২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`

যেভাবে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় সফল হতে পারেন

যেভাবে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় সফল হতে পারেন। - ছবি : সংগৃহীত

বর্তমানে সকল চাকরি পরীক্ষাতেই বেশ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। আপনাকে এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘বিজয়ীরা ভিন্ন কোনো কাজ করে না, বরং তারা একই কাজ ভিন্ন উপায়ে বা ভিন্ন কৌশলে করে।’

এখন চাকরির যে পরীক্ষাগুলো হয় তা মোটা দাগে ভাগ করলে চার ধরনের চাকরি পরীক্ষার কথা বলতে হবে। (১) বিসিএস ও পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত নন ক্যাডার চাকরি (২) প্রাইমারি (৩) নিবন্ধন (৪) ব্যাংক।

প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি কখন নিবেন :
আমার মতে, আপনার অনার্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনার প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতিও শেষ হওয়া ভালো। অনার্স পাশ করার সাথে সাথে যদি আপনি চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করতে চান, তাহলে পড়াশোনা কিন্তু অনার্স তৃতীয় বর্ষ অথবা চতুর্থ বর্ষের প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। অ্যাকাডেমিক পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে আপনি চাকরির পড়া পড়বেন। আপনাকে অনার্স তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে থাকতেই পড়াশোনা করতে বলার কারণ হলো আপনি আগে থেকে না পড়লেও আপনার বন্ধু-বান্ধবী কিন্তু ঠিকই আগে থেকে পড়াশোনা শুরু করেছে। তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আপনাকেও পড়া শুরু করতে হবে।

আজকের পর্বে বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন তা আলোচনা করব :

বিসিএস-এ তিনটি ধাপ। প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি- ২০০, দ্বিতীয় ধাপ লিখিত- ৯০০, তৃতীয় ধাপ ভাইভা- ২০০ নম্বর।

(১) প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আপনার প্রথম কাজ আপনি যে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবেন ওই পরীক্ষার ধাপ, কোন কোন সাবজেক্ট থেকে কত নম্বরের প্রশ্ন থাকে তা জানা এবং ওই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া। বিসিএস-এর ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারিতে কয়টি সাবজেক্ট আছে, কোন সাবজেক্ট থেকে কত নম্বরের প্রশ্ন থাকবে তা আপনাকে জানতে হবে। আমি একটি কাগজে বিসিএস প্রিলির ১০টি সাবজেক্টের নাম ও কোন সাবজেক্ট থেকে কত নম্বর আসে তা লিখে পড়ার টেবিলে রাখতাম।

(২) তারপর আপনি ১০টি সাবজেক্টের জন্য আবার আলাদা আলাদা কাগজে ওই সাবজেক্টের বিস্তারিত তথ্য লিখে টেবিলের সামনে রাখতে পারেন। বিসিএস প্রিলিতে গণিতে নম্বর আছে ১৫। গণিতকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পাটিগণিত- ৩, বীজগণিত- ৬, জ্যামিতি- ৬।

এটা লিখে আপনি জানতে পারলেন যে গণিতে ১৫ নম্বরের মধ্যে কোন অংশ থেকে কত নম্বর থাকে এবং পাটিগণিত থেকে কম নম্বর থাকবে। আবার পাটিগণিতে ৩ নম্বরের জন্য ছয়টি অধ্যায় পড়তে হবে তাও আপনি জানলেন। এভাবে সব সাবজেক্ট জানবেন।

(৩) ১০টি সাবজেক্টের সিলেবাস দুই-তিন বার করে রিডিং পড়বেন।

(৪) রুটিন করে পড়াশোনা করা। আমার সাজেশন হলো প্রতিদিন রুটিন না করে আপনি এক মাসব্যাপী রুটিন করতে পারেন। উদাহরণস্বরুপ আপনার টার্গেট আপনি তিন মাসে বিসিএস প্রিলির ১০টা সাবজেক্ট একবার করে রিডিং পড়ে শেষ করবেন। তাহলে প্রথম এক মাস আপনি প্রতিটি বইয়ের ৩৩% পড়া শেষ করার টার্গেট রাখবেন।

(৫) সাজেশন ভিত্তিক পড়াশোনা করতে হবে। সাজেশনটি হলো, পাটিগণিতে ৩ নম্বরের জন্য আপনাকে ছয়টি অধ্যায় করতে হবে। যে শিক্ষার্থী গণিতে দূর্বল সে তো ছয়টি অধ্যায় পড়তে পারবে না। আমার সাজেশন, ওই শিক্ষার্থীকে গত ৩৫তম থেকে ৪৪তম বিসিএস-এর প্রশ্ন দেখে উনি জানবেন যে পাটিগণিতে ছয়টির মধ্যে কোন তিনটি অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে, তিনি প্রথমবার গণিত করার সময় ওই তিনটি অধ্যায় করেই পাটিগণিত শেষ করবেন। দ্বিতীয় বার যখন করতে যাবেন তখন তিনি আরো একটি অধ্যায় বাড়িয়ে এবার চারটি অধ্যায় করবে।

(৬) যে টপিকস পড়া শুরু করবেন তা শেষ না করে অন্য টপিকসে যাবেন না। আমার সাজেশন, আপনি যখন শতকরা শুরু করবেন তখন ওইটি শেষ না করে অন্য কোনো সাবজেক্ট পড়তে যাবেন না।

(৭) সব বই একবার করে পড়া শেষ হওয়া মাত্রই আপনি জব সলিউশন পড়া শুরু করবেন। জব সলিউশন হলো চাকরি পাওয়ার তাবিজ। মানে এটি হাফেজের মতো মুখস্থ করতে হবে। পুরো জব সলিউশন মিলে প্রশ্ন আছে ২৫ হাজারের মতো। ১০তম থেকে ৪৫তম বিসিএস-এর প্রশ্ন আছে সাড়ে চার হাজারটি এবং বিগত ১০ বছরের নন ক্যাডারের প্রশ্ন ২০ হাজারের মতো। মোট সাড়ে ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার প্রশ্ন আছে। প্রতিদিন ৫০০টি করে এমসিকিউ পরলে জব সলিউশন শেষ করতে সময় লাগবে ৫০দিন। প্রতিদিন ৫০০টি করে না পারলেও সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ৩০০টি করে এমসিকিউ পড়া সম্ভব। এভাবে টার্গেট রাখলে তিন মাসে শেষ হবে। টার্গেট না রাখলে তিন বছরেও শেষ হয় না।

(৮) জব সলিউশনের রিসেন্ট প্রশ্ন আগে পড়বেন। মানে আপনি জব সলিউশন থেকে আগে ২০২৩ সালের প্রশ্নগুলো পড়বেন। তারপর ২০২২, ২০২১ এভাবে বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন মুখস্থ রাখবেন।

(৯) প্রথমবার পড়ার সময় আপনি ব্যাখ্যা ছাড়া শুধু সালের প্রশ্নগুলো পড়বেন। দ্বিতীয়বার রিভাইজ করার সময় আপনি ব্যাখ্যাসহ পড়বেন।

(১০) জব সলিউশন পড়ার সময় আগে বিগত বছরের বিসিএস-এর প্রশ্ন পড়বেন এবং বুঝার চেষ্টা করবেন, কোন সাবজেক্ট থেকে বা কোন অধ্যায় থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসে পরীক্ষায়।

(১১) যেসব প্রশ্ন মনে থাকতে চাচ্ছে না সেগুলো আলাদা করে দাগিয়ে রাখবেন। পরীক্ষার দুয়েকদিন আগে শুধু দাগিয়ে রাখা প্রশ্ন পড়বেন। যে প্রশ্ন আপনি পরীক্ষার ‍দুয়েকদিন আগে না পড়লেও উত্তর দিতে পারবেন সেগুলো পড়ে সময় নষ্ট করবেন না।

(১২) জব সলিউশন থেকে আপনি যখন বিগত বিসিএস-এর প্রশ্ন পড়বেন, তখন মুখস্থ প্রশ্নগুলো আগে পড়ে নিবেন। সাধারণ জ্ঞান, বাংলা এসব প্রশ্ন হলো মুখস্থ প্রশ্ন। গণিত ও ইংরেজি পরে পড়তে পারেন। আপনি যখন ইংরেজি পড়বেন তখন ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪তম বিসিএস-এর শুধু ইংরেজিই পড়বেন। আবার যখন গণিত পড়বেন তখন ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪তম বিসিএস-এর শুধু গণিতই পড়বেন।

’সকল চাকরি-যোদ্ধাদের জন্য শুভ কামনা রইল।’

লেখক :
কৃষিবিদ এম এ মান্নান
৩৬তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডার।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার,
মোহনপুর, রাজশাহী।


আরো সংবাদ



premium cement