১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সড়কে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অভিনব ইজিবাইক

আল-আমিনের ইজিবাইকে রয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সুবিধা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ছোট একটি ইজিবাইকের চারটি গেট। চারজন যাত্রী উঠানামা করতে আলাদা আলাদা গেট ব্যবহার করছে। গাড়িতে লাগানো হয়েছে জীবাণুনাশক স্প্রে মেশিন। চুয়াডাঙ্গার জেলা শহরের রাস্তায় এমন একটি ইজিবাইকের দেখা মেলে। কৌতুহল নিয়ে ইজিবাইকের চালকের সাথে কথা বলে জানা গেলো অভিনব এ বাইকের রহস্য।

চালক জানালেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের উপযোগী ইজিবাইক তৈরি করেছেন তিনি। করোনা সংক্রমণ রোধে গাড়িতে ভ্রমণের সময় সামাজিক দূরত্ব কার্যকর নিশ্চিতের লক্ষে গাড়ির ডিজাইন করা হয়েছে।

গাড়ির চালক আল-আমিনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরের হাসরাহাটি গ্রামের মন্ডল পাড়ায়। তিনি পেশায় একজন ইজিবাইক মিস্ত্রি।

শুধু সামাজিক দূরত্বই না, ইজিবাইকে আছে জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা।

করোনা লকডাউনে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। জেলা শহরের সড়কগুলোতে চলছে হাতেগোনা কয়েকটি রিকশা ও ইজিবাইক। সড়কে বের হতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন ইজিবাইকের সাথে জড়িতরা।

সাধারণত ইজিবাইক মানেই নজরে আসে ব্যাটারিচালিত একটি বাহন। যেখানে চার দিক দিয়ে ঘেরা। ভেতরে বসতে পারে চার থেকে ছয়জন। গাদাগাদি করে পাশাপাশি ও সামনা-সামনি বসে গন্তব্যে যেতে হয় যাত্রীদের। সামাজিক দূরত্ব বজায়ে রাখা তো দূরের কথা, ইজিবাইকে বসার পদ্ধতি মূলত করোনা সংক্রমণের পক্ষে শতভাগ উপযোগী। তাই ইজিবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সংক্রমণ রোধী নতুন পদ্ধতিতে ইজিবাইক তৈরি করেছেন আল-আমিন। নতুন এ গাড়িতে গাদা-গাদি থেকে রক্ষা এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে না।

আল-আমিন জানান, সংক্রমণ প্রতিরোধের ধারণা থেকে নতুন এ ইজিবাইকে চারটি গেট ও মাঝখানে পার্টিশন দেওয়ার কথা মাথায়। ইজিবাইক মিস্ত্রি ও নিজের ইজিবাইক মেরামতের ওয়ার্কশপ থাকায় নিজেই লেগে পড়েন আইডিয়া বাস্তবায়নের কাজে। দীর্ঘ ১ সপ্তাহের চেষ্টায় ইজিবাইক কেটে চারটি গেট করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাঝ দিয়ে দিয়েছেন ১ ইঞ্চি মোটা শোলার পার্টিশন। এতে এক যাত্রির সাথে অন্যযাত্রির দেখা হবে না। সবাই আলাদা গেট ব্যবহার করে গাড়িতে উঠানামা করবে। আবার ইজিবাইকে যাত্রী ওঠার পূর্বে তাদেরকে অবশ্যয় ইজিবাইকে থাকা জীবাণুনাশক স্প্রে মেশিনের সামনে দাঁড়াতে হবে।

আল-আমিনের ইজিবাইকের যাত্রী নাসিম হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে এমন ইজিবাইক আমি দেখিনি। ইজিবাইকটি যেভাবে ভেঙ্গে বানানো হয়েছে তা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই উপযোগী ও প্রয়োজনীয়। চারজন চার পাশে বসছে। একজন যাত্রী অন্যজনের সংস্পর্শে আসছে না। কেউ কারো সাথে কথাও বলতে পারছে না। আবার ইজিবাইকে ওঠার আগে দাঁড়াতে হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রের সামনে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আর কোথাও থাকলেও এই ইজিবাইকে অন্তত নেই বলেই আমার মনে হচ্ছে।

ইজিবাইক মিস্ত্রি আল-আমিন বলেন, একাডেমি মোড় মোজাম্মেল পেট্রোল পাম্পের পিছনে আমার ইজিবাইক মেরামতের একটি ওয়ার্কশপ আছে। করোনা মহামারিতে লকডাউনের জেলায় ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। আমি রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষকে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে রোদের মধ্যে পথে হাঁটতে দেখেছি। মূলত সেই থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইজিবাইক তৈরির কথা মাথায় আসে আমার। নিজের একটি ইজিবাইক ছিলো, সেটা কেটেই এভাবে নিজে হাতে বানিয়েছি। লাগিয়েছি একটি জীবাণুনাশক স্প্রে মেশিন। এতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। শহরের সকল ইজিবাইকগুলো যদি এমন হতো, তবে যাত্রাপথে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকতো। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে। সাহযোগিতা পেলে আমি সাধারণ ইজিবাইকে এভাবে বানিয়ে দিতে পারবো।


আরো সংবাদ



premium cement