২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গরমে শিশু থাক নিরোগে

-

প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। গরমে হাঁসফাঁস করছে পশু, পাখি, নর-নারী এবং শিশুরাও। গরমে শিশুদের রোগ বালাইয়ের মধ্যে প্রধানত খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ-ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, বাতাসবাহিত রোগ- ঠাণ্ডা, জ্বর ও কাশি হাম, মাম্পস, টনসিলাইটিস, জলবসন্ত ইত্যাদি, চর্মজনিত রোগ- ঘামাচি গরম ফোঁড়া দাদ ইত্যাদি।
গরমে পানির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ক্লান্ত, শ্রান্ত, তৃষ্ণার্ত মানুষ একটু ঠাণ্ডা পানি, শরবত, লাচ্ছি বা ফলের রসের প্রতি দারুণভাবে ঝুঁকে পড়ে। আর আমাদের দেশের হাইজেনিক অবস্থা তো সবারই জানা। যে লোকটা টাইফয়েড কিংবা জন্ডিসে ভুগছে সেই এসব খাদ্য তৈরি করে আপনাকে খাওয়াচ্ছে। এ ছাড়া গরমে মাছির উপদ্রব বেড়ে যায় অনেক এবং মাছি খাবারের মধ্য বসে খাবারকে দূষিত করে। তা ছাড়া ঢাকা শহরের পানীয় জলের দুরবস্থার কথা সবারই জানা। ছোট বাচ্চারা এই পানি দুগর্ন্ধযুক্ত পানি দিয়ে গোসল করে। হঠাৎ যখন তাদের অজান্তেই তারা কিছু পানি গিলে ফেলে তখন তারা সহজেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
আইসক্রিম শিশুদের প্রিয় খাবার। আর এই আইসক্রিম যদি তৈরি করা হয় সাপাইয়ের পানি দিয়ে তাহলে শিশুরা জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাস মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যে বহু দিন বেঁচে থাকতে পারে।


প্রতিকারে করণীয়
প্রতিকারের প্রধান উপায়গুলো হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা, সর্বোপরি পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের বাচ্চার খাবার ব্যাপারে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা। উন্নত বিশ্বে এসব অসুখ এসবের মাধ্যমেই জয় করেছে। বাতাসবাহিত রোগ গরমকালে বেশি হওয়ার কারণ- গরমকালে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে আর ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া এসব ধূলিকণার আশ্রয়েই সূর্যের আলোর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করে। এ ছাড়া গরম, ঠাণ্ডা এবং ঘেমে কাপড়-চোপড় ভিজে গিয়ে, ভেজা কাপড় শরীরে শুকিয়ে গেলে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুপ্ত তাপ শুষে নিয়ে যায় এবং শরীরের ভেতরে ঠাণ্ডা করে ফেলে; ফলে শরীরে লুকিয়ে থাকা জীবাণুগুলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং শিশুরা সহজেই আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ঘনবসতি, স্কুল-কলেজে অনেক শিশু একত্রে মেশার ফলে একজন আক্রান্ত শিশু সহজেই সব স্কুলের শিশুদের আক্রান্ত করতে পারে এবং শিশুদের মধ্যে এটাই ঘটে বেশি।

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা পিতা-মাতা এবং অভিভাবকের প্রতি পরামর্শ- অবশ্যই ছোঁয়াচে এবং সংক্রমিত রোগীকে শিশু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যত দিন আলাদা থাকার প্রয়োজন হয় ততদিন আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যেসব রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তা আমাদের দেশে পাওয়া যায় যেমন মাম্পস, হাম, রুবেলা, জলবসন্ত, জন্ডিস বি, জন্ডিস এ-এর টিকা দিতে হবে। খাবার খোলা রাখবেন না, রাস্তার খোলা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। প্রত্যেকবার খাবার আগে খাবার ভালো করে গরম করে খাওয়ান। খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। ফ্রিজ না থাকলে গরমের দিনে কোনো খাবারই ৬ ঘণ্টার বেশি ফেলে রেখে গরম না করে খাওয়া উচিত নয়। পানি পানের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা। শিশুকে কম দামি আইসক্রিম না খাওয়াই ভালো। শিশুদের গোসলের পানিও ফুটিয়ে নেয়া। খাওয়ার আগে এবং মল ত্যাগের পরে অবশ্যই দুই হাত ভালো করে সাবান সোডা কিংবা ছাই দিয়ে ধৌত করার অভ্যাস করুন। শিশু যেন ঘর্মাক্ত দেহে বাসায় ঢুকেই ফ্রিজ খুলে ঢক ঢক করে ঠাণ্ডা পানি পান না করে সে দিকে খেয়াল রাখুন।
লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল

 


আরো সংবাদ



premium cement