২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মৃত্যুর অপরিবর্তনশীল সুনির্দিষ্ট সময়

-

মহান রাব্বুল আল আমিন তাঁর মুজিজা দিয়ে মানবজাতির জন্য অনেক নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি মানুষকে পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা দিতে পারেন। মৃত্যু সম্পর্কে পূর্ণ বিশ্বাসবিহীন আমার কেউই মুসলমান হতে পারব না। তাই আমরা মহামারীর আতঙ্কে আতঙ্কিত না হয়ে মৃত্যুকে সুনিশ্চিত জেনে সতর্কতামূলক তদবিরগুলো কার্যকর রেখে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব।
আল্লাহ বলেছেন : ‘তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা তাদের গৃহগুলো থেকে বের হয়েছে মৃত্যুর ভয়ে এবং তারা ছিল হাজার-হাজার? অতঃপর আল্লাহ তাদের বললেন, ‘তোমরা মরে যাও’! তারপর তিনি তাদের জীবিত করলেন। নিশ্চয় আল্লাহ তো মানুষের ওপর অনুগ্রহশীল। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ শুকরিয়া আদায় করে না।’ [সূরা বাকারা : ২৪৩]
এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে কয়েকটি বিষয় খুব সুন্দরভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর নির্ধারিত তকদিরের ওপর কোনো তদবির কার্যকর হতে পারে না। জিহাদ অথবা মহামারীর ভয়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচানো যায় না, আর মহামারীগ্রস্ত স্থানে অবস্থান করাও মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। মৃত্যুর একটি সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে, যার কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মহামারী আক্রান্ত জায়গা থেকে পলায়ন করা জায়েজ না। রাসূল সা: বলেছেন : ‘এ একটি শাস্তি, কতক জাতিকে এভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তারপর এর কিছু অংশ বাকি রয়ে গেছে। তাই কখনো এটি চলে যায়, আবার কখনো তা ফিরে আসে। যখন কেউ কোনো এলাকায় মহামারীর কথা শুনবে, তখন যেন সে সেখানে না যায়। আর যে কেউ এমন এলাকায় থাকে যেখানে এর আক্রমণ ঘটেছে, তখন সে যেন সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে না আসে।’ [সহিহ বুখারি : ৬৯৭৪]
এ হাদিসের আলোকে মহামারী সম্পর্কে একটি মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে : কোথাও যাওয়া মৃত্যুর কারণ হতে পারে না আবার পালিয়ে গিয়েও মৃত্যু থেকে বাঁচা যায় না।
এর ভিত্তিতে কিছু উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য উঠে আসে : বাইরের কোনো ব্যক্তিকে আসতে বাধা দেয়ার কারণ, সেখানে গিয়ে তার মৃত্যু হলে সে ধরে নেবে যে সেখানে গিয়েই তার মৃত্যু হয়েছে। অথচ এই বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে ঈমানের পরিপন্থী।
আরেকটি তাৎপর্য হচ্ছে, নিজের জানের হিফাজত করা সবার জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন আল্লাহ। তাই যা কিছু কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে সেই বিষয় থেকে সাধ্যমতো বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। তাই আল্লাহর তকদিরের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে সতর্কতামূলক তদবির কার্যকর করা আবশ্যক।
সেই স্থান থেকে পলায়ন করা থেকে বিরত থাকতে বলার মধ্যেও কিছু তাৎপর্য বিদ্যমান। একটি হচ্ছে, সেখান থেকে পলায়ন করার মাধ্যমে সামষ্টিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বয়স্ক মানুষের জন্য কষ্টকর হবে, আর তারা সেবাবিহীনভাবে মারা যাবে।
আরেকটি তাৎপর্য হচ্ছে, ইতোমধ্যে যদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে, তবে পলায়ন করার পর প্রবাসজীবন আরো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে।
এর পরের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হচ্ছে, ধৈর্য ও মনোবলের মাধ্যমে নিজস্ব স্থানে অবস্থান করে মৃত্যু বরণ করলে শহীদের মর্যাদা অর্জন করবে। তারা রোগ-জীবাণু ছড়ানো থেকে বিরত থাকায় এর ওসিলায় আল্লাহ নাজাত দিতে পারেন।
আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদত।’ [সহিহ বুখারি, ২৮৩০] সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সিপাহসালার আল্লাহর তরবারি হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রা: বিছানায় মৃত্যুবরণের আক্ষেপে পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন : ‘আমি অমুক অমুক বিরাট বিরাট জিহাদে অংশগ্রহণ করেছি। আমার শরীরের এমন কোনো স্থান নেই যা তীর-বল্লম অথবা অন্য কোনো মারাত্মক অস্ত্রের আঘাতে যখম হয়নি। কিন্তু অনুতাপের বিষয় এই যে, আজ আমি গাধার মতো বিছানায় পড়ে মৃত্যুবরণ করছি। আল্লাহ যেন আমাকে ভীরু কাপুরুষের প্রাপ্য শাস্তি না দেন। মৃত্যু ভয়ে যারা জিহাদ থেকে সরে থাকতে চায়, তাদের আমার জীবনের এ উপদেশমূলক ঘটনাটি শুনিয়ে দিও।’
অতএব, বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত্যুর ভয়ে মহামারী ও জিহাদ থেকে পলায়ন করা হারাম। যার এ বিশ্বাস রয়েছে যে, মৃত্যুর একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের এক মুহূর্ত আগেও তা হবে না এবং এক মুহূর্ত পরেও তা আসবে না, তাদের কাছে এভাবে পলায়ন করা অর্থহীন এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।
লেখিকা : কবি, সাহিত্যিক, ইসলামী গবেষক

 


আরো সংবাদ



premium cement