যে চিকিৎসায় রোজা ভাঙে না

রমজান সিয়াম সাধনার মাস। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। অনেক অসুস্থ ব্যক্তি রোজা মিস করতে চান না। আবার রোজা রেখে জরুরি অবস্থায় ওষুধ নিলে রোজা নষ্ট হবে কিনা তা নিয়ে টেনশনে থাকেন। রমজানে চিকিৎসা-সংক্রান্ত কি কাজ করলে রোজা ভাঙবে না তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
১. অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে ইচ্ছা করে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে।
২. স্যালাইন, গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক কিছু শিরাপথে নেয়া যাবে না। এগুলো ছাড়া যেকোনো ওষুধ ইনজেকশন হিসেবে নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (কিছু ইখতেলাফ/ মতভেদ আছে)
৩. যেকোনো ধরনের চোখ, নাক ও কানের ড্রপ, ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে। ওষুধ মুখে চলে আসলে তা না গিলে কুলি করে বাইরে ফেলতে হবে। হার্টের রোগীর ব্যথা উঠলে নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা ¯েপ্র জিহ্বার নিচে ব্যবহার করা যাবে।
৪. রোজা রেখে কেউ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে, সে চাইলেই রোজা ভেঙে ফেলতে পারবে। এই জন্য তাকে কাফফারা (একটানা ৬০টি রোজা) দিতে হবে না। তবে পরে অবশ্যই রমজান শেষে যেকোনো সময় এটি কাজা আদায় করে নিতে হবে।
৫. গর্ভবতী ও শিশুকে দুধ খাওয়ায় এমন মায়েদের জন্য রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যে রোজাগুলো বাদ যাবে, পরবর্তীতে যখন তার জন্য সহজ হবে এবং শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না, তখন কাজা আদায় করে নিতে হবে।
৬. মেয়েদের পিরিয়ডের রক্ত বের না হওয়া পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হবে না। পিরিয়ড শুরুর পর রোজা রাখা ও নামাজ পড়া যাবে না। যে রোজাগুলো মিস যাবে, রমজান শেষে সেগুলো কাজা আদায় করতে হবে। তবে নামাজের কাজা আদায় করতে হবে না।
৭. পায়খানার রাস্তায় কিংবা যৌনিপথে ট্যাবলেট, সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে। প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার করলে রোজা নষ্ট হয় না।
৮. রোজা রেখে দাঁত উঠানো যাবে।
৯. ল্যাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজা নষ্ট হবে না।
১০. সুস্থ সবল ব্যক্তির রক্ত দান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে রক্তদাতা দুর্বল অনুভব করলে রোজা ভেঙে ফেলতে পারেন। এই জন্য কাফফারা দিতে হবে না, পরে শুধু একটি রোজা কাজা করলেই হবে।
১১. ইনসুলিন নিলেও রোজা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইনসুলিন নেয়ার পর যেহেতু খাবার খেতে হয়, তাই রোজা থাকাকালীন অবস্থায় নেয়া খুব রিস্কের হয়ে দাঁড়ায়। তাই এর সকালের ডোজ হিসেবে ইফতার ও রাতের ডোজ সাহরির সময় এডজাস্ট করে নিতে হবে।
১২. যৌনিপথে বা পায়খানার রাস্তায় কোনো পরীক্ষা যেমন- PV, DRE, প্রোক্টোস্কপি, এনোস্কোপি করলে রোজা নষ্ট হয় না।
১৩. অনিচ্ছাকৃতভাবে যেমন আহত হয়ে কিংবা নাক দিয়ে রক্ত পড়লে রোজা নষ্ট হবে না।
রেফারেন্স :
১. 9th Fiqh Medical Seminar, Morocco. (সারা বিশ্ব থেকে নামকরা আলেম ও মুসলিম চিকিৎসক মরক্কোর এই সেমিনারে সবাই একমত হয়ে এই বিষয়ে ফতোয়া দেন)।
২. প্রশ্নোত্তরে সিয়াম-ড. আবু বকর মুহম্মদ জাকারিয়া
৩. Standing committee for issuing fatwa, Kingdom of Saudi আরাবিয়া মেডিক্যাল অফিসার, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, আগারগাঁও, ঢাকা