২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুসলিম ঐক্য ও মধ্যপন্থার জন্য কাজ করছে এমডব্লিউএল

মুসলিম ঐক্য ও মধ্যপন্থার জন্য কাজ করছে এমডব্লিউএল - ছবি : নয়া দিগন্ত

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি, মধ্যপন্থার বিস্তার, চিন্তা ও কৌশলে সমন্বয় এনে অভিন্ন উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে পবিত্র মক্কাভিত্তিক সংগঠন মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ (এমডব্লিউএল)। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইসলামি স্কলারদের একটি ফোরামে ঐক্যবদ্ধ করে সবার অনুসরণের জন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সামনে ধারণা ও কৌশল উপস্থাপন করতে চায় এই সংস্থা। একই সাথে মুসলিম উম্মাহর তারুণ্য ও যুবশক্তি যাতে চিন্তার বিকৃতির শিকার না হয়, সে জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে ভূমিকা রাখবে এমডব্লিউএল।

গত ২৭ থেকে ২৯ মে পবিত্র মক্কায় মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের উদ্যোগে ‘ভ্যালু অব সেন্ট্রিজম অ্যান্ড মডারেশন’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষে নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন আয়োজক সংস্থার ইংরেজি পত্রিকা দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ জার্নাল-এর সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মক্কা নগরীর প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন।

বিশ্বের ১৩৯টি দেশের ২৭টি ধর্মীয় শাখা ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ১২০০ ইসলামি ব্যক্তিত্ব এবার মক্কা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এতে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি ড. এনামুল হক চৌধুরি, শোলাকিয়ার ইমাম শায়খ ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি জেনারেল আহমদ আবদুল কাদের, আহলে হাদিসের সেক্রেটারি জেনারেল শহীদুল্লাহ খান মাদানি, বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব কারি মোহাম্মদ ইউসুফ, ইসলামি এনজিও ব্যক্তিত্ব মাওলানা ফারুক আহমদ প্রমুখ।

সম্মেলনের শেষে মক্কা ডকুমেন্ট নামে একটি দলিল গ্রহণ করা হয়। ইসলামি দেশগুলোর ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সহ-অবস্থানের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান বা মূলনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য এ দলিলটি উপস্থাপন করা হয়। মানব সম্প্রদায়ের জন্য শান্তি ও সংহতি অর্জন করা এই দলিলটি গ্রহণের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয়।

জনাব জাকির হোসেনের সাক্ষাৎকারে সম্মেলনের লক্ষ্য ও এর অর্জন এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়। নিচে প্রশ্নোত্তর আকারে তার সাক্ষাৎকারটি নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো-

প্রশ্ন : মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ এখন বিশ্বব্যাপী কী ভূমিকা পালন করছে?
জাকির হোসেন : মুসলিম বিশ্ব লিগ মক্কায় পবিত্র নগরীভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি ইসলামি সংগঠন। এটি ইসলামের যথার্থ ধারণা এবং তার সহনশীল নীতিগুলো উপস্থাপন করে, মানবিক সহায়তা প্রদান করে, সংলাপে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে এবং সবার মধ্যে সহযোগিতাকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া মুসলিম বিশ্ব লিগ সব সংস্কৃতি ও সভ্যতার ইতিবাচক উন্মুক্ততা বজায় রাখা আর ইসলাম ও উম্মাহর মধ্যকার পারস্পরিক বার্তাকে উপলব্ধি করার জন্য সংযমের পথ অনুসরণ করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করে। চরমপন্থা, সহিংসতার পথ পরিত্যাগ করে শান্তি-ন্যায়বিচার ও সহনশীলতাসম্পন্ন বিশ্ব গড়তে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই সংগঠন বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন : মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের এবারের সম্মেলনটি আয়োজনের লক্ষ্য এবং এর অর্জন সম্পর্কে কিছু বলবেন?
জাকির হোসেন : মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের এবারের সম্মেলনটির আয়োজনের লক্ষ্য ছিল মুসলিম বিশ্ব এবং অমুসলিম দেশগুলোর মুসলিম চিন্তার সব শাখার স্কলারদের সমবেত করে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গাইড লাইন সৃষ্টি করা, যাতে বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর চিন্তার কারণে আজ যে চরমপন্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃতি ঘটছে তা রোধ করা সম্ভব হয়। আর ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার দিকে সবাইকে নিয়ে আসা যায়। এই লক্ষ্যে একটি ফোরাম গঠন করার পরিকল্পনা ছিল। যে ফোরাম উম্মাহর বিষয়ে হবে স্বীকৃত সংস্থা। তাদের বক্তব্য ওআইসিকে দেয়া হবে, যাতে তা সদস্য দেশগুলোতে সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া যায়। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সেক্রেটারি জেনারেল ড. আবদুল করিম আলিসার নেতৃত্বে সুন্দরভাবে এবারের সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এর উদ্বোধন ও সমাপনী অধিবেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের ধর্মমন্ত্রী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও খ্যাতনামা স্কলাররা অংশ নিয়ে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন। মুসলিম দুনিয়া এখন যেসব সমস্যার মোকাবেলা করছে তার উত্তরণের জন্য তারা সুপারিশ রেখেছেন। এসবের সমন্বয় করে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে মক্কা ডকুমেন্ট গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন : মক্কা ডকুমেন্টে কোন কোন বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে?
জাকির হোসেন : মক্কা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ইসলামি বিশ্বের আধ্যাত্মিক রেফারেন্সের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। দলিল গ্রহণকারী সব অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, তারা সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে মুসলিম বিশ্ব এবং মানবতার উপকারের জন্য সব ধর্মীয় উপাদানগুলোর সাথে যোগাযোগ, ভালোবাসার সেতু নির্মাণ, শান্তি ও মানবতার একত্রীকরণ কামনা করবেন এবং অবিচার, সভ্যতার সংঘর্ষ এবং ঘৃণাকে প্রত্যাখ্যান করবেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা জোর দেন যে, ইসলামি দেশগুলোর অনুমোদনপ্রাপ্ত পণ্ডিতদের নিয়ে ইসলামি উম্মাহর পক্ষ থেকে কথা বলার একমাত্র সংস্থা হতে হবে। কারণ সাধারণ ধর্মীয় ও মানবিক কর্মকাণ্ড তথা সবার উপকারের জন্য বর্জন, বর্ণবাদ বা বৈষম্য ব্যতিরেকে অংশগ্রহণের প্রয়োজন।

এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীরা ঐতিহাসিক দলিলের ভিত্তি, লক্ষ্য এবং নীতির ওপর আলোকপাত করে নিশ্চিত করেন যে, সংস্কৃতি, ধর্ম, বিশ্বাস এবং ভাষাগত বিভিন্ন বৈচিত্র্যের মধ্যেও মানুষ একক উৎস থেকে সৃষ্ট এবং তারা মানবিকভাবে সমান। অংশগ্রহণকারীরা শ্রেষ্ঠত্ববাদী দাবির নিন্দা করেন এবং একই সাথে বর্ণবাদী অভিব্যক্তি এবং স্লোগানগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, বর্ণ ও সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্র্য একটি স্বর্গীয় ব্যবস্থায় যা সব মানবিক সম্প্রদায়ের দ্বারা গৃহীত হওয়া উচিত। মক্কা দলিলে জোর দেয়া হয়েছে যে, মানব ও ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সত্ত্বেও দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষকে কোনোভাবে সমর্থন করা যায় না। তবে একটি ইতিবাচক সভ্যতার অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার সেতু নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে।

প্রশ্ন : সন্ত্রাসবাদ আর ইসলামফোবিয়া- এ দুটি মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রধান সমস্যা। এ ব্যাপারে সম্মেলন থেকে কী ভূমিকা নেয়ার কথা বলা হয়েছে?
জাকির হোসেন : সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীরা অন্যদের সাথে সঠিক বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর সর্বোত্তম উপায় হিসেবে, সাধারণ শনাক্তকারী বিষয়গুলোকে চিনতে, সহ-অবস্থানের পথে বিদ্যমান বাধা অতিক্রম করতে এবং শান্তিতে বসবাসের জন্য সভ্যতার সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। মক্কা দলিলে তথাকথিত ‘ইসলামফোবিয়া’ বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, এটি ইসলামের জ্ঞান, এর সভ্যতার সৃজনশীলতা এবং এর সর্বোচ্চ লক্ষ্য সম্পর্কে জানার অভাবের কারণেই ঘটছে। ইসলামের প্রকৃত স্বীকৃতির জন্য সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন রয়েছে, যেটি আগে থেকে সৃষ্ট ভুল ধারণার বিপরীতে সঠিক এবং যথাযথভাবে ইসলামকে উপলব্ধি করতে সহায়ক হবে। মক্কা দলিলে ঘৃণা, সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও সভ্যতার সংঘর্ষের প্রচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও, এ দলিলে ধর্মীয় এবং জাতিগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টির কারণ হ্রাস এবং নির্মূল করার জন্য সব ধরনের কাজ এবং ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হয়। দলিলটিতে উপাসনার স্থানগুলোতে হামলার নিন্দা করে এ ধরনের হামলার ব্যাপারে প্রতিকারমূলক আইন তৈরির কথা বলা হয়, যাতে অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। দলিলটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রত্যাখ্যান করে সন্ত্রাসবাদ, অবিচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে চরমপন্থীদের ধর্মীয় মতবাদের সহিংসতা, যুদ্ধ, সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতার জন্য যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করার মতো ব্যাখ্যা এবং ধর্মের বিপজ্জনক অপব্যবহারকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

প্রশ্ন : সভ্যতার দ্বন্দ্ব তত্ত্বকে এখনকার উত্তেজনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। এ ব্যাপারে সম্মেলনে কী আলোচনা হয়েছে?
জাকির হোসেন : মুসলমানরা ইতিহাস জুড়ে মানব সভ্যতাকে যে সমৃদ্ধ করেছে সেটি অংশগ্রহণকারীরা পরিসংখ্যান দিয়ে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, মুসলমানরা বর্তমান নৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সঙ্কট সমাধানে মানবতার জন্য প্রয়োজনীয় বর্তমান সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও সভ্যতাকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে। মক্কা দলিলে সভ্যতার দ্বন্দ্ব এবং অন্যের ভীতি প্রদর্শনের তত্ত্বকে বর্ণবাদ ও নেতিবাচক সাংস্কৃতিক আধিপত্য দ্বারা সৃষ্ট বিচ্ছিন্নতা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্ব-বিচ্ছিন্নতা ঘৃণাকে বাড়িয়ে তোলে এবং রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে শত্রুতার উত্থান ঘটাতে কাজ করে। ‘মক্কা দলিলে’ মানব মূল্যবোধ লঙ্ঘন এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মতো ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়। এতে বলা হয়, সাধারণ মানবিক ধারণা অনুসারে নৈতিক, পরিবেশগত ও দেশীয় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা এবং সর্বাধিক সামাজিক অনুশীলন উন্নয়নের জন্য উন্নতমানের নৈতিক মূল্যবোধগুলোকে একত্র করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ইসলামি কমিউনিটির নিরাপত্তা দান এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের তত্ত্বগুলোর ব্যাপারে তাদের সজাগ রেখে ইসলামের সত্য ধারণার স্বীকৃতি দেয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা ইসলামিক ন্যায়বিচারের নীতি দ্বারা নির্ধারিত রাষ্ট্রের অধিকারকে সামগ্রিক নাগরিক অধিকার হিসেবে সম্মান করার আহ্বান জানান এবং সব নাগরিকের রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা, রাষ্ট্রের পবিত্রতা রক্ষা করার সাথে সাথে নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রশ্ন : সম্মেলনে যে মধ্যপন্থার ওপর জোর দেয়া হয়েছে সেই মধ্যপন্থার বৈশিষ্ট্য কী রকমের হবে?
জাকির হোসেন : মধ্যপন্থা বলতে সম্মেলনের আলোচনাকারীরা ধর্মকে বর্জন এবং ধর্ম নিয়ে প্রান্তিক ধরনের বাড়াবাড়ির মধ্যম অবস্থাকে বুঝিয়েছেন। মহান আল্লাহ কোরআনে মুসলমানদের মধ্যপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর রাসূল সা: ও তাঁর উম্মতদের মধ্যপন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। এই মধ্য পন্থার অংশ হিসেবে মক্কা দলিলে নারীর বৈধ ক্ষমতায়ন নীতিগুলোকে গ্রহণ করে ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকার প্রান্তিককরণ ও অবমূল্যায়ন বা তার সুযোগবঞ্চিত করার প্রতিকারের ওপর জোর দেয়। এতে বলা হয়, নারীর উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং বৈষম্য ব্যতিরেকে যথাযথ বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই নথিতে তরুণ মুসলমানদের পাঁচটি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়- ধর্ম, স্বদেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ভাষা। আর একসাথে বর্জন বা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত ধারণার শিকার হওয়া থেকে সুরক্ষা থাকার ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। দলিলে সভ্যতার সংঘর্ষের ধারণা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকৃতিমূলক ধারণা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার ওপর জোর দেয়া হয়। আর উল্লেখ করা হয়, মুসলমান তরুণদের ইসলামের বাস্তব বিধান অনুযায়ী সহনশীলতা, শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান এবং সংহতির মূল্যবোধে সজ্জিত করা উচিত। দলিলটিতে এই ফোরামে যুবসমাজের বিষয়গুলোকে সম্পৃক্ত করা উচিত বলেও উল্লেখ করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবে সব ধরনের গণহত্যা, জাতিগত নিশ্চিহ্নকরণ, বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুতি, মানবপাচার এবং অবৈধ গর্ভপাতের নিন্দা জানানো হয়েছে।

প্রশ্ন : মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ তো বেসরকারি সংগঠন। এটি রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে সুপারিশ কিভাবে বাস্তবায়ন করবে?
জাকির হোসেন : মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা একটি বিশ্ব ফোরাম গঠনে ইসলামি উদ্যোগের ব্যাপারে সুপারিশ করেন। এ ফোরাম প্রয়োজনীয় সুপারিশ গ্রহণ করে তা ওআইসির সচিবালয়ে জমা দেবে। ওআইসি তাদের ফোরামে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো সদস্য দেশের সরকারকে দেবে। সদস্য দেশের সরকারগুলো এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সম্মেলনে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষভাবে রাজনৈতিক আধিপত্যের ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা বা সাম্প্রদায়িক ধারণাগুলোর বিপণনের লক্ষ্যে এ ধরনের হস্তক্ষেপ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। ফলে স্কলারদের সুপারিশে রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না বলে তা বাস্তবায়নে সরকার কোনো বাধা অনুভব করবে না।

উল্লেখ্য, মক্কার মসজিদুল হারামসংলগ্ন হোটেল জেবেল ওমর হিলটনের আবদুর রহমান ফকিহ কনভেনশন সেন্টারে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রতিনিধি হিসেবে মক্কার গভর্নর ও খাদেমুল হারাইনের উপদেষ্টা প্রিন্স খালেদ আল ফয়সল সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ, সৌদি গ্রান্ড ইমাম শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শায়খ, ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসুফ বিন আল হুতাইমিম, মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সৌদি আইন মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আলিশা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফতোয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান, আল্লামা শেখ আবদুল্লাহ বিন ভাইয়া ও মিসরের গ্রান্ড মুফতি ড. সাউকি আল্লাম।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement