১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লাল চাঁদের লাশ দেখার ইচ্ছায় এখনো অস্থির মা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

লিবিয়ায় গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশীর একজন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার লাল চাঁদ (২৫)। সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে দেয়ার শেষ আকুতি জানিয়েছিলেন মা-বাবা। তাদের ওই আকুতি আর পূরণ হলো না। লাল চাঁদের দাফনের খবর শুনলেও সন্তানকে একনজর দেখার ইচ্ছায় এখনো অস্থির হয়ে পড়ছেন মা মর্জিনা খাতুন।

মা মর্জিনা খাতুন বলেন, “আমার মনি আজ কয়ডা মাস গেছে। আমার মনির মুখখান আমি এখনো দেখতি পারলাম না। আমার মনিরে মারিছে। ছিকল দিয়ে পেচায়ে রাখছে। কারেন্টে শট দেছে। সবাই বলল লাশের ব্যবস্থা করবানি। এখনো কেউ ব্যবস্থা করিনেই। ভাবলাম আমার মনি যদি আসে একটু নাড়েচাড়ে দেখফানি। মাটি দিবানি। তা আর ভাগ্যে হলো না। আমার মনিরে আনে দেন।

লাল চাঁদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তার পরিবারের কান্না থামছে না। তাদের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পাড়া-প্রতিবেশীরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

জানা যায়, লাল চাঁদের বাবা দীর্ঘদিন থেকে হার্টের রোগে ভুগছেন। কাজ করতে পারেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলে লাল চাঁদ। অভাব অনটনে কোনো রকম চলে তাদের সংসার। দারিদ্রতা থেকে পরিত্রাণের জন্য ধার-দেনা এবং এনজিওর ঋণের টাকায় লাল চাঁদকে লিবিয়ায় পাঠায় বাবা ইউসুফ আলী। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা; সন্তান এবং সম্পত্তি হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা-মা।

নিহত লাল চাঁদের পিতা ইউসুফ আলী জানান, ছেলের টাইলস মিস্ত্রির কাজের মাধ্যমে কামাল সাহেব নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। সে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায়ে টাইলস মিস্ত্রির কাজ দেবে বলে। চার বছর আগে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেয়। নেবে নেবে বলে কিন্তু নেয় না। পরে গত বছর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরো দেড় লাখ টাকা নিয়ে তাকে নিয়ে যায়। পরে শুনি তাকে আটকে রাখা হয়েছে। কাজ দেয়নি। ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে আমার কাছে ফোন আসে আরো দশ লাখ টাকা না দিলে তাকে ছাড়া হবে না। তাকে মারপিট করতে থাকে। পরে খবর আসে লাল চাঁদকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।

নিহতের পিতা আহাজারি করে বলেন, শুনছি হাজী কামাল গ্রেফতার হইছে। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তার ফাঁসি চাই।

একই গ্রামের আরেক যুবক তরীকুল ইসলাম (২০) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় লিবিয়িার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে । তার বাবা-মা আহত সন্তানকে দেশে ফেরৎ পাঠানোর আকুতি জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানূর রহমান আহত ও নিহতের বাড়িতে যেয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement