১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিটকয়েন : ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরিতে যেভাবে খনি হয়ে উঠেছে কাজাখস্তান

-

চীন গত বছর যখন হঠাৎ করেই ক্রিপ্টোকারেন্সির খনিগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়, তখন থেকেই প্রতিবেশি কাজাখস্তানে এই ব্যবসা দ্রুত প্রসার লাভ করতে শুরু করে।

বিটকয়েন, যা ক্রিপ্টো মুদ্রা নামে পরিচিত তার খনি ব্যবসায় বা কয়েন মাইনিং-এ মধ্য এশিয়ার এই দেশটি এখন দ্বিতীয় স্থানে। এই ব্যবসায় প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। তবে কাজাখস্তানের এই মাইনিং ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠলেও এই মাইনিং ব্যবসা যেগুলোকে এক অর্থে খনি বলা যায়, সেগুলো চালাতে যে বিশাল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয় তা এখন দেশটির কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর ওপর বিরাট চাপ তৈরি করছে এবং তা বড় ধরনের উদ্বেগেরও জন্ম দিচ্ছে।

বিটকয়েন মুদ্রার এই খনিগুলো কেমন? সেখানে মুদ্রার মাইনিং হয় কীভাবে?

নতুন এই ব্যবসায় নেমেছেন মলডির শুবাইয়েভা। ধুলো ভরা জমির ওপর নির্মাণ প্রকৌশলী আর নির্মাণ শ্রমিকরা গড়ে তুলছেন তার নতুন বিটকয়েন মুদ্রার খনি।

কেতাদুরস্ত পোশাক আর বড়সড় হলুদ রংএর সানগ্লাস পরে ৩৫ বছর বয়সী মলডির নিজের খনির নির্মাণকাজ নিজেই তদারকি করছেন। ধারণা করা হয় মলডির কাজাখস্তানের প্রথম নারী বিটকয়েন খনি মালিক।

বিটকয়েন খনির ব্যবসায় নারীও
কাজাখস্তানে ক্রিপ্টোকারেন্সির যে নতুন ব্যবসা দ্রুত জমে উঠেছে, তাতে ঝাঁপিয়ে পড়া নতুন ব্যবসায়ীদের একজন মলডির শুবাইয়েভা। আলমাটি শহরে তার নতুন খনি তৈরির কাজের সমস্ত খুঁটিনাটি তিনি নিজেই তদারকি করছেন।

পুরুষ অধ্যুষিত এই ব্যবসার জগতে মলডির বেশ ব্যতিক্রমী একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। দেশটির বিটকয়েন মাইনিং ব্যবসায় তিনি প্রথম সারির একজন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠায় তার প্রতি ব্যবসায়ী মহলের সম্মানও বেড়েছে।

তিনি বলেন, "গত চার বছর আমার জীবনের প্রায় সমস্ত সময়টা আমি এই ব্যবসার পেছনে ব্যয় করেছি। আমি এমনকি রাতে অফিসেও ঘুমিয়েছি।


পাঁচ বছর আগে মলডির বিটকয়েন মাইনিং ব্যবসায় আগ্রহী হন এবং বাসায় বসে তার ভাইয়ের সাথে এই মুদ্রার মাইনিং শুরু করেন। এরপর তিনি বড় বড় খনি তৈরির কাজে নামেন এবং তার বেশ কিছু খনি অন্য খদ্দেরদের ভাড়া দিতেও শুরু করেন।

তিনি বলছেন, কাজাখস্তানে এই বিটকয়েনের ব্যবসা এবং একই সাথে তার নিজের ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিশেষ করে গত বছরে ব্যবসার ঊর্ধ্বগতিতে কোনো সময়ই ভাঁটা পড়েনি। প্রতিদিন আমার সকাল শুরু হয় বিটকয়েনের দাম কতটা বেড়েছে তা দেখার মধ্যে দিয়ে। যখন আমি দেখি একেকটা বিটকয়েনের দাম ৫০ হাজার ডলারে পৌঁছেছে-আমি উৎসাহে টগবগ করতে থাকি! আমার রক্তেও অ্যাড্রিনালিনের মাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।

বিটকয়েনের দাম নাটকীয়ভাবে ওঠানামা করে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে একটা বিটকয়েন মুদ্রার মূল্য ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার। আর মাত্র এক বছরের মধ্যে একটা কয়েনের দাম লাফিয়ে উঠে গেছে ৬৫ হাজার ডলারে। তবে এরপর বিটকয়েনের দাম কিন্তু আবার ব্যাপকভাবে পড়েও গেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় একটা মুদ্রার দাম এখন ৩৫ হাজার ডলার। কাজেই বুঝতেই পারছেন এই বিটকয়েনের বাজার কতটা অস্থির- এই ব্যবসা কী ধরনের অনিশ্চিত একটা জুয়ার মতো। কিন্তু এরপরেও কাজাখস্তানে মলডির এবং তার মত অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি খনি মালিকরা এই ব্যবসা থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ কামিয়েছেন।

ডিজিটাল স্বর্ণভাণ্ডারের খনি আসলে কী?
বিটকয়েন, এথেরিয়াম, লাইটকয়েন এসব নামধারী যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার তৈরি হয়েছে, সেগুলো তৈরির পদ্ধতিই হল ক্রিপ্টো-মাইনিং বা ক্রিপ্টোমুদ্রার খনন। কিন্তু এই খনিগুলো কী ধরনের? কেনই বা এগুলোকে খনি বলা হচ্ছে? কারণ এগুলো তো ডিজিটাল মুদ্রা। এগুলো তৈরিতে খননের কী ভূমিকা?

ডিজিটাল মুদ্রা কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না। কারণ এই মুদ্রার লেনদন হয় ভার্চুয়াল জগতে। স্বেচ্ছা উদ্যোগে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচালিত বিশাল একটা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিটি পেমেন্ট এবং মুদ্রার লেনদেন তত্ত্বাবধান করে, সেগুলোর ওপর নজর রাখে।

এই মুদ্রার হিসাবনিকাশ অত্যন্ত জটিল। কাজেই এই জটিল হিসাবনিকাশের জন্য প্রচুর কম্পিউটার শক্তির প্রয়োজন হয়। এই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক জটিল হিসাবনিকাশ করে একেকটি ডিজিটাল মুদ্রা তুলে আনে।

অনেক কঠিন হিসাবনিকাশের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয় বিটকয়েনের মতো একেকটা ক্রিপ্টোমুদ্রা- কাজেই এগুলো খুঁড়ে তুলে আনতে প্রয়োজন কম্পিউটারের শক্তিশালী গাণিতিক মেধা।

আর বিটকয়েন তুলে এনে এই বাণিজ্যিক পদ্ধতিকে যারা চালু রাখতে সাহায্য করে, বিটকয়েন জগতকে মুদ্রা সরবরাহ করে, তাদের কাজের বিনিময়ে এই পদ্ধতি তাদের পকেট ভরার সুযোগ করে দেয়। যদিও সেই উপার্জনের কড়ি থাকে ভার্চুয়াল জগতেই।

মলডিরের মত উদ্যমী বিটকয়েন ব্যবসায়ীদের উৎসাহে কাজাখস্তান এখন বিটকয়েন মাইনিং-এ আমেরিকার পরই নিজের স্থান করে নিয়েছে। বিটকয়েন মুদ্রা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে বিশ্বব্যাপী যে বিটকয়েন তৈরি হচ্ছে, সেই মুদ্রা ভাণ্ডারের প্রায় ১৮% শক্তির উৎস এখন কাজাখস্তান।

কাজাখস্তানে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে ২০১৯ সাল থেকে। এর পেছনে সবচেয়ে সহায়ক শক্তি ছিল দেশটির সস্তা, সহজলভ্য ও প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুতের সরবরাহ। পাশাপাশি সরকারের ক্রিপ্টোমুদ্রা বান্ধব নীতিমালা।

কিন্তু এই ব্যবসা হু হু করে বাড়তে শুরু করে ২০২১ সালের গ্রীষ্ম মরশুম থেকে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল প্রতিবেশি চীন সেসময় দেশটিতে সবধরনের ক্রিপ্টোমুদ্রার খনিগুলো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়।

এরপরই দেশটিতে ব্যাংএর ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে বিটকয়েন খনি প্রতিষ্ঠান। সেখানে বসতে শুরু করে হাজারে হাজারে কম্পিউটার।

বিটকয়েন মুদ্রা তৈরির বা খননের জন্য কিছু কোম্পানি কাজাখস্তানে আগে থেকেই গড়ে উঠেছিল। কিন্তু চীনে খনিগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজাখস্থানে খনি তৈরির জোয়ার এল।

কাজাখস্তানের এই বিশাল খনিগুলোতে কী হয়?
কাজাখস্তানে এই শিল্পের কী ধরনের বিস্তার ঘটেছে, তার আঁচ পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে আলমাটি থেকে ৮০০ মাইল দূরের বিচ্ছিন্ন শহর একিবাসটুজে। শহরটিতে সবসময়ই দমকা হাওয়ার প্রাদুর্ভাব।

কিন্তু এখানেই রয়েছে এতদিন পর্যন্ত যেটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির খনি বলে পরিচিত ছিল, যেটি এনেজিক্স কোম্পানির নির্মিত একটি বিটকয়েন খনি।
বিশাল এই খনির ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই আপনার নজরে যেটা আসবে সেটা হল সেখানকার প্রচণ্ড আওয়াজ।

ভেতরে একসাথে চলছে হাজার হাজার খবুই শক্তিশালী কম্পিউটার। কম্পিউটারগুলোর ভেতরের পাখাগুলো পূর্ণগতিতে একসাথে ঘুরছে শোঁ শোঁ শব্দ তুলে।

বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই খনির অন্য প্রান্তে ঘুরছে তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্রকাণ্ড একটা পাখার বিশাল বিশাল ব্লেডগুলো। সেখানে থেকে তৈরি হচ্ছে নিচু মাত্রার একটা শব্দ- যা আওয়াজ তুলছে একনাগাড়ে - সর্বক্ষণ।

"খনির ভেতরে সর্বক্ষণ চালু থাকা এই যন্ত্রগুলোর অনবরত আওয়াজ আমাকে চাঙ্গা রাখে, উদ্দীপ্ত করে - কারণ আমার কাছে এই শব্দ হল অর্থ প্রবাহের শব্দ- ডিজিটাল অর্থ উপার্জনের শব্দ-সংকেত,'' এক মুখ হাসি নিয়ে বললেন ওই কেন্দ্রের মালিক ৩৪ বছর বয়সী ইয়েরবোলসিন।

মলডিরের মতো, ইয়েরবোলসিনও কয়েক বছর আগে বিটকয়েনের আগ্রহী হন এবং শুরু করেন ছোটখাট পরিসরেই।

প্রথমে ইয়েরবোলসিন তার খনি বসিয়েছিলেন ছোট্ট একটি গ্যারেজে। তখন সেখানে তিনি বসিয়েছিলেন মাত্র কয়েকটি কম্পিউটার। সেখানে থেকে শুরু করে আজ তার খনির আয়তন বেড়ে বিশাল হয়েছে। ধাতু দিয়ে তৈরি আটটি বিশাল একচালা খনি ঘরের ভেতরে তিনি বসিয়েছেন ৩০ কোটি ডলার মূল্যের যন্ত্রপাতি। তার মালিকানার এই খনিতে কাজ চলে সপ্তাহে সাতদিন, ২৪ ঘণ্টা- সেখানে বিরামহীন তৈরি হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি।

'দেশের জন্য এই কাজ খুবই গর্বের'
এই খনিতে কাজ করেন দেড়শ' কর্মী, যাদের কাজ ২৪ ঘণ্টা এই যন্ত্রগুলোকে সচল ও কর্মক্ষম রাখা। কয়েক ডজন প্রকৌশলী কাজাখস্তানের এই মরু অঞ্চলে থাকেন এবং এই খনিতে কাজ করেন একটানা ১৫ দিনের শিফটে।

এই অতি শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোর পরিচালনার মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল মুদ্রা।

আলমায মাগাযের বয়স ১৯। তিনি কাজ করেন বারো ঘণ্টার শিফটে। তার প্রধান কাজ হল কারখানা ঘরগুলো সম্পূর্ণ ধুলাবালিমুক্ত রাখা। ধুলাবালি কম্পিউটারের কার্যক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। কম্পিউটারের গোলমাল দেখা দিলে আলমাযকে তা সারাতে হয়। যত দ্রুত সম্ভব কম্পিউটারকে আবার সচল করার গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে।

তিনি স্বীকার করলেন এইসব যন্ত্রপাতির কাজ সম্পর্কে প্রথমদিকে তার কোনো ধারণাই ছিল না।

তিনি বলেন, এখানে আসার আগে বিটকয়েন সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না, আমি জীবনে বিটকয়েনের নামও শুনিনি।

আলমায ও তার সহকর্মীদের কাজের ওপর নজর রাখেন ইয়েরবোলসেন। আলমাটিতে বসে সিসিটিভি ফুটেজের বিশাল এক ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি তাদের কাজের নজরদারি করেন।

"কাজাখস্তান এখন বিশ্বের ক্রিপ্টোকারেন্সি দুনিয়ায় যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের," বলছিলেন ইয়েরবোলসেন।

"আমরা দেশপ্রেমিক। আমরা চাই আমাদের দেশের পতাকা আরও উঁচুতে তুলে ধরতে!"

পরিবেশ ঝুঁকিতে-
তবে কাজাখস্তানের এই সাম্প্রতিক সাফল্যে সবাই গর্বিত নয়। পরিবেশবাদীরা প্রায়ই সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠছেন যে এই মুদ্রার মাইনিং-এর জন্য বিশাল পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটকয়েনে বিদ্যুত ব্যবহারের সূচক বলছে ইউক্রেন বা নরওয়ের মতো দেশে সারাদেশের জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় তার থেকেও বেশি বিদ্যুতের দরকার হয় বিটকয়েন মাইনিং করতে।

এই জ্বালানির কতটা নবায়নযোগ্য তা জানা নেই, তবে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডানা ইয়েমলিওনক বলছেন যে, কাজাখস্তানে ব্যবহৃত জ্বালানির মাত্র ২% আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এখানে জ্বালানি মূলত কয়লা-নির্ভর - বিশেষ করে তাপ ও বিদ্যুতের জন্য যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তার উৎস কয়লা।

ডানা থাকেন কারাগান্ডা নামে একটি শহরে, যেখানে কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় কয়লাখনি রয়েছে। তার সন্দেহ, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং থেকে দেশটি যে সম্পদ আয় করছে তার থেকে দেশটিকে পরিবেশের জন্য যে মাশুল দিতে হচ্ছে তা অনেক বেশি।

"প্রতিদিন ঘর থেকে বেরলেই দূষণের মাত্রা আমার চোখে পড়ে। শীতকালে যখন বাতাস থাকে না, তখন দূষণে পাশের বাড়িটাও দেখা যায় না। তারা আয় করবে আর তার জন্য কেন এই দূষিত বাতাসে আমাকে নিঃশ্বাস নিতে হবে?"

জ্বালানি নিয়ে উদ্বেগ
ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং যেভাবে বেড়েছে তাতে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে এমন উদ্বেগও তৈরি হয়েছে।

সরকার বলছে এক বছরে যে পরিমাণ মুদ্রা মাইনিং হয়েছে, তাতে দেশ জুড়ে এক বছরে জ্বালানির চাহিদা ৭-৮% বেড়েছে।

দেশটিতে ক্রিপ্টোমুদ্রা খননের কাজে যে পরিমাণ বিদ্যুত ব্যবহার হচ্ছে তা কাজাখস্তানের একটি বড় শহরের আলোর চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির সমান।

গত নভেম্বর মাসে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে রাশিয়া থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয়েছে। যেসব এলাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ নেই, সেসব এলাকায় বিটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রার খনি বসানোর ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। ফলে কিছু মাইনারকে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বা ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।

দেশটির ডিজিটাল উন্নয়ন বিষয়ক উপ-মন্ত্রী আসখাত ওরাযবেক বলেছেন কাজাখস্তানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার এই হঠাৎ বৃদ্ধি অতি দ্রুত ঘটেছে, যেটি নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটা উচিত ছিল।

তার সরকার জানুয়ারি ২০২২ থেকে এই খনি শিল্পের ওপর বিদ্যুত ব্যবহারের জন্য বাড়তি কর ধার্য করেছে। তাদের আশা এই বাড়তি রাজস্ব ব্যবহার করে তারা দূষণমুক্ত জ্বালানির ব্যবহার গড়ে তুলতে পারবেন।

ওরাযবেক স্বীকার করেছেন, কাজাখস্তানের বিটকয়েন মাইনিং শিল্প যে জ্বালানি ব্যবহার করছে তা দূষিত পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং ক্রিপ্টোমাইনিং ব্যবসার জন্য তারা নির্দিষ্ট কোটা চালু করতে যাচ্ছেন।

তবে চীন, কসোভো এবং রাশিয়া এই মুদ্রা ব্যবসার যেভাবে রাশ টেনে ধরেছে বা ধরার উদ্যোগ নিয়েছে, কাজাখস্তান সে পথে হাঁটবে এমন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।

সরকারের জন্য উভয়সঙ্কট?
ওরাযবেক বলছেন, "এটা এক ধরনের প্রযুক্তি বিপ্লব। আমরা এই মুহূর্তটা হারাতে চাই না, আমরা চাই বিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে যে বিপ্লব ঘটছে তার শরিক হতে।"

জ্বালানির আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ মাসের প্রথম দিকে কাজাখস্তানে ব্যাপক মাত্রায় সহিংস প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটি এখনো এই বিক্ষোভের ঢেউ সামলে উঠছে।

ক্রিপ্টোমুদ্রার মাইনিং-এর সাথে ওই বিক্ষোভের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না থাকলেও, ওই প্রতিবাদ থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট হয়েছে।

এক হল, জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়লে কী ঘটতে পারে। আর দ্বিতীয়ত বিটকয়েনের মত ক্রিপ্টোমুদ্রার মাইনিং জগতে কাজাখস্তান এখন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

কাজাখ সরকার বিক্ষোভের সময় যখন পাঁচদিনের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন বিশ্বব্যাপী বিটকয়েন নেটওয়ার্কে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছিল। এই ডিজিটাল মুদ্রার বাজার শ্লথ হয়ে পড়েছিল যার ফলে বিশ্বে বিটকয়েনের বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল।

কাজেই নতুন ও দ্রুত বেড়ে ওঠা এই শিল্প জগত কাজাখ সরকার কীভাবে সামাল দেবে তা দেশটির সরকারের জন্য ভবিষ্যতে বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement