২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্লুকোমা নিয়ে এত ভয় কেন

-

গ্লুকোমা চোখের এমন একটি অবস্থা যেখানে চোখের প্রেসার বা চাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকায় রেটিনাল নার্ভ ফাইবার বা চোখের দৃষ্টির জন্য নির্ধারিত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্ধত্ব নেমে আসে। চোখের প্রেসারের স্বাভাবিক মাত্রা ধরা হয় ২১ মি.মি. অব মার্কারি। স্বাভাবিক মাত্রা অনেকের ক্ষেত্রে কম বেশি হতে পারে।
গ্লুকোমা এমন একটি চক্ষুরোগ যা কিনা পরীক্ষা না করলে বোঝা যায় না। যেকোনো রোগের জন্য রোগী কিছু সমস্যা অনুভব করেন। ফলে নিজ থেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং চিকিৎসক তার উপসর্গ শুনে দেহে বাহ্যিক পরীক্ষা বা ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করে প্রয়োজনে বিভিন্ন টেস্ট ইত্যাদি করে তবে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা দেন এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। গ্লুকোমার বিষয়টি একটু ভিন্ন। অনেক সময় গ্লুকোমার কোনো উপসর্গ থাকে না। বিশেষ করে প্রাইমারি ওপেন এঙ্গেল গ্লুকোমাতে প্রাথমিক অবস্থায় কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না। ফলে রোগীর পক্ষে কোনোভাবেই আঁচ করা সম্ভব নয় তার গ্লুকোমা। কোনো কারণে চোখের প্রেসার পরিমাপ করলেই কেবল কিছুটা আঁচ করা সম্ভব। তখন চোখের কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলোর সাহায্যে গ্লুকোমা নিরূপণ করা সম্ভব। রোগী টের পাবে যখন চোখের দৃষ্টি নষ্ট হয়ে যাবে বা প্রায় অন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। সমস্যা হলো এই অবস্থায় চিকিৎসা হলেও দৃষ্টি আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না। গ্লুকোমার কারণে চোখের দৃষ্টি একবার নষ্ট হয়ে গেলে সেটি স্থায়ী অন্ধত্বে রূপ নেয়। একে বলা যায় দৃষ্টি সমস্যার নীরব ঘাতক। এমতাবস্থায় করণীয় কী?
গ্লুকোমা প্রতিরোধের কোনো উপায় এখনো আমাদের জানা নেই। তবে গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধের চেষ্টা করা যেতে পারে। অর্থাৎ গ্লুকোমাতে প্রয়োজন শুরুতেই রোগটি শনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা। চিকিৎসা মানে চোকের প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করা। এটি ড্রপের সাহায্যে হতে পারে আবার এর জন্য নির্ধারিত অপারেশনও আছে। আমরা আগেই বলেছি গ্লুকোমাতে কোনো উপসর্গ নেই। তাই এর শনাক্তকরণে একমাত্র উপায় হলো চোখ পরীক্ষা করা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে শুধু শুধুই লোকজন পকেটের পয়সা খরচ করে কেন চোখ পরীক্ষা করাতে যাবে। তা ছাড়া সব মানুষের চোখ পরীক্ষার মতো জনবলও কোথায় পাওয়া যাবে। যেহেতু সব মানুষের চোখ পরীক্ষা সম্ভব নয় এবং পরীক্ষা ছাড়া গ্লুকোমা শনাক্তকরণও সম্ভব নয়, তাই মাঝামাঝি একটি ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাকে বলা যায় গ্লুকোমা স্ক্রিনিং।
গ্লুকোমা স্ক্রিনিং বা শনাক্ত করতে হলে কেবল চোখের প্রেসার পরিমাপই যথেষ্ট নয়। সাথে নার্ভ ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না সেটিও দেখতে হবে। আর নার্ভ ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হবে ভিজুয়েল ফিল্ড পরীক্ষার মাধ্যমে। অতএব, গ্লুকোমা শনাক্তকরণ বা স্ক্রিনিং-এ দুটি টেস্ট খুব জরুরি।
যেহেতু স্ক্রিনিং কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ তাই অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ যারা তাদের বেলায় স্ক্রিনিং করাটা যুক্তিযুক্ত।
অপেন এঙ্গেল গ্লুকোমায় ঝুঁকিপূর্ণ হলো-
- যাদের বয়স চল্লিশের উপর
- যার পরিবারে গ্লুকোমার উপস্থিতি আছে।
- ডায়াবেটিস, মায়োপিয়া বা দূরদৃষ্টির সমস্যা যাদের আছে।

যেহেতু আমাদের দেশে সরকারিভাবে গ্লুকোমা শনাক্তকরণে কোনো প্রোগ্রাম নেই এবং বেসরকারিভাবেও কোনো স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম নেই, তাই সর্বজনীনভাবে এটি করা সম্ভব নয়। বিকল্প হলো যেসব হাসপাতাল বা সেন্টারে যেখানে চোখের প্রেসার মাপার ব্যবস্থা আছে সেখানে চক্ষু পরীক্ষার সময় নিজ দায়িত্বে চোখের প্রেসার জেনে নেয়া। প্রথমে চোখের প্রেসার পরিমাপ করে যদি গ্লুকোমা আঁচ করা হয় তবে ভিজুয়েল ফিল্ড টেস্ট করতে হবে। চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাজ হবে চক্ষু পরীক্ষাকালে চোখের প্রেসার একটু দেখে নেয়া। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গ্লুকোমা স্ক্রিনিং করানোর সক্ষমতা থাকলেও কেবল সচেতনতার অভাবে অনেকেই এটিকে অতিরিক্ত খরচ মনে করে স্ক্রিনিং এড়িয়ে চলেন। সরকারি হাসপাতালে স্ক্রিনিং কিছুটা সাশ্রয়ী হবে।
এভাবে হয়তো একটা গ্রুপের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং সম্ভব হলেও এর বাইরে একটা বিশাল অংশ স্ক্রিনিং থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে। যাদের মধ্যে অনেকেই থাকবে গ্লুকোমার রোগী যারা এক সময় অন্ধত্ব নিয়ে আসবে। এটিই ভয়ের কারণ। গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে একটি স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম থাকাটা খুব জরুরি। যত দিন সেটি না হচ্ছে তত দিন নিজ দায়িত্বে এই গ্লুকোমা স্ক্রিনিং করাতে হবে।

ডা: মো: ছায়েদুল হক
এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু) এমএস (চক্ষু)
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল
কনসাল্টেন্ট : আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার
৩৮/৩-৪ রিং রোড, শ্যামলী, আদাবর, ঢাকা
০১৯২০৯৬২৫১২


আরো সংবাদ



premium cement
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি : মিশা সভাপতি, ডিপজল সম্পাদক ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল