২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মানুষ কেন এত গোশত খায়?

- ছবি : সংগৃহীত

গোশত ও দুগ্ধ শিল্পের কারণে পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে, এ কথা অনেক দিন ধরেই বলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তারপরও গোশত খাওয়া কমছে না। এর কারণ কী?

জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হিসেবে, বর্তমানে বিশ্বে বছরে ৩৫ কোটি টন গোশত উৎপাদিত হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে সেটা বেড়ে ৪৫ কোটি টন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এক গবেষণায় জানা গেছে, মটরের মতো উদ্ভিদজাত প্রোটিন উৎপাদনে যত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, গরুর গোশত উৎপাদনে তার চেয়ে নির্গত হয় প্রায় ছয়গুন বেশি।

এছাড়া উদ্ভিদজাত প্রোটিন উৎপাদনে যত জমি প্রয়োজন গুরুর গোশত উৎপাদনে প্রয়োজন হয় তার প্রায় ৩৬ গুন বেশি।

জার্মানির ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক মনোবিজ্ঞানী বেনইয়ামিন বুটলার বলেন, অভ্যাস, সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য ও অনুভূত চাহিদার কারণে মানুষ গোশত খায়।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় অনেকে গোশতের স্বাদটা পছন্দ করেন। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী অনেক খাবার মেনুতে গোশতের তরকারি আছে।

বুটলার বলেন, গোশত খাওয়ার প্রাকৃতিক অভ্যাসের কারণে আমরা অনেক সময় কোনো প্রশ্ন করি না। এছাড়া এমন অভ্যাসের কারণে গোশত খাওয়া যে খারাপ, সেই চিন্তা আমাদের মাথাতেই আসে না। এমনকি ভেজিটারিয়ান বা ভেগানরা যদি গোশত খাওয়ার জন্য প্রাণীদের কষ্ট হয়, সেটা আমাদের মনে করিয়ে দেন। তখনও আমরা এই যুক্তি দেই যে, মানুষতো অনেক আগে থেকে সবসময় গোশত খেয়ে এসেছেন।

বিজ্ঞানীরা অনেক দিন বিশ্বাস করতেন গোশত খাওয়ার কারণে আমাদের পূর্বপুরুষদের দেহ গঠন মানুষের মতো হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ বছর আগে গোশত ও হাড়ের অস্থি মজ্জার কারণে মস্তিষ্কের আকার বড় হয়েছে বলেও মনে করতেন তারা।

কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা মানুষের বিবর্তনে গোশত খাওয়ার গুরুত্ব প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

ওই গবেষণার অন্যতম লেখক যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির জীবাশ্ববিদ ব্রায়ানা পোবিনার বলেন, ২০ লাখ বছর আগে গোশত খাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের আকার বাড়ার তথ্যটি ঠিক। তবে সেটি ১০ লাখ বছর আগে মানুষ রান্না করে খাবার খাওয়া শুরুর পর মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম।

তিনি বলেন, খাবার রান্না করার কারণে বেশি পুষ্টিকর হয়েছে। এছাড়া খাবার নরম হওয়ায় খেতে ও হজমেও সুবিধা হয়েছে।

পোবিনার বলেন, শুধু এক ধরনের খাবার মানুষের বিবর্তনকে এগিয়ে নিয়ে যায়নি। বরং রান্নার কারণে মানুষ অনেক ধরনের খাবার খেতে পারায় বিবর্তন সফল হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটি হতে পারে। তখন চাহিদামতো গোশত উৎপাদন করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই এখনই গোশত খাওয়া কমাতে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে গোশতের দাম বাড়িয়ে তার বিকল্পগুলোর দাম কমানো যেতে পারে বলে মনে করছেন জার্মানির ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বুটলার।

গোশত খাওয়ার প্রবণতা কমার লক্ষণ ইতোমধ্যে জার্মানিতে দেখা যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে জার্মানিতে গোশতের বিকল্প হিসেবে পরিচিত উদ্ভিদজাত খাবারের উৎপাদন প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement