২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
একান্ত সাক্ষাৎকারে মাহবুবউল আলম হানিফ

‘পুনর্নির্বাচনের দাবি ভ্রান্ত ও হাস্যকর’

মাহবুবউল আলম হানিফ - সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সব মহলের আস্থা ও আকর্ষণ আরো বেড়েছে। সে জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার ব্যাপারে আমাদের একটি নির্দেশনা আছে। সে ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি ও সাম্প্রদায়িক শক্তি তথা জামায়াত ও মানবতাবিরোধী পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সুযোগ নেই। বিএনপির পুনর্নির্বাচনের দাবিকে ভ্রান্ত ও হাস্যকর আখ্যায়িত করে হানিফ বলেন, অবৈধভাবে জন্ম নেয়া বিএনপি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাই তারা নির্বাচনে ভোট কারচুপির মতো ঠুনকো ও অযৌক্তিক অভিযোগ তুলে আবার নির্বাচন দাবির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। আসলে এটি বিএনপি নেতাদের ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা মাত্র। তাদের অযৌক্তিক এই দাবি মেনে নেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। 

নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি নেয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচন, চলমান রাজনীতি, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলন এবং সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের জন্ম ১৯৫৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করেন ঈশ্বরদীর পাকশীতে। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে হন ভেড়ামারা থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। ১৯৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৯৯৬ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০২ সালে জেলা সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব দেয়া হয়। একই বছর দলের ১৮তম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কাউন্সিলেও তৃতীয়বারের মতো প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় দায়িত্ব পালন এবং দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যসহ বিভিন্ন ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে গত দু’টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের প্রস্তুতি কেমন

হানিফ : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সম্ভাব্য সময় আগামী অক্টোবরে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে তৃণমূলকে সর্বস্তরে সম্মেলনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই কারণে সব সময় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এই দলের নেতৃত্ব তৈরি হয়। আমরা সব সময় তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় কাউন্সিলের পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকি। সময় স্বল্পতা বা নানান জটিলতার কারণে হয়তো তা পরিপূর্ণভাবে পালন সম্ভব হয়ে ওঠে না। এবার যে সময় আমাদের হাতে আছে তাতে অক্টোবরের মধ্যে হয়তো সর্বস্তরে সম্মেলন সম্ভব হবে না। কিন্তু আমরা কাজ শুরু করেছি। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কাউন্সিল এই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব উপজেলা ও কিছু কিছু জেলার সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। যদি অক্টোবরেই আমাদের জাতীয় কাউন্সিল হয়ে যায় তবে তার পর আবার বাকি জেলাগুলোর কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। 

নয়া দিগন্ত : কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ে দলীয় কোন্দল আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে

হানিফ : না, আমরা সে রকমটি মনে করছি না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। সে জন্য এ দলের অভ্যন্তরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। এটিকে আমরা কোন্দলের মতো বড় করে দেখছি না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দেয়ার মতো অসংখ্য যোগ্য নেতা রয়েছে। সাংগঠনিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো সবাইকে স্থান দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে জন্য হয়তো কারো মনে রাগ, অনুরাগ থাকতে পারে। তবে সবাই আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আর কাউন্সিলের মাধ্যমে সেই ঐক্য আরো সুদৃঢ় হবে বলে আমি মনে করি। 

নয়া দিগন্ত : কাউন্সিলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে কি না

হানিফ : কাউন্সিল মানেই যে পরিবর্তন এ বিষয়টি ঠিক না। সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য কাউন্সিল আমাদের নিয়মিত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যকলাপেরই অংশ। এ কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন অনেক কিছুই হতে পারে। সেটি কোন লেভেলে হবে তা কাউন্সিলররাই সিদ্ধান্ত নেবে। সংগঠনকে গতিশীল ও শক্তিশালী করাই আমাদের কাউন্সিলের লক্ষ্য। আমাদের দলের গত তিনটি কাউন্সিল যথাসময়ে হয়েছে। আশা করি এবারো সেই ধারাটা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দলের অভ্যন্তরে আমরা সেটি ধরে রাখতে চাই। 

নয়া দিগন্ত : এবারের কাউন্সিলে কাদের গুরুত্ব দেয়া হবে 

হানিফ : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশের সব কিছু অর্জন। প্রতি কাউন্সিলের আগেই আমাদের লক্ষ্য থাকে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সব মহলের আস্থা আরো বেড়েছে। সে জন্য সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে নতুন সদস্যের ব্যাপারে আমাদের একটি নির্দেশনা আছে। সে ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত বা মাদক কারবারি ও সাম্প্রদায়িক শক্তি তথা জামায়াত ও মানবতাবিরোধী পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সুযোগ নেই। এসব কর্মকাণ্ডে যাদের সম্পৃক্ততা নেই কেবল তারাই আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। 

নয়া দিগন্ত : জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের বিগত নির্বাচনগুলোতে তৃণমূলে বিভিন্ন ধরনের কোন্দলের খবর এসেছে

হানিফ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তেমন কিছু ঘটেনি। তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্ত রাখা হয়। ফলে দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় কিছুটা বিভক্তি দেখা দেয়। আমরা আশা করছি উপজেলা ও জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে তার অবসান হয়ে যাবে। দল আরো শক্তিশালী হবে। 

নয়া দিগন্ত : মন্ত্রী-এমপিরা ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে নিজেদের বলয় তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছেন বলে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাদের শাস্তির কথা তেমন শোনা যায় না

হানিফ : কোনো রাজনৈতিক নেতা বা সংসদ সদস্য যদি তার এলাকায় বলয় তৈরি করে তাহলে সেটি তার জন্য লাভ হয় না। আর ব্যবস্থা না নেয়ার কথাটিও ঠিক নয়। কোনো ধরনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করে ক্ষমতাসীন দলের কেউ পার পায়নি। দলের কোনো কোনো এমপিকেও জেলে যেতে হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কাউকে কাউকে শোকজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন কমিটি থেকে অনেকে ছিটকে পড়ছেন। এ ছাড়া অভিযুক্ত অনেককে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এটি তো তাদের জন্য বড় শাস্তি। আর দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে অজনপ্রিয় ও অভিযুক্ত অনেককে তার পদ থেকে বাদ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো শাস্তির বিষয়টি দৃশ্যমান হয় না।

নয়া দিগন্ত : মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন শোনা যায়

হানিফ : এটা একান্তই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি সরকার পরিচালনার স্বার্থে যেকোনো সময়ই মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে পারেন। যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে সেখানে স্থান দিতে পারেন। 

নয়া দিগন্ত : দল ও সরকার একাকার হয়ে গেছে বলে সমালোচনা রয়েছে

হানিফ : না, বিষয়টি এমনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। একটি দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দলের নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হিসেবেও কাজ করে। আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে। আর দল বা সরকার জনগণেরই প্রতিনিধি। তাই সরকারের নানা কাজে দলের সম্পৃক্ততা তথা অংশীদারিত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। এখানে দল ও সরকার একাকার হয়ে যাওয়ার কথা বলার সুযোগ নেই। 

নয়া দিগন্ত : ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বলছে, কিন্তু টেকসই উন্নয়নের জন্য টেকসই গণতন্ত্র দরকার। বৃহত্তর বিরোধী দল ছাড়া কিভাবে সম্ভব

হানিফ : একটি বিষয় সবাইকে জানা উচিত। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশে যে বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে, সেই বিভাজনের রাজনীতির কারণে কিন্তু দেশের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরমভাবে দূরত্ব তৈরি হয়। আর সে জন্য জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আমাদের দেশে সঙ্ঘাতময় পরিবেশ ছিল। আর সঙ্ঘাতময় পরিবেশে কোনো দেশে কখনোই টেকসই উন্নয়ন করা যায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বহুবার চেষ্টা করেছিলাম যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে দেশটাকে এগিয়ে নেয়া যায়। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত পাঁচ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে তাদের দুঃশাসন, অপশাসন বা ব্যর্থতা যেটাই আমরা বলি এর কারণে দেশ অনেক বেশি পিছিয়ে গেছে। বাংলাদেশ চরম দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। ১২৫টি উগ্র মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের উত্থান হয়েছিল ওই পাঁচ বছরে। এরকম একটি পরিবেশে দেশ কখনোই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। দেশ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে ৫০০ ডলারের নিচে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল সেখান থেকে ১৬০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশ বর্তমানে নি¤œ মধ্যবিত্ত রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও জিরো টলারেন্সের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে এবং জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করছে। 

আমাদের অতীতের এই ব্যর্থতা কাটিয়ে আমরা দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বারবার বিএনপিকে অনুরোধ করেছিলাম ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত মেয়াদে দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের সাথে সহায়তামূলক একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করুক। আপনারা যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন কোনো কারণ ছাড়াই শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত যৌথভাবে এই বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো। প্রথমে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং পরে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা। ২০১৩ সালে বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পর সারা দেশে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল। যানবাহন পুড়িয়ে, রেললাইন উপড়ে আগুন দিয়ে, রাস্তাঘাট কেটে, গাছপালা কেটে, সারা দেশে সড়কব্যবস্থা ধ্বংস, মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে, পুলিশকে হত্যা করে একটা তাণ্ডবলীলা ও অরাজকতা চালায়। সেই অবস্থায় সরকারের তখন আর কী করার থাকতে পারে। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে এভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করলে তখন সরকার শুধু গণতন্ত্রের কারণে যদি এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিত, তা হলে দেশটি এত দিনে ধ্বংস হয়ে যেত। এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন নীলনকশার পরও শুধু দেশের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সব কিছু ভুলে তাদের সাথে সংলাপ করেছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা। সেই সংলাপের ফল হিসেবে তারা জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের ক্ষমা করেনি। তাদের চরম ভরাডুবি হয়। 

নয়া দিগন্ত : কিন্তু বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার সঙ্কুচিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে

হানিফ : আমাদের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই বোধটুকু থাকা দরকার, গণতন্ত্র মানেই এটা নয় যে আপনি রাজপথে মিছিল করার নাম করে গাড়ি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবেন, অন্যের মাথায় বাড়ি দেবেন, পেট্রল দিয়ে, বোমা মেরে উড়িয়ে দেবেন এটা কখনো হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে যখনই ব্যবস্থা নেয়া হলো তখন বলা হলো আমাদের গণতন্ত্র হরণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে যেকোনো সময় চাইলেই সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া উচিত এটি তাদের অধিকার। আওয়ামী লীগ সেই গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে; কিন্তু বিএনপির অতীতের যে রেকর্ড বা কর্মকাণ্ড তা হচ্ছে সভা-সমাবেশের নাম করেই তারা নাশকতা বা ধ্বংসলীলা শুরু করে। সে জন্য তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশ্বাস করে না। তবে এবারের জাতীয় নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর নেতাকর্মীরা বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা কোনো সভা সমাবেশ করার মতো লোক খুঁজে পায় না। এর দায় সরকারের নয়। 

নয়া দিগন্ত : এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই ৩০ ভাগ ভোট কেটে নেয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচন দাবি করছে বিএনপি। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন

হানিফ : আসলে বিএনপি তো কোনো রাজনৈতিক দলই নয়। এটি একটি প্লাটফর্ম। ক্ষমতা দখল করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ভেঙেচুরে ধরে নিয়ে গিয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধ উপায়ে। সে জন্য গণতান্ত্রিক ধারা তাদের পছন্দ নয়। তারা সব সময় অবৈধ কিছুই সন্ধান করে থাকে। সে জন্য ৩০ ভাগ ভোট কেটে নেয়ার মতো অবাস্তব অভিযোগ তুলছে। এ দেশে ভোট চুরির সূত্রপাতই করেছিল বিএনপি। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এ দেশে ১২০ ভাগ ভোট পড়েছিল। ১৯৯৪ সালে মাগুরায়, ২০০১ সালে ঢাকা-১০ আসনে কী নির্বাচন হয়েছিল, তা দেশবাসী জানে। তারা আজিজ মার্কা পুতুল নির্বাচন কমিশন তৈরি করে কী অবস্থা করেছিল, তা জনগণ ভুলে যায়নি। তাদের মুখে ভোট চুরির এসব কথা মানায় না। তারা এক দিকে বলছে কারচুপি হয়েছে। সে জন্য দলের মহাসচিব সংসদে যোগ দেননি। কিন্তু তার দলের বাকিরা সবাই শপথ নিয়েছে। বিষয়টি হাস্যকর। আসলে তারা রাজনীতি ও নির্বাচনে চরম ব্যর্থ হয়ে ভোটকে ইস্যু বানিয়ে টিকে থাকতে চাইছে। তাদের পুনর্নির্বাচনের দাবি ভ্রান্ত। পুনর্নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। 

নয়া দিগন্ত : সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলছে নাÑ বিএনপির এমন অভিযোগ কিভাবে দেখেন 

হানিফ : বিষয়টি ঠিক নয়। দেখুন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার কোনো মামলা দেয়নি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার। এর দায়ভার আমরা নিতে পারি না। আর বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উসকানি ও নির্দেশের কারণে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলা করেছে। এখানে সরকারের কোনো হাত নেই। আর দুর্নীতির অভিযোগে সাজা হওয়ায় তিনি জেলে রয়েছেন। দেশের আদালত তথা বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সরকার কখনোই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। আদালত চাইলে যেকোনো সময়ই তার জামিন হতে পারে। এরই মধে কয়েকটি মামলায় তো তার জামিন হয়েছেও। সরকার হস্তক্ষেপ করলে জামিন হলো কিভাবে? 

নয়া দিগন্ত : সংসদে বিএনপির এমপিদের ভূমিকাকে কিভাবে দেখছেন 

হানিফ : বিগত সংসদে বিএনপি না থাকলেও আমার মনে হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে গতবারের সংসদ বেশি কার্যকর ছিল। এই কার্যকরের কারণেই দেশের স্বার্থে অনেক আইন করা হয়েছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির গঠনমূলক ভূমিকা ও সমালোচনার কারণেই সংসদ অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল, জনগণের জন্য আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়েছে। এবার বিএনপি এমপিরা সংসদে যোগ দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় বক্তব্য রেখেছেন। তবে কোনো কোনো এমপি মীমাংসিত বিষয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে সংসদকে উত্তপ্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন। আমরা তা আশা করিনি। এটি বাদ দিতে হবে। তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে সরকারের ইতিবাচক কাজকে সমর্থন করে সংসদকে আরো প্রাণবন্ত করবেন সেটিই তাদের কাছে প্রত্যাশা। 

নয়া দিগন্ত : নির্বাচনের পর সরকারের শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। তাহলে কি কোনো টানাপড়েন চলছে 

হানিফ : না, মহাজোটে কোনো টানাপড়েন নেই। তবে চলার পথে অনেক সময় অনেক ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি বা কেউ ভুল বুঝতে পারে। এ ছাড়া রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও অনেক সময় অনেক কথা বলা হতে পারে; কিন্তু মহাজোটে টানাপড়েন আছে বলে আমরা মনে করি না। 

নয়া দিগন্ত : আপনাকে ধন্যবাদ। 

হানিফ : আপনাকেও।


আরো সংবাদ



premium cement