২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খুলনা জেলা প্রশাসককে বিএনপির স্মারকলিপি

৪৪ মামলার চার্জশীট দেয়ার প্রতিবাদ, ১১০ মামলা প্রত্যাহার দাবি
জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিচ্ছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ - ছবি : নয়া দিগন্ত

খুলনা মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৪৪ গায়েবী ও নির্বাচনকালীন মিথ্যা মামলায় চার্জশীট দেয়ার প্রতিবাদে ও অবিলম্বে ১১০টি মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মহানগর বিএনপি আজ বুধবার জেলা প্রশাসক মো: হেলাল হোসেনকে স্মারকলিপি দিয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, অতি সম্প্রতি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ খুলনা মহানগরীর ৮ থানায় বিগত মেয়র ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে ২০টি গায়েবী ও ২৪টি নির্বাচনকালীন মোট ৪৪টি মিথ্যা মামলায় চার্জশীট দিয়েছে।

২০১৮ সালের ১৫ মে ও ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় একই বছরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ আট থানায় অর্ধশতাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের কারে। এর বেশির ভাগ মামলাই অত্যন্ত গোপনে কোনো অপরাধ সংগঠন ছাড়াই দায়ের করে রাখে, যা আমরা মাসাধিককাল পরে জানতে পারি। মামলা করা হয়েছিলো একটি সুপরিকল্পিত লক্ষ্য সামনে রেখে। তা হলো নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া করা। এছাড়া নির্বাচন চলাকালীন নির্বাচন কমিশনের বিধি-বিধান লংঘন করে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছিল, যা ছিলো নির্বাচনী আইনের পরিপন্থী।

এ ৪৪ গায়েবী ও মিথ্যা মামলায় মেয়র ও সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী, খুলনা-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সকল থানা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর, অঙ্গদলের মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, মহিলাদল নেত্রী ও পোলিং এজেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রামের ট্রেইনার, পোলিং এজেন্ট, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান, এমনকি বিএনপির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে সার্ভে করতে আসা দুইজন সদস্যকে একটি আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেফতার করে সরকারের বিরুদ্ধে কথিত ষড়যন্ত্রের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি প্রধানদের আসামি করা হয়েছিলো।

নির্বাচনের একমাসে গ্রেফতার নেতাকর্মীর সংখ্যা ছিলো এক হাজারেরও বেশি। এসব মিথ্যা মামলায় আসামির সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। কয়েকটি মামলায় সংসদ নির্বাচনের আগে দেড় মাসের মাথায় চার্জশীট দিয়ে ওয়ারেন্ট বের করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়েছিল। সদর থানার একটি মামলা দাখিলের সময় আসামির সংখ্যা ২২ জন থাকলেও সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সাত দিন আগে সেই মামলায় ১৫৮ জনের নামে চার্জশীট দেয়া হয়েছিল। চার্জভুক্ত আসামিরা সব ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

গত দেড় বছরে ৪৪ মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারানির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে বিনা কারণে। অসুস্থ বাবা-মায়েরা চিকিৎসাবিহীন, সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ, সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেন না, বাড়িতে বাজার নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। প্রত্যেকটি বিএনপি সমর্থক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বিগত দুইটি নির্বাচনের সময় লক্ষ্য ছিলো সরকারের একটি ভোট ডাকাতি নির্বাচন করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ীত করা, সেদিক থেকে সরকার তো সফল হয়েছে। তাহলে সে সময়ে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় চার্জশীট দিয়ে বিএনপি কর্মীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে কেন? জনগণের ভোটের অধিকার ডাকাতি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে। বিচার তো হওয়া উচিত ছিল ভোটসন্ত্রাসীদের।

সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বিএনপি বাধাহীনভাবে রাজনীতি করার সাংবিধানিক সুযোগ দিন। সকল মিথ্যা মামলার চার্জশীটসহ খুলনা বিএনপি ও অংগ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত দশ বছরে দায়েরকৃত ১১০টি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।

নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেখ মোশারফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, অ্যাড. বজুলর রহমান, শেখ ইকবাল হোসেন, শাহ্জালাল বাবলু, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, সিরাজুল হক নান্নু, নজরুল ইসলাম বাবু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, মেহেদী হাসান দীপু, শাহিনুর ইসলাম পাখী, আজিজুল হাসান দুলু, অ্যাড. গোলাম মওলা, জালু মিয়া, সাদিকুর রহমান সবুজ, শেখ সাদী, ইউসুফ হারুন মজনু, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, সাজ্জাদ হোসেন তোতন, মুর্শিদ কামাল, কেএম হুমায়ুন কবির, একরামুল হক হেলাল, হাসানুর রশিদ মিরাজ, শামসুজ্জামান চঞ্চল, মাহাবুব হাসান পিয়ারু, শরিফুল ইসলাম বাবু, নাজির উদ্দিন নান্নু, জামিরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবি, নেইমুল হাসান নেইম, মেহেদী মাসুদ সেন্টু, বাচ্চু মীর, মোস্তফা কামাল, কাজী মাহমুদ আলী, ময়েজউদ্দীন চুন্নু ও মনিরুল ইসলাম।


আরো সংবাদ



premium cement