২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুস্থ পরিবেশের বিকল্প নেই

-

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সে হিসেবে মানুষের চলাফেরা, রুচিবোধ, মননশীলতা সবকিছু শ্রেষ্ঠ হবে এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবী আবির্ভাবের শুরু থেকে মানুষ পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করেছে। সাথে গড়ে উঠেছে মানবসৃষ্ট পরিবেশ। একই সাথে মানুষ সামাজিক জীব, মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। তাই নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা মানুষের দায়িত্ব। পাশাপাশি জীবনকে সুন্দর ও উপভোগ্য করার জন্য চারপাশ পরিষ্কার রাখা দরকার। পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ইসলাম বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার জন্য ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে দূষণমুক্ত করো এবং পবিত্র রাখ।’ পরিবেশের ওপর মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে পরিবেশের পরিবর্তন হয়। বর্তমানে অনিঃশেষ চাহিদার প্রচণ্ড চাপে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। একটু লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাইÑ বিভিন্ন কারণেই প্রতিদিন আমাদের চারপাশে সৃষ্টি হচ্ছে বিষাক্ত পরিমণ্ডল। বিশেষ করে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের পরিবেশগত বিপর্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাইড্রোলিক হর্ন, উচ্চ মাত্রায় মাইকের আওয়াজ ও কলকারখানার শব্দ ইত্যাদির ফলে শব্দদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, পৌর এলাকার অপরিশোধিত বর্জ্য পানি, তেলবাহিত দূষণ, জাহাজ ভাঙা কর্মকাণ্ড থেকে নিঃসৃত তেলজাতীয় পদার্থ দ্বারা দূষিত হচ্ছে পানি। অন্য দিকে নগরজীবনে বর্তমানে ভোগান্তির আরো একটি কারণ বায়ুদূষণ, যা জনজীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। বিভিন্ন নির্মাণকাজ এবং অন্যান্য উৎস থেকে অবারিত ধুলা নির্গমনের ফলে পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে। আবার ঢাকা জেলাসহ সারা দেশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ছাড়পত্রহীন এসব ইটভাটা মানছে না আবাসিক এলাকা, মানছে না কৃষি জমি। ইটভাটাগুলোতে বেআইনিভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে বায়ু। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে চলছে। জনজীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। বিশেষ করে শব্দদূষণ, বায়ূদূষণ ও পানিদূষণ সমস্যা সমাধান জরুরি। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক দেশের মতো আমাদের দেশেও পরিবেশ রক্ষার জন্য বেশ কিছু আইন রয়েছে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫), ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৮৯, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন ২০০১, ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০, পরিবেশ আদালত আইন ২০১০, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৬ এর উপধারা (১) এ বলা হয়েছে ‘স্বাস্থ্য হানিকর বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া বা গ্যাস নিঃসরণকারী যানবাহন চালানো যাইবে না বা ধোঁয়া বা গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করার লক্ষ্যে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনোভাবে উক্ত যানবাহন চালু করা যাইবে না।’ উক্ত বিধান লঙ্ঘনকারীকে প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড; দ্বিতীয় অপরাধের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। পরিশেষে বলব, পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি নগরায়ন হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যেতে হবে যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করে এবং পরিবেশ দূষণ না করে। সমন্বিত প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতাই দিতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর স্বদেশভূমি।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

 


আরো সংবাদ



premium cement