১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জুয়াড়িদের জন্য ইসলামের হুঁশিয়ারি

-


‘ক্যাসিনো’ শব্দটি ইতালিয়ান। ক্যাসিনো বলতে
বোঝায় যেখানে জুয়া, নাচ, গান ও বিভিন্ন খেলাধুলার সংমিশ্রণ থাকে। অভিধানে এর অর্থ হলোÑ নাচঘর; জুয়া খেলার ঘর; তাসখেলা; বা আমোদপ্রমোদের কক্ষ। বাংলা একাডেমির ‘ইংলিশ-বাংলা ডিকশনারিতে’ এর অর্থ বলা হয়েছে, ‘জুয়া ও অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত কক্ষ বা ভবন; সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নৃত্যশালা।’ জুয়াকে আরবিতে বলা হয় ‘আল-কিমার’ ও আল-মায়সির’। আর খিমার এবং মাইসির শব্দ দু’টি সমার্থবোধক। বাংলা ও উর্দুতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে জুয়া।
১৬৩৮ সালে ইতালির ভেনিসে সর্বপ্রথম জুয়ার মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসায় শুরু হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা গেছে। ইসলামের সূচনালগ্নের আগেও নবী করিম সা:-এর আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। তিনি সবগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইসলামী শরিয়তে জুয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়াকে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরগুলো শয়তানের কার্য ছাড়া কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ (সূরা মায়েদা : ৯০-৯১)।
আবদুুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ (দারেমি, হাদিস নং ৩৬৫৬)। কিছু লোকের কাছে মনে হতে পারে, জুয়া একটি লাভজনক ব্যবসায়। কিন্তু এর সামান্য কিছু লাভ থাকলেও ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে বহুগুণে বেশি। যেমনÑ সূরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘হে মুহাম্মদ! তারা আপনাকে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এ দুটোর মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর এতে মানুষের জন্য সামান্য কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোতে উপকারিতা অপেক্ষা ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।’
জাহেলি যুগে শুধু ধন-সম্পদের উপরেই জুয়া হতো না, বরং কখনো কখনো স্ত্রীদেরকেও জুয়ার সওদা হিসেবে পেশ করা হতো। যা ধীরে ধীরে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। লটারি, জুয়া খেলাকে আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ আনন্দ মনে হলেও এর সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভাব ভয়ঙ্কর। শুধু আমেরিকাতেই বছরে ৫৪ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় জুয়ার কারণে। প্রতি রাতে বা প্রায়ই ক্যাসিনোয় যাওয়া, গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে আসা, বা পকেট খালি করে বা পকেট ভরে নীড়ে ফেরা লোকগুলো জুয়াশক্ত আসল জুয়াড়ি। এরা এক ধরনের মানসিক রোগীও বটে। এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন।
জুয়া যখন একজন মানুষের চিন্তাভাবনা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ সব কিছু নীরবে গ্রাস করে নেয়, যখন বারবার চেষ্টা করার পরও সেই কাজ থেকে বিরত থাকা যায় না। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক, পারিবারিক বা সামাজিক সব সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে, তখন ব্যক্তি মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ ব্যবসায়ের নামে, কেউ লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা এর পেছনে ইন্ধন জোগায়। এ ক্ষেত্রে অনেকে জানে, তারা যা করছে সেটা হারাম বা অন্যায়। আবার অনেকে জানেই না যে, লটারি বা জুয়া খেলা হারাম।
আমাদের সমাজে লটারির নামে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, অলিতেগলিতে, শহরে কিংবা গ্রামে নামে-বেনামে জুয়ার রমরমা ব্যবসায় চলছে। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে জুয়াবাজির জন্য বিভিন্ন রকমের আসর বসে বিভিন্ন স্থানে। কোথাও হাউজি আবার কোথাও সবুজ টেবিল নামে। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বাজি ধরা হয়। প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার আরো বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। যেমনÑ ফ্লাস, পাশা, বাজি রেখে ঘোড়দৌড়, তাসখেলা, চাকতি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ প্রভৃতি। এগুলোর সবই কিন্তু হারাম।
আজ যদি ধর্মপ্রাণ মানুষেরা অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রতিবাদ না করে মুখ বন্ধ করে বসে থাকেন, সমাজের কর্তাব্যক্তিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর প্রতিরোধে কাজ না করেন, তাহলে প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের শাস্তি থেকে আমরা কেউই রক্ষা পাবো না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, তিন প্রকার লোকের জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেনÑ ১. সদা মদ পানকারী; ২. বাবা-মায়ের অবাধ্য; ৩. দাইয়ুস (মুসনাদে আহমদ : ৫৩৭২)। অন্যত্র আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’ (বায়হাকি : ৪৫০৩; মিশকাত : ৪৩০৪)।
বর্তমান ক্যাসিনো সংস্কৃতি মদ-জুয়াকে দিয়েছে দুর্ধর্ষ গতি। জুয়ার আধুনিক সংস্করণ ক্যাসিনোর মাধ্যমে পুরো জাতির অর্থ জমা হচ্ছে গুটিকয়েক জুয়াড়িদের লকারে। শত শত কোটি টাকা অচল হয়ে পড়ে আছে ওদের গুদামঘরে। এই টাকাগুলো কুক্ষিগত না হলে জাতীয় জীবনে আসতে পারত অনেক সমৃদ্ধি। ক্যাসিনো সংস্কৃতির কবলে পড়ে আজ জাতীয় অর্থনীতি হুমকির মুখে। সরকারের বহুবিধ উন্নয়ন ম্লান করে দিয়েছে জুয়াড়িদের এই ক্যাসিনো সংস্কৃতি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না’ (দারেমি : ৩৬৫৩; মিশকাত : ৩৪৮৬)।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement
কাঁঠালিয়ায় মাঠে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরে মৃত্যু সালমান খানের বাড়িতে গুলির ঘটনায় গ্রেফতার ২ আরো দুই সদস্য বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন রাবির নতুন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে অপরাধ না করেও আসামি হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত কোটালীপাড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত চুয়াডাঙ্গা দর্শনায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানের কবর জিয়ারত করলেন জামায়াত আমির

সকল