২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত ব্যক্তি অভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি

 ড. ফেরদৌসী কাদরী
ড. ফেরদৌসী কাদরী - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনা একটি নতুন রোগ। পৃথিবী থেকে সহসাই বিদায় নিচ্ছে না এই ভাইরাস। তাই করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদেরকে ব্যক্তি হিসেবে অভ্যাসগত কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনা অন্যান্য ফ্লুর মতো কোনো রোগ নয়। এর চরিত্রও অন্য রকম। এই রোগের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে এখনো অনেক বিষয়ই আমাদের অজানা। তবে আশার কথা হলো, প্রতিনিয়তই এই রোগটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। আর গবেষণার ফলাফলও আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন আনতে পারলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার সম্ভাবনাও আছে।

নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও টিকা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী।
নয়া দিগন্ত : করোনা থেকে মুক্ত থাকতে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কতটুকু সচেতন থাকতে পারি?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : প্রথমত আমাদের নিজেদেরই সচেতন থাকতে হবে। প্রতিনিয়তই বলা হচ্ছে কিভাবে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারি। যদিও এটি একটি কঠিন ব্যাপার। তারপরেও নিজেকে এবং পরিবারকে নিরাপদ রাখতে কিছু নির্দেশনা তো পালন করতেই হবে। মনে রাখতে হবে করোনা থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের বেশ কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। 

নয়া দিগন্ত : এ ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার কতটা জরুরি?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : হ্যাঁ, মাস্ক ব্যবহার খুবই জরুরি। ব্যক্তিগতভাবে সবাইকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। জীবিকার তাগিদে যাদেরকে বাইরে বের না হলেই চলবে না তাদেরকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করে বাইরে বের হতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। 

নয়া দিগন্ত : অনেকেই তো বাইরে বের হলেও তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এটা কি সবার জন্য ঝুঁকি নয়?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : এটা অবশ্য সচেতনতার অভাবেই হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই সতর্কতার বার্তা বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তারপরেও অনেকেই সতর্ক হচ্ছেন না। এটা দুঃখজনক। এটাও বলা হচ্ছে যে, প্রয়োজনে বাসায় তৈরি করা কাপড়ের মাস্ক হলেও সেটি ব্যবহার করতে হবে। যদিও মাস্ক ব্যবহার এটা আমাদের অনেকেরই অভ্যাসেরও ব্যাপার। এখনো আমাদের অনেকের মধ্যেই অভ্যাসের সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি তো রয়েই যাচ্ছে। 

নয়া দিগন্ত : সরকার তো লকডাউনের মাধ্যমে বিভিন্ন জোনভিত্তিক এলাকা ভাগ করে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করে দিচ্ছেন। এটা কতটুকু সহায়ক হবে বলে আপনি মনে করছেন ?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : যদিও এটি একটি কঠিন কাজ, তারপরেও সরকার তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আর মানুষজনও তাদের জীবন এবং জীবিকা দুটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। তারপরেও সরকারের নির্দেশনা সবাইকেই মেনে চলতে হবে। অনেক বড় একটি ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলে কিছুটা অসুবিধা স্বীকার করতেই হবে। 
নয়া দিগন্ত : ধরুন, কেউ যদি করোনায় সংক্রমিত হয়েই যায়, তখন তার জন্য করণীয় কী?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : প্রথমত একজন করোনা পজিটিভ রোগীকে অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে সরে যেতে হবে। বিশেষ করে আলাদা ঘরে বা কক্ষে। কেননা একজন করোনা রোগী অন্য অনেক সুস্থজনকে সংক্রমিত করতে পারে। প্রধান ভয়ের কারণ মূলত এটিই। অন্যদিকে করোনা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীর শরীরে প্রথম দিকে কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই তার অজান্তেই সে অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে। তাই প্রথম কোনো লক্ষণ দেখা মাত্রই রোগীকে আইসোলেশনে নিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ তাকে আলাদা একটি কক্ষে গিয়ে থাকতে হবে। অন্যদের সংস্পর্শে আসা যাবে না। 

নয়া দিগন্ত : করোনার রিপোর্ট পটিজিভ হওয়ার পর অনেকে দুশ্চিন্তা কিংবা হতাশার কারণেই বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আসলে আমাদের করণীয় কী?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : করোনা পজিটিভ হলেও টেনশনের বা দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বরং তিনি নিশ্চিত হয়েই আরো বেশি সচেতন হতে পারেন। অন্যদের সংক্রমিত করার ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন। তবে হ্যাঁ, একটি বিষয় প্রায়ই শোনা যায়, করোনার রোগীরা মানসিকভাবে বেশি ভেঙে পড়েন। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, করোনা রোগীকে অবশ্যই মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে হবে। নিরাপত্তা মেনে বাইরে হাঁটাচলার ব্যবস্থা করতে হবে। টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বেশি বেশি দেখতে হবে। মন প্রফুল্ল থাকে এমন আলোচনা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে বেশি সময় দিতে হবে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় প্রতিদিন যে পজিটিভ বা আশাব্যঞ্জক খবর আসছে সেগুলো তাকে জানাতে হবে। তার মনোবল বৃদ্ধিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকা রাখতে হবে। 

নয়া দিগন্ত : করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সময় এবং সম্ভাবনা কতদূর?
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : সর্বশেষ যে খবর আছে তাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনার টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা দেখছেন টিকা বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৩৫টি ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাড়ছে আশা। টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে দেশে তা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে আইসিডিডিআরবি ট্রায়ালে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। 

নয়া দিগন্ত : আপনাকে ধন্যবাদ। 
অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী কাদরী : নয়া দিগন্ত এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।


আরো সংবাদ



premium cement