২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছেন খুলনা উপকূলীয় এলাকার মানুষ

সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছেন খুলনা উপকূলীয় এলাকার মানুষ - ফাইল ছবি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত হানার আশংকায় মোংলা ও পায়রা বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর পর খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ ও কয়রার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন। শনিবার সকাল ১০টার পর থেকেই মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন।

এদিকে, খুলনায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় শুক্রবার বিকেল থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার। এই সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০জনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। এছাড়া স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে শুক্রবার থেকেই দাকোপ, কয়রা, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছায় মাইকিং করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় খুলনা জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় খুলনায় ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নয়টি উপজেলায় ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার জন্য দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় শুক্রবার দুপুর থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের দুবলার চরে অনুষ্ঠেয় রাসমেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের (সিপিপি) কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাত হানার আশঙ্কা থাকায় খুলনা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে নগর ভবনের জিআইজেড মিলনায়তনে দুর্যোগকালীন অথবা দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। সভায় কেসিসির জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত বিভাগগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল, দুর্যোগ বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং, স্কুল-কলেজের ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা, মেডিক্যাল টিম গঠন, অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত বিভাগগুলো প্রস্তুত রাখা, জরুরি ত্রাণসামগ্রী ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মেয়র দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন।

নগর ভবনের দ্বিতীয়তলায় কন্ট্রোল রুম খোলাসহ (কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ০৪১-২৮৩২৯৭৭) দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভায় দুর্যোগকালীন যেকোনো প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা-দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর-আশাশুনি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়া এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। তারা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে বাড়িঘর, ফসল, মাছের ঘের ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ।

উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় এ তিন জেলার ৮৫৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মেম্বর বেলাল হোসেন বলেন, কয়রার বেড়িবাঁধের বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। পানির যে চাপ তাতে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে সিডর-আইলার মতো ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, শনিবার সকাল ১০টার পর থেকেই দুই নম্বর কয়রাসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে যাওয়া শুরু করেছে।

খুলনা জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত খুলনায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিনি জানান, ২২ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে বর্তমানে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল অবস্থান করছে।

এদিকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর থেকেই মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন বলেন, বন্দরের সব জাহাজের মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ জারি থাকবে বলেও জানান বন্দরের এ কর্মকর্তা।

শুক্রবার রাতে জরুরি সভা করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে এ মুহূর্তে মেশিনারি, ক্লিংকার, সার, জিপসাম, পাথর, সিরামিক ও কয়লাসহ দেশি-বিদেশি মোট ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। বন্দরের পক্ষ থেকে তিনটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement