১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাতক্ষীরায় ঝুকিপূর্ণ লোকদের সারিয়ে আনা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে

সাতক্ষীরায় ঝুকিপূর্ণ লোকদের সারিয়ে আনা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে - নয়া দিগন্ত

সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে তিন হাজারেরও অধিক ব্যক্তিকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এদিকে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডর কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় মোট ১ হাজার ২৭২ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এরমধ্যে আশাশুনি উপজেলায় ১০৬ টি, দেবহাটা উপজেলায় ১০৪ টি, কলারোয়া উপজেলায় ২১৮ টি, কালিগঞ্জে ১১৬ টি, সাতক্ষীরা সদরে ৩৩৩ টি, শ্যামনগরে ৩০৩ টি ও তালায় ৯২ টি। এছাড়া নতুন করে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে কালিগঞ্জে ৮৭টি। আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫ লক্ষ ২২ হাজার জন।

সূত্র আরো জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোতে ২৫৬০ জন ও ২০৫০টি গবাদি পশুর আনা হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে মাস্ক ও সাবানের ব্যবস্থা আছে এবং আইসোলেসন রুমেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় জেলায় মোট ১৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ১৭০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নৈশ প্রহরীকে সার্বক্ষর্ণিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানসহ মোবাইল সচল রাখতে বলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগণ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করবেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা এর অফিস কক্ষে জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

প্রত্যেক আশ্রয় কেন্দ্রে একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রয়োজন অনুসারে মিড ওয়াইফারী নিয়োগের বিষয়ে সিভিল সার্জন উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ এর সাথে সমন্বয় করে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশের নিজস্ব কর্মী বাহিনীসহ সরঞ্জাম প্রস্তুতি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বিভাগকে পুলিশ বিভাগের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, নৌ পুলিশ ও নৌবাহিনী, সংশ্লিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিগণকে নিরাপদ আশ্রয় মানুষকে নিয়ে আসার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় জেলার ১৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলাব্যাপী ১হাজার ৭৯৬ টি স্কুল-কলেজ বিকল্প আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দূর্যোগকালিন সময়ে এসব কেন্দ্রে ৬ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। কিছু মানুষকে ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র আনা হয়েছে।

একই সাথে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারসহ আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে করোনার বিষয় মাথায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশের আগে সকলের থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে তারপর আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। কারো শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ৭২০ কি.মি. বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে দেড়শ’ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ অত্যান্ত ঝুকিপূর্ণ। পাউবো কর্তৃপক্ষ অধিক ঝুকিপূর্ন বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুজ্জামান খানা বলেন, এই মূহুর্ত্বে পাউবো বিভাগ-১ এর অধীনে বিভিন্ন পোল্ডারে ১০ টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া যে সব এলাকায় বেড়িবাঁধের সামান্য সমস্যা রয়েছে সেগুলে মেরামত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আ.ন.ম আবুজার গিফারী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যেকোনো মুহূর্তে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত আনতে পারে। সে জন্য উপকূলের প্রতিটি ইউনিয়নের সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের আশ্রয়ের জন্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তাৎক্ষণিকভাবে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement