২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
যশোরে বিচার কার্যক্রমে স্থবিরতা

অসহনীয় মামলা জট

-

বিচারক সঙ্কটের কারণে যশোরের বিভিন্ন আদালতে প্রায় ১৫ হাজার মামলার বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজসহ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আদালতে বিচারক নেই। ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিয়েই চলছে মামলার কার্যক্রম। বিচারক সঙ্কটের কারণে নতুন মামলা গ্রহণ, শুনানি ও নিষ্পত্তির হার কমে গেছে। বর্তমানে বিচারক না থাকা পাঁচটি আদালতে ১৪ হাজার ৭৯৬টি মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে। বাড়ছে মামলার জট।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিকের বদলির পর থেকে ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে কাজ করছেন অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক কবির উদ্দীন প্রামাণিক। এ আদালতে বর্তমানে এক হাজার ৯৭৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জেলা জজ আদালতে পাবলিক সাক্ষী ও চার্জ গঠন হচ্ছে না। দেওয়ানি আপিল ও রিভিশন পেন্ডিং রয়েছে। হচ্ছে না রায়ও। ফলে এ আদালতের সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি হচ্ছে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত। এ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এটিই একমাত্র আদালত যেখানে সব ধরনের মামলার বিচার কাজ হয়ে থাকে। একই সাথে এই আদালতে নিষ্পত্তি করা হয় সাকসেশন মামলা (কারো মৃত্যুর পরে তার ব্যাংকে থাকা টাকা উঠানোর ক্ষেত্রে এ মামলা করা হয়)। গুরুত্বপূর্ণ এই আদালতে বিচারক নেই সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আসিফ ইকবালের বদলির পর যুগ্ম দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালতের বিচারক খাইরুল ইসলাম এই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসাবে কাজ করছেন। বর্তমানে এ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা চার হাজার ২৩৪টি। রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক মামলা। নিয়মিত বিচারক না থাকায় বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হচ্ছে। যুগ্ম-দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালতেই রয়েছে পাহাড় সমান মামলা। ফলে নিজের আদালতে মামলা রেখে ভারপ্রাপ্ত আদালতের মামলা পরিচালনা করতে সময় নেই তার।
একই অবস্থা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে। যশোরের আটটি থানার জন্য একটি করে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত থাকলেও সদরের আদালতে মামলা রয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে এ আদালতে মামলার পরিমাণ চার হাজার ৪২৫টি। অথচ কোনো বিচারক নেই। ঝিকরগাছার সহকারী জজ আদালতের বিচারক সুজাতা আমিন ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভয়নগর সহকারী জজ আদালতে নির্ধারিত বিচারক নেই এক বছরের বেশি সময় ধরে। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর বিচারক সুমনা পালের বদলির পর এ আদালতের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পান রেজাউল করীম সাধন। এরপর তিনিও বদলি হন। তখন থেকে মনিরামপুর সহকারী জজ আদালতের বিচারক বিলাস মণ্ডল অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এই আদালতে বর্তমানে দুই হাজার ৩৬৪টি মামলা বিচারাধীন।
বিচারক নেই বাঘারপাড়া সহকারী জজ আদালতেও। ২০২২ সালের ৩০ মার্চ সালমান আহমেদ শুভর বদলির পর বর্তমানে এ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্বে রয়েছেন কেশবপুর জজ আদালতের বিচারক শারমীন নাহার। এক হাজার ৭৯৯টি মামলা বিচারাধীন এ আদালতে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত বিচারক কখনোই অন্য কোনো আদালতের মামলা দায়িত্ব নিয়ে করতে পারেন না। সেখানে সাক্ষী হয় না, শুনানি হয় না। পিপিএম ইদ্রিস আলী বলেন, জেলা জজসহ অন্য আদালতে বিচারক না থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত বিচারকদের হাতে সব ধরনের পাওয়ার থাকে না। আপিল রিভিশনে ঘাটতি থাকে। সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement