২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মাতৃভাষা চর্চা কী বলে ইসলাম

-

ইসলাম মাতৃভাষার প্রতি যথার্থ গুরুত্ব দিয়ে মায়ের ভাষাকে মর্যাদার উচ্চমানে সমাসীন করেছে। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূলকে আসমানী কিতাবসহ স্বজাতির ভাষায় পৃথবীতে পাঠিয়েছেন। যেমন হজরত দাউদকে আ: তাঁর নিজ ভাষা গ্রিকে যাবুর কিতাব নাজিল করেছেন। হজরত মূসাকে আ: তাওরাত হিব্রু ভাষায়, হজরত ঈসাকে আ: ইঞ্জিল সুরিয়ানি ভাষায়। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদের সা:-এর ওপর পবিত্র কুরআনে কারিম নাজিল করেছেন আরবের ভাষা আরবিতে। মহান আল্লাহ তায়ালার অগণিত কুদরতের নিদর্শনগুলোর মধ্যে ভাষা হলো অন্যতম একটি। ইবনে ফারিছ আল লুবাবির মতে, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং ভাষা শিখিয়েছেন। তিনি সর্বপ্রথম আমাদের আদি পিতা হজরত আদমকে আ: ভাষা শিক্ষা দেন। তা থেকে তার সন্তানরা ভাষা শিক্ষা লাভ করেছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তিনি আদমকে সব বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছিলেন (সূরা বাকারাহ : ৩২)। ভাষা সম্পর্কে কুরআন কারিমে আল্লাহ আরো এরশাদ করেনÑ দয়াময় আল্লাহ, শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। সৃজন করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা (সূরা রাহমান : ১-৪)। কুরআনে অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, তার আরো এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নির্দেশনাবলি রয়েছে (সূরা রুম : ২২)। ‘স্বজাতির ভাষা ছাড়া আমি কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি যাতে সে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে’ (সূরা ইবরাহিম : ৪)। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে কারিমে আরো এরশাদ করেন, আমি প্রত্যেক নবীকে আ: তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি তাদের সম্প্রদায়ের কাছে, যাতে তারা জাতিকে সুস্পষ্ট ভাষায় বোঝাতে সক্ষম হন (সূরা মারইয়াম : ৯৭)। কুরআনে আরো বর্ণনা করা হয়েছেÑ আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। যাতে তোমরা বুঝতে পার (সূরা ইউসূফ : ২)।
ইসলামী সাহিত্যের দিকপাল মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন, মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা করা জাতি হত্যারই নামান্তর। বাংলা ভাষা সম্পর্কে বিখ্যাত মনীষী আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. বলেন, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ মুসলমান এবং দেশের ভাষাও বাংলা। অতএব আলেমসমাজকে বাংলা ভাষা সম্পর্কে বিশাল জ্ঞান (পাণ্ডিত্য) অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে খালেদুন বাংলা ভাষা সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষাই তার মাতৃভাষায় হওয়া চাই, কেননা অপরিচিত ভাষার মাধ্যমেই শিক্ষা দান ও অর্জন অসম্পূর্ণ শিক্ষারই নামান্তর। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মাতৃভাষায় অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ইসলাম প্রচার-প্রসার, দ্বীন ও জাতির খেদমতের উদ্দেশ্যে ভাষাচর্চা করাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। সে হিসেবে প্রত্যেক মুসলমান, বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের কর্তব্য হলো মাতৃভাষা চর্চায় মনোযোগী হওয়া।
লেখক : প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার


আরো সংবাদ



premium cement