হজকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা
- ডা: মো: ছায়েদুল হক
- ১০ মে ২০২৩, ০০:০৫
আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক লোক হজ এবং ওমরাহ করতে সৌদি আরব গমন করে থাকেন। তার মধ্যে অধিকাংশ লোক মক্কা ও মদীনায় হজ করতে সমবেত হয়ে থাকেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই বয়সে প্রবীণ। সৌদি আরবের আবহাওয়া আমাদের দেশের থেকে বেশ ভিন্ন। বর্তমানে হজ মৌসুম সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরম ও শুষ্ক। এই সময়টায় অনেকেই বিশেষ করে যারা বয়সে প্রবীণ তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে হজের নিয়মকানুন মেনে হজ সমাপন অনেকটাই কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যায়। কিছু সাবধানতা ও কিছু পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে অনেক সময় সাময়িক এই অসুস্থতা এড়িয়ে চলা সম্ভব। পূর্ব প্রস্তুতি বলতে হজে যাওয়ার আগে সব কাজ করণীয় এবং কিছু সাবধানতা প্রয়োজন সৌদি আরবে অবস্থানকালীন।
পূর্ব প্রস্তুতি শুরু করতে হবে যখন হজ নিবন্ধন সমাপ্ত হবে তখন থেকে। যাদের আগে থেকে অসুস্থতা আছে যেমন হার্টের সমস্যা, কিডনি, লিভার, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের উচিত তাদের চিকিৎসকের কাছে একটা চেকআপ করিয়ে নেয়া। প্রেসক্রিপশন স্বযতেœ সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখা। সম্ভব হলে আপনার চিকিৎসকের সাথে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায় এমন একটা নাম্বার নিয়ে রাখা এবং তার অনুমতি নিয়ে রাখা যেন বিশেষ প্রয়োজন হলে অনলাইনে একটু কথা বলা যায়।ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মেডিক্যাল টিমের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের অবশ্যই সাথে গ্লুকোমিটার রাখতে হবে যাতে নিজে নিজে সুগার টেস্ট করতে পারেন। শ্বাস কষ্টের রোগী যারা তাদেরকে অবশ্যই ইনহেলার সাথে রাখতে হবে যদি আগে কখনো ইনহেলার ব্যবহার করে থাকেন। যাদের মেরুদণ্ডে বা ঘারে ব্যথা আছে তারা অবশ্যই সাবধানে থাকবেন চলাফেরায় এবং বোঝা ব্যাগ ইত্যাদি বহন করার সময়। ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখবেন এবং প্রয়োজনে সাথীদের সাহায্য নিবেন। হঠাৎ করে ভারী ব্যাগ তুলতে যাবেন না।
যাদের চোখের সমস্যা আছে বিশেষ করে পাওয়ারের সমস্যা তারা একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নতুন করে চশমা বানিয়ে নিন। একটা অতিরিক্ত চশমা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন এবং চশমার পাওয়ারের কাগজটা সাথে রাখতে ভুলবেন না। ছানিজনিত সমস্যা থাকলে অপারেশন করিয়ে নিবেন। ফেকো পদ্ধতিতে ছানি অপারেশন করলে সপ্তাহ দুই পরে আপনি ভ্রমণ করার জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবেন। গোসল ইত্যাদি করা সম্ভব। কন্টাক্ট লেন্স ইত্যাদি পরিহার করাই ভালো।
দেশ ত্যাগ করার আগে হজ চলাকালীন প্রয়োজন হতে পারে এমন একটা সম্ভাব্য ওষুধের তালিকা করে ওষুধগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। তার মধ্যে ঠাণ্ডা কাশির জন্য এন্টিহিস্টাসিন জাতীয় ট্যাবলেট , পাতলা পায়খানার জন্য খাবার সেলাইন ও মেট্রোনিডাজল ও সিপ্রোসিন জাতীয় ট্যাবলেট; মাথা ব্যথার জন্য পেরাসিটামল ট্যাবলেট ইত্যাদি সাথে রাখতে হবে।
সৌদি আরবের আবহাওয়া বেশ শুষ্ক এবং প্রচণ্ড গরম। গরমে প্রথমেই যে সমস্যাটি হয় তা হলো পানি পিপাসা। অনেকেই আছেন অধিকতর তৃপ্তি পেতে একদম ঠাণ্ডা পানি সমানে পান করে থাকেন। ফলে অল্পতেই গলা বসে যাওয়া ,কাশি অনেক সময় জ্বর চলে আসে। এ থেকে সাবধানে থাকতে হবে। মক্কা মদিনা সব জায়গাতেই দুই ধরনের পানির ব্যবস্থা থাকে। একদম ঠাণ্ডা পানি পরিহার করা উচিত। প্রয়োজনে ঠাণ্ডা এবং নরমাল পানি মিশিয়ে পান করতে পারেন। সারা দিনই কমবেশি পানি খেতে হবে। প্রস্রাব হলুদ হলে বুঝবেন দেহে পানিশূন্যতা চলছে। পানি এবং ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
ওখানে প্রায়ই হাজীদের জন্য অনেকেই খাবার ফ্রিতে সরবরাহ করে থাকেন। এগুলো বেশির ভাগ সময় বেশ তৈলাক্ত হয়ে থাকে। হঠাৎ করে বেশি খেলে অনেকেরই সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের পেটের সমস্যা বিদ্যমান। তাদের জন্য ভালো এসব তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা। খেলেও পরিমাণে কম খেতে হবে। খেজুরের বেলায়ও অনেকেরই সমস্যা হয়। খেজুর খেতে হলেও অল্প পরিমাণে এবং ভালো করে ধুয়ে তবে খাবেন। তাহলে আশা করা যায় পেটের সমস্যা হবে না।
যাদের ডায়বেটিস আছে তারা অবশ্যই কোমল পানিয় পরিহার করে চলবেন। হাইপো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই সাথে চকলেট জাতীয় কিছু রাখবেন।
অনেকই আছেন তারা অধিকতর সোয়াবের আশায় মক্কায় পৌঁছার পর হজের মৌলিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি দিনরাত তোয়াফ ও মসজিদে সময় কাঠানোর চেষ্টা করে থাকেন। আবার অনেকেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে অসুবিধার কিছু নেই। তবে মনে রাখতে হবে হজের মৌলিক অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলো যেমন ফরজ তোয়াফ, আরাফায় অবস্থান, মুজদালিফা ও মিনাতে অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ ইত্যাদির জন্য সুস্থতা খুবই জরুরি। বিদায়ী তোয়াফ পর্যন্ত সুস্থতা খুবই প্রয়োজন। যারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং বয়স্ক তাদের যথাসম্ভব দিনের গরম ও রোদ পরিহার করে চলা ভালো। প্রয়োজনে তোয়াফের কাজ রাতের বেলায় নিরাপদ। যারা হেরেম শরীফের দূরবর্তী আবাসনে থাকেন তাদের পক্ষে বারবার হেরেম শরীফে আসাটা কষ্টকর হবে। সে ক্ষেত্রে দিনের দুই প্রান্তে হেরেম শরীফে নামাজ আদায় করলে কিছুটা স্বস্তিকর হবে। হজকে সামনে রেখে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করতে হলে সাবধানে করতে হবে। অনেককেই দেখা যায় পাহারে উঠানামা করতে গিয়ে পায়ের গোড়ালি মচকে বসে থাকেন। সে অবস্থায় হজ তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাবে। এমন হলে অপেক্ষা না করে দ্রুত মেডিক্যাল টিমের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘুমের ব্যাপারে খুব যতœ নিতে হবে। এই সময়টায় ওয়াক্তের নামাজ, তোয়াফ, তাহাজ্জুদের নামাজ ইত্যাদি করতে গিয়ে দেখা যায় অনেকেই ঘুমের সময় নিয়ে বেশ জামেলায় থাকেন। আবার অনেকেই অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় প্রচুর সময় ব্যয় করেন। মনে রাখতে হবে সুস্থতার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম। সবচেয়ে ভালো হয় ফজরের নামাজ শেষে নাস্তা করে লম্বা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে জোহরের নামাজ। তোয়াফের কাজটা সেড়ে ফেলতে হবে এশার নামাজ শেষে অথবা ফজর ওয়াক্তে। এশার নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়া শেষে মার্কেটে ঘুরতে বের হওয়ার চেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে শরীর মন দুটিই ভালো থাকবে। হজের মূল পর্ব সামনে রেখে নিজেকে যত সামলে চলা যায় ততই ভালো।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু), এমএস (চক্ষু)
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক- জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল এবং কনসাল্টেন্ট- আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, আদাবর, ঢাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা