১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘তুই বেশি বেড়েছিস, গুলি করে মাথার খুলি উড়াইয়া দেব’

অস্ত্র হাতে ঠিকাদার রেজাউল আলম - নয়া দিগন্ত

নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মারধরসহ পিস্তলের গুলিতে হত্যার হুমকির ঘটনায় চারজনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার দুপুরে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন শহরের ভওয়াখালী এলাকার জুলমত খানের ছেলে জাকারিয়া খান। জাকারিয়া এ বছর ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। বেআইনীভাবে জনতাকে মারপিট, হত্যা চেষ্টা, হুমকি প্রদানসহ অস্ত্র আইনের বিধি ও লাইসেন্স শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মামলার ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে-শহরের মহিষখোলার ঠিকাদার রেজাউল আলম (৪৬) ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (৪০) এবং একই এলাকার ঠিকাদার মঈন উল্লাহ দুলু (৫০) ও দুঃখু। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী জাকারিয়া খান জানান, অভিভাবক কর্তৃক নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিক স্যারকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ও দোষীদের বিচার দাবিতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার সকাল ১০টার দিকে ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে আসামিরা বেআইনী ভাবে জোটবদ্ধ হয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় তারা। আসামিদের এ ধরণের কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীরা দিক-বিদিক দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করে। এছাড়া আসামিরা শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড় মারেন।

এদিকে, ঘটনার সময় ১ নম্বর আসামি রেজাউল আলম মামলার বাদী জাকারিয়া খানের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। জাকারিয়া বলেন, এ সময় রেজাউল আলম আমাকে বলে-তুই বেশি বেড়েছিস; তোকে গুলি করে মাথার খুলি উড়াইয়া দেব। ঘটনার সময় উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতারা আসামিদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাপারে নড়াইল সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া রেজাউল আলমের লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি থানায় জমা নেয়া হয়েছে।

নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূক্তভোগী শিক্ষক প্রদেশ মল্লিক জানান, গত ১৫ জুন সকালে তার বাসায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর সময় পড়ালেখা নিয়ে সানজিনা এরিনা নামে এক ছাত্রীকে শাসন করেন তিনি। এরিনা বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে তার বাবা শহরের মহিষখোলার ঠিকদার মঈন উল্লাহ দুলুকে জানায়। এরপর ওই ছাত্রীর বাবা বাসায় এসে শিক্ষককে মারধর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সানজিনা এরিনা নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হলেও নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (বালক) শিক্ষক প্রদেশ মল্লিকের কাছে প্রাইভেট পড়ত।

বিষয়টি জানাজানি হলে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ওই অভিভাবকের বিচার দাবিতে রোববার সকাল ১০ টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে নড়াইল-যশোর সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধসহ ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ করে চড়াও হয় অভিযুক্ত অভিভাবক ঠিকাদার মঈন উল্লাহ দুলুর লোকজন। দুলুর পক্ষ নিয়ে একই এলাকার ঠিকাদার রেজাউল আলমসহ তার অনুসারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তাড়া করে মারধরে উদ্যত হন।

এক পর্যায়ে প্রশাসনের সামনেই রেজাউল আলম পিস্তল বের করে ছাত্রদের গুলি করার জন্য এগিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে দিক-বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এমনকি শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনজুমান আরা ঠিকাদার রেজাউল আলমকে পিস্তল বের না করার অনুরোধ করেন। এ ঘটনায় অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ হতবাক হন। ঘটনাটি ‘টক অব দ্যা টাউন’-এ পরিণত হয়।

এ ব্যাপারে ঠিকদার রেজাউল আলম সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চাননি। এদিকে অভিযুক্ত অভিভাবক মঈন উল্লাহ দুলু ভূক্তভোগী শিক্ষক প্রদেশ কুমারকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। 


আরো সংবাদ



premium cement