২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অ্যাপোফিসের ধাক্কা থেকে পৃথিবী ১০০ বছরের জন্য বেঁচে যাবে : নাসা

অ্যাপোফিসের ধাক্কা থেকে পৃথিবী ১০০ বছরের জন্য বেঁচে যাবে : নাসা -

যে গ্রহাণু পৃথিবীকে ধাক্কা মারতে পারে বলে একসময় বড়রকম আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা অন্তত আগামী এক শ’ বছর ঘটবে না এবং পৃথিবী ‘নিরাপদ’ বলে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা নিশ্চিত করার পর পৃথিবীর মানুষ এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে।

অ্যাপোফিস গ্রহাণুটি আবিষ্কার হয়েছিল ২০০৪ সালে এবং এটি আবিষ্কৃত হবার পর পৃথিবীর জন্য এটিকে অন্যতম সবচেয়ে বিপদজনক গ্রহাণু বলে চিহ্নিত করেছিল নাসা।

তাদের পূর্বাভাস ছিল এই গ্রহাণু পৃথিবীকে ধাক্কা দেয়ার মতো খুব কাছাকাছি আসবে ২০২৯ সালে। এরপর আবার বলা হয় এটা ঘটতে পারে ২০৩৬ সালে। পরে দুটি সংঘর্ষের আশঙ্কাই নাকচ করে দেয়া হয়।

এরপর জানা যায়, ২০৬৮ সালে এই গ্রহাণুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে।

কিন্তু এই গ্রহাণুর গতিপথ নতুনভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে নাসা এখন বলেছে অন্তত ১০০ বছরের জন্য এই ঝুঁকি কাটানো গেছে।

‘এই গ্রহাণুর ২০৬৮ সালে পৃথিবীর সাথে ধাক্কা লাগার যে আশঙ্কা ছিল, সেই সম্ভাবনা এখন নেই এবং আমাদের হিসাব নিকাশ অনুযায়ী আগামী অন্তত এক শ’ বছরে এই গ্রহাণু তার গতিপথে সেই ঝুঁকির জায়গায় আসবে না,' এক বিবৃতিতে বলেছেন নাসার বিজ্ঞানী ডেভিড ফার্নোচ্চিয়া।

এই গ্রহাণুর নামকরণ হয়েছিল মিশরের এক প্রাচীন দেবতা অ্যাপোফিস- এর নামে। গ্রহাণু অ্যাপোফিস প্রস্থে ৩৪০ মিটার (১ হাজার ১০০ ফুট) চওড়া এবং এর দৈর্ঘ্য ব্রিটেনের প্রায় তিনটি ফুটবল পিচের সমান।

এই গ্রহাণু সম্প্রতি ৫ মার্চ তারিখে পৃথিবীর ১৭ মিলিয়ন কিলোমিটার (এক কোটি মাইল) দূরত্বের মধ্যে এসে পড়েছিল।

জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা তখন এই গ্রহাণুর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার গতিপথ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান এবং রেডার যন্ত্র দিয়ে ধরা তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা ২০৬৮ সালে বা তার পরে এটি কোথা দিয়ে যাবে তা হিসাব করেন। এর ভিত্তিতেই তারা তাদের নতুন তথ্য উপাত্ত নিয়ে আশ্বস্ত।

‘আমি যখন কলেজ ছাড়ার পর গ্রহাণু নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন থেকেই আমরা জানতাম অ্যাপোফিস পৃথিবীর জন্য খুবই বিপদজনক একটা গ্রহাণু,’ বলেন ডেভিড ফার্নোচ্চিয়া।

‘এটাকে এখন ঝুঁকির তালিকা থেকে বাদ দিতে পেরে আমরা স্বস্তিবোধ করছি।’

তিনি বলেন, যখন প্রথম জানা যায় এই গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ২০২৯ সালে ধেয়ে আসবে, তখন থেকে নাসা সিদ্ধান্ত নেয় যে ২০২৯ এ গ্রহাণুটি পৃথিবীর খুব কাছে এসে গেলে তখন এর গতিবিধি এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

নজিরবিহীন কাছাকাছি
ফার্নোচ্চিয়া অ্যাপোফিসের পৃথিবীর কাছাকাছি আসার যে কথা বলছেন সেটা ঘটবে ১৩ এপ্রিল ২০২৯। ওই তারিখে এই গ্রহাণু পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ৩২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে এসে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই দূরত্ব হলো পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে যে দূরত্ব তার এক দশমাংশ।

ওই দিন পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধ থেকে অর্থাৎ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কোনো কোনো জায়গা থেকে অ্যাপোফিস গ্রহাণুটি দেখা যাবে।

এই দেখার জন্য কোনো টেলিস্কোপ বা বায়নোকুলার প্রয়োজন হবে না।

বিপদজনক তিনটি গ্রহাণু
যেসব গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে তার থেকে পৃথিবীর কোনো না কোনো দিন সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে সেগুলোর ওপর নজর রাখে নাসা। নাসা এদের শ্রেণীভুক্ত করেছে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহাণু বা পোটেনশিয়াল হ্যাজাডার্স অ্যাসটেরয়েডস (পিএইচএ) নামে।

এদের প্রত্যেকটির সাংকেতিক নাম রয়েছে। এরকম তিনটি গ্রহাণু:

1950 DA (১৯৫০ডিএ)
এটি আবিস্কৃত হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০। এরপর এটি হারিয়ে যায়। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর এটি আবার খুঁজে পাওয়া যায়। ১.৩ কিমি এই গ্রহাণু নিয়ে বিজ্ঞানীরা এরপর নতুন করে হিসাব নিকাশ শুরু করেন। নতুন হিসাব অনুযায়ী তাদের ধারণা এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে সম্ভবত ১৬ মার্চ ২৮৮০ সালে। তবে পৃথিবীর সাথে এটির সংঘর্ষের আশংকা খুবই নগণ্য।

2010 RF12 (২০১০ আরএফ১২)
পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের আশংকা এই গ্রহাণু থেকে সবচেয়ে বেশি এবং এটির ওপর কড়া নজর রাখছে নাসা। এটির পৃথিবীকে ধাক্কা মারার সম্ভাবনা ৪.৭%; এটির ব্যাস ৭ মিটার।
নাসার গবেষণা অনুযায়ী এটির সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা ৫ সেপ্টেম্বর ২০৯৫ সালে। শুনতে ভীতিকর হলেও এটি যেহেতু আকারে খুবই ছোট এটি পৃথিবীর বুকে ধাক্কা মারলে তাতে বড় ধরনের কোন হুমকির আশঙ্কা নেই বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।

2012 HG2 (২০১২ এইচজি২)
এই গ্রহাণুর সাথে পৃথিবীর প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে পারে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০৫২ সালে বলে নাসার পূর্বাভাস। এটির ব্যাসার্দ্ধ ১৪ মিটার এবং এটিও নাসার ঘনিষ্ঠ নজরে রয়েছে কারণ এটিরও ধাক্কা মারার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। এটিও আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট, তাই ধাক্কা মারার পর এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement