২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

হজ, ওমরাহ, মিকাত ও হুদুদে হারামের গুরুত্ব

-

হজ ও ওমরাহকারীদের প্রথমে মিকাত অতিক্রম করে মক্কা মোকাররমায় পৌঁছতে হবে। অতএব, মিকাত অতিক্রম করার আগে ইহরাম পরা বাধ্যতামূলক। মিকাতের বাইরে থেকে যে কোনো ব্যক্তি হজ, ওমরাহ বা ব্যবসাবাণিজ্য ও চাকরি ইত্যাদি যেকোনো প্রয়োজনের তাগিদে মক্কা মোকাররমা পৌঁছতে হলে তাকে মিকাত অতিক্রম করার আগে ইহরাম করতে হবে। পবিত্র খানায়ে কাবার রয়েছে একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পরিমণ্ডলীয় স্তর।
প্রথমত, কাবা শরিফ, যা কালো গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত। তার উত্তর পাশে রয়েছে অর্ধ গোলাকৃতির কাবা শরিফের অংশ হাতিম। তারপর হলো মাতাফ। বায়তুল্লাহ শরিফের চারদিকে তাওয়াফের স্থানকে মাতাফ বলে। যার ওপর সাদা মর্মর পাথর বসানো রয়েছে। এ পাথর প্রখর রৌদ্রেও গরম হয় না। তারপর মসজিদুল হারাম। চারতলা বিশিষ্ট কাবা শরিফের চারপাশে গোলাকৃতির বিশাল এলাকা নিয়ে দালানকে মসজিদুল হারাম বলে। এ মসজিদুল হারামকে নিয়ে পবিত্র কুরআন মজিদে একাধিক আয়াত রয়েছে। এখানে প্রায় আট লাখের বেশি লোক একসাথে কাবা শরিফের দিকে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারে।
হুদুদে হারাম : হুদুদে হারাম অর্থ হারামের সীমানা। মক্কা মোকাররমার চারদিকের নির্দিষ্ট সীমারেখার ভেতরের এরিয়াকে হারাম বলা হয়ে থাকে। হজরত জিবরাইল আ: হজরত ইবরাহিম আ:কে ওই স্থানগুলোর অবগতকরণ এবং সাথে সাথে পরিচয় করিয়ে হারামের সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। তারপর রাসূলে করিম সা: এই চিহ্নগুলো নির্মাণ করেন। পরে আমিরুল মোমিনিন হজরত উমর রা:-এর খিলাফত আমলসহ পরবর্তী সময়ে এসব সীমানা চিহ্ন পুনঃনির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সৌদি সরকার খুবই সুন্দর করে হারামের সীমানা পুনঃনির্মাণ করেছে। হারামের সীমানা হলোÑ কাবা শরিফ থেকে জেদ্দার দিকে ১০ মাইল, যেখানে সুমাশিয়াহ (হুদাইবিয়ার সন্ধির স্থান)-এর সন্নিকটে হারামের সীমানা চিহ্নস্বরূপ মিনার নির্মিত রয়েছে। কাবা শরিফ থেকে মদিনা মুনাওয়ারার দিকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তানইম নামক স্থানে কাবা শরিফ থেকে ইয়েমেনের দিকে ১১ মাইল দূরে ইজাআতে লবণ নামক স্থানে। ইরাকের দিকে ১১ মাইল, জাবানার দিকে ১৪ মাইল, তায়েফের দিকে আরাফাতের কাছাকাছি ১১ মাইল পর্যন্ত হারামের সীমানা।
মক্কা মোকাররমা শহর তথা এসব সীমারেখার ভেতর অর্থাৎ হারামের সীমানার ভেতর কোনো স্থলপ্রাণী শিকার বা হত্যা করা, ধরা, তাড়ানো, ঘাস ইত্যাদি কাটা হারাম। হজ বা ওমরাহকারী বা অন্য প্রয়োজনের তাগিদে হারামের সীমানার ভেতর প্রবেশ করতে হলে মনে রাখতে হবে, এখন আপনি হাকিমিনের দরবারের ঘাস পরিধির মধ্যে প্রবেশ করেছেন। এ সময় আদব, বিনয়, পবিত্রতা সবকিছু বজায় রাখতে ও থাকতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, নবী-রাসূলগণ যখন হারামের সীমানায় প্রবেশ করতেন, তখন খালি পায়ে চলাফেরা করতেন এবং খালি পায়ে হজের রুকনগুলো আদায় করতেন। এ কথা সত্য যে, মানুষ যদি নিজের মাথার ওপর ভর দিয়েও এ পবিত্র হারাম এরিয়ায় চলাফেরা করে তবুও আদবের হক আদায় করতে সক্ষম হওয়ার নয়। কাজেই যতদূর সম্ভব এ পবিত্র ভূমি হারামের মর্যাদার প্রতি হজ ও ওমরাহকারীদের সচেষ্ট থাকা চাই। আদব দেয়া যখন কঠিন তথা সম্ভবের বাইরে অন্তত বেয়াদবি যাতে না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখা অত্যাবশ্যক।
মিকাত : বহিরাগত লোকজন হজ ও ওমরাহ বা অন্য কোনো প্রয়োজনের তাগিদে মক্কা মোকাররমা প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে যে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধলেন সে স্থানকে মিকাত বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসলমানদের মক্কা মোকাররমা প্রবেশের জন্য পাঁচ স্থানকে মিকাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১. ইয়ালামলাম : আমাদের এ উপমহাদেশসহ আরো কতেক দেশের মিকাত; ২. জুূল-হুলায়ফা বা বীর আলী : মদিনা মুনাওয়ারা থেকে এবং সেই পথে মক্কা মোকাররমা আগমনকারীদের মিকাত; ৩. জাতে ইরাক : ইরাকবাসী এবং সেই পথে মক্কা মোকাররমা আগমনকারীদের মিকাত; ৪. জাহফা : মিসর ও সিরিয়াবাসী এবং সেই পথে মক্কা মোকাররমা আগমনকারীদের মিকাত; ৫. করন বা করনুল মানাজিল : নজদবাসী এবং সেই পথে মক্কা মোকাররমা আগমনকারীদের মিকাত। যদি কেউ হজ, ওমরাহ বা অন্য কোনো প্রয়োজনের তাগিদে মক্কা মোকাররমা প্রবেশের উদ্দেশ্যে মিকাতের বাইরে থেকে ইহরাম না বেঁধে মিকাতের ভেতর থেকে ইহরাম বাঁধে তবে তার দম ওয়াজিব হবে।
হিল্ল : হারামের সীমানার বাইরে তথা হুদুদে হারামের বাইরে অথচ মিকাতের অভ্যন্তরে যে ভূমি রয়েছে তাকে হিল্ল বলা হয়। হজ বা ওমরাহর উদ্দেশ্যে এ ইহরাম পরে মক্কা মোকাররমা পৌঁছে তাওয়াফ ও সায়ী সেরে ইহরাম মুক্ত হয়ে মক্কা মোকাররমা থেকে হারামের সীমানায় হুদুদের বাইরে গিয়ে ইহরাম পরে পুনঃ ওমরাহ করার রেওয়াজ আছে। সে অনুযায়ী হজ ও ওমরাহযাত্রীরা তানয়িম বা জেরানায় গিয়ে তথা হারামের সীমার বাইরে হিল্লে গিয়ে ইহরাম পরে ওমরাহর উদ্দেশ্যে পুনঃ কাবা শরিফের দিকে ফিরে আসেন। হারাম এরিয়ার পর হিল্লের মরতবা। কিন্তু হিল্লে গিয়ে ইহরাম পরা বা না পরা ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ ওমরাহ করা বা না করা। কিন্তু মিকাতের বাইরে গেলে পুনঃ মক্কা মোকাররমা ফিরে আসতে হলে ইহরাম পরা বাধ্যতামূলক। নতুবা দম ওয়াজিব হবে। যেমন মদিনা মুনাওয়ারা থেকে মক্কা মোকাররমা আসতে হলে জুল হুলায়ফা মিকাত থেকে ইহরাম পরে আসতে হবে। কিন্তু জেদ্দা হলো হিল্লের ভেতর অর্থাৎ হুদুদে হারামের বাইরে কিন্তু মিকাতের ভেতরে। অতএব, কেউ মক্কা মোকাররমা থেকে জেদ্দা গিয়ে মক্কা মেকাররমা ফিরে আসতে ইহরাম পরতেও পারে, নাও পারতে পারে। অর্থাৎ ওমরাহ করতেও পারে, না করতেও পারে।
জেদ্দা : জেদ্দা শহর মিকাতের ভেতর বলে মক্কা মোকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা শহরের পর জেদ্দার মরতবা রয়েছে। যেহেতু জেদ্দা হিল্লের মধ্যে। অর্থাৎ হুদুদে হারামের বাইরে। কিন্তু মিকাতের ভেতরে, আর এ জেদ্দায় মা হাওয়া আ:-এর কবর রয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। জেদ্দা শহরের কবরস্থানে ৫০-৬০ ফিট লম্বা আকৃতির তিন-চারটি কবর রয়েছে। এর মধ্যে একটি কবর মা হাওয়া আ:-এর বলে কথিত আছে।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল