে আমি মঙ্গলবার সকালে যাই এবং কারো কাছে কোনো কিছু না জেনে না শুনে চেয়ারম্যান মোক্তারের হুকুমে চোকিদার - দফাদার মিলে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। আমি হাত-পা জড়িয়ে কাকুতি-মিনতি করলেও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমি মারাত্মকভাবে আহত হলে লোকজন আমাকে জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখন তারা বলছেন আমার বাবার মিথ্যা অভিযোগে ভুল করে নির্যাতন করা হয়েছে এবং আমার বাবার বিচার করবে বলে আমাকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বাড়ি আসতে বাধ্য করে।

এখন তারা ফেঁসে যাবে এই আশঙ্কায় আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।

নির্যাতনের শিকার যুবকের বাবা আফসার উদ্দিন ভদা মন্ডল বলেন, আমার ছেলে আশাদুল আমাকে জমি জায়গা নিয়ে প্রায় গালাগালিজ করে। আমাকে সে দুই দিন মেরেছে।

এসময় প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশীরা তার অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, ভদা মন্ডল দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তিনি প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের প্রতি উদাসিন ছিলেন এবং আশাদুলরা কয়েক ভাই-বোন খুব কষ্ট করে বড় হয়েছেন।

ভদা মন্ডলের বড় ভাই শওকত আলী প্রতিবেশী আছের উদ্দিনসহ একাধিক প্রতিবেশীদের অভিযোগ আশাদুল যদি কখনও তার বাবাকে মারপিট করে থাকে, তাহলে তো তাদের জানা থাকবে। ভদা মন্ডলও কখনো তাদের কাছে অভিযোগ করেনি। চেয়ারম্যান মোক্তার মুলত আশাদুলের সৎ ভাইয়ের মিথ্যা অভিযোগে ঘটনা ভালভাবে যাচাই-বাছাই না করে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে সুযোগ পেয়ে আশাদুলের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদে সালিসের নামে এমন বর্বরতা আগে কখনো দেখেনি।

ইউনিয়ন পরিষদের সালিস দরবারে উপস্থিত থাকা প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, আশাদুলের নামে তার সৎ মায়ের ছেলে তো নতুন করে অভিযোগ তুলছে যে, তার স্ত্রীকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছে। তবে মারপিট করার সময় আমি নিষেধ করেছিলাম।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মোক্তার বলেন, আশাদুল তার বাবাকে মারপিট করে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পরিষদে বিচারে তাকে চৌকাদাররা মারধর করেছে। তবে আমি নিজ হাতে মারিনি।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। সালিস দরবারের নামে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। ঘটনার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement