১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দিবে বাংলাদেশ

কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দিবে বাংলাদেশ। - ছবি : সংগৃহীত

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দিবে। পাশাপাশি গ্লাসগো-শার্ম আল শেখ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন দ্যা গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশন বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলনে, বাংলাদেশ প্রণীত ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ)বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ‘তহবিল ও সমাধান’-এর মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ন্যূনতম দায়ী দেশগুলোর জন্য কাজ ও সহায়তা করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কপ সম্মলেনে আলোচনায় অংশ নিবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অর্থায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফাইন্যান্সের হিসাবমতে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আট দশমিক ৮ থেকে ৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, ধরিত্রীকে বাঁচাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হার ৪৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করতে হবে। এসব বিষয়ে আমরা জোর দাবি জানাবো ।

এবারের কপ-২৭ সম্মেলনে জোড়ালো দাবি থাকবে যে, ‘আমরা যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের অসহায় শিকার, আমরা বহু বছর থেকে বলে আসছি। সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা করবো যে কোনো অজুহাত এখানে দাঁড় করানো যাবে না। আমাদের প্রতিশ্রুত সাহায্য করতে হবে।’

প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের কি অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির আলোকে যেগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো এখনো হয়নি। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে যে পরিমাণ অর্থ জমার পড়ার কথা ছিল সেটি জমেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে সেই অর্থ সমবণ্টনের কথা ছিল, কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি যেভাবে সমাধান করার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না। এই সম্মেলনেও এটি আলোচনা হবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার ।কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই।

এক দশক আগে বাংলাদেশে পার ক্যাপিটা পার এরিয়া গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন ছিল শূন্য দশমিক দুই টন। এখন সেটা একটু বেড়েছে। কারণ আমাদের শিল্প-কারখানা বেড়েছে। এখন তা শূন্য দশমিক ৬ টন। যেখানে ইউরোপে পার ক্যাপিটা পার এরিয়া ১০ টনের বেশি। আমেরিকায় ১৫ টন বা আরো বেশি। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পার ক্যাপিটা পার এরিয়া এখন চার-পাঁচ টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের কিছুই না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সেটি আমাদের ওপর অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করছে।

গ্ল্যাসিয়েল লেক বলতে বরফগলে যে লেকগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। তাহলে সেটার যে কী বিরূপ প্রভাব, তা অনুমানেরও বাইরে। সবমিলিয়ে আমরা এই জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার। পুরো পৃথিবীই শিকার। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান। যেমন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, হঠাৎ একদিনে অনেক বৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনাগুলো অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

জলাবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশের কি প্রস্তুতি আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় গৃহীত সকল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৩৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৮৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার এলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান জমা দিয়েছে (এনডিসি), জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২ থেকে ২০৪১ খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement