২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রস্তুত হোন গর্ভধারণের আগেই

প্রস্তুত হোন গর্ভধারণের আগেই -

সুস্থ, স্বাভাবিক সন্তান প্রসব কিন্তু যতটা ভাগ্যের ব্যাপার ততটাই আপনার হাতে। গর্ভধারণের আগে নিজের শরীরকে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত করতে হয়। জমি ভালোভাবে চাষ করলে যেমন ভালো ফসলের সম্ভাবনা থাকে তেমনি নিজেকে তৈরি করে নিলে সন্তান সুস্থ হবে। এ জন্য মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মকানুন।
কাক্সিক্ষত গর্ভধারণের শুরু হয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে। আমাদের দেশে গর্ভধারণের আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন এমনটি খুবই অপ্রতুল। কিন্তু এর উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। আপনি গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। চিকিৎসক আপনার বিস্তারিত ইতিহাস শুনবেন। কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি না তা জানবেন। নিজে থেকেই তাকে আপনার ও আপনার পরিবারের রোগ সংক্রান্ত তথ্য দিন। চিকিৎসকের পরামর্শে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জেনে নিন আপনার শারীরিক কোনো সমস্যা আছে কি না। আপনাকে যদি নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয় তা গর্ভধারণে কোনো জটিলতা করবে কি না তাও জেনে নিতে ভুলবেন না। কিছু কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েড, উচ্চরক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা থাকলে এগুলো গর্ভধারণের আগেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তাই গর্ভধারণের আগেই এগুলোর সঠিক চিকিৎসা করে নিয়ন্ত্রণ করুন।
গর্ভধারণের ইচ্ছা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে আনুন। ওজন বেশি থাকলে গর্ভধারণে দেরি হতে পারে। ওজন হলে বেশি প্রতি মাসে নিয়মিত ডিম্বাণু নিঃসরণের সম্ভাবনা কমে। ফলে কমে যায় গর্ভধারণের সম্ভাবনা। এ ছাড়া হতে পারে গর্ভকালীন উচ্চরক্তচাপ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রি-একলামশিয়া, একলামশিয়া। এগুলো যে কতটা ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে (যেটি শুধু গর্ভাবস্থায় হয়) গর্ভস্থ শিশুর আকার ও ওজন অনেক বেশি হয় ফলে সিজার অপারেশনের হার বাড়ে। এসব শিশুর বিকলাঙ্গতা দেখা দিতে পারে। প্রি-একলামশিয়া , একলামশিয়া হলে গর্ভস্থ শিশুর ওজন খুব কম হতে পারে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশু জন্ম নিতে পারে এমনকি শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে। শুধু তাই নয়, মায়ের খিঁচুনি হয়ে মারা যেতে পারে। আবার কারোর ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে তাহলে ওজন বাড়াতে হবে।
ব্যায়ামের উপকারিতা আমরা কে না জানি। গর্ভধারণপূর্ব ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে ব্যায়াম করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভধারণে অক্ষম অনেকই সক্ষম হয়েছেন ব্যায়ামের দ্বারা।
ধূমপান ও মদপানকে না বলুন। এ ব্যাপারে দেরি নয় আজ এখনই। ধূমপান করলে গর্ভপাত, কম ওজনের শিশু এবং মদপান করলে শিশুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, কম ওজন, জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।


খাবার গ্রহণে সচেতন হোন। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান। আশযুক্ত খাবার বেশি করে খান। ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান বেশি বেশি। ফলিক এসিড কিন্তু খুবই দরকারি। এটি গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় গর্ভধারণের এক মাসের মধ্যেই। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জানা হয় না যে আপনি গর্ভধারণ করেছেন। জানার আগেই কিন্তু গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক গঠনের প্রক্রিয়া শেষ। তাই যদি ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকে তাহলে কিন্তু শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে সমস্যা হতে পারে। এ জন্য গর্ভধারণের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন যে দিন সে দিন থেকেই ফলিক এসিড সেবন করতে থাকুন। শিশুর হাড়ের গঠনে মায়ের ক্যালসিয়াম জরুরি। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি বেশি করে খান। ক্যাফেইন গর্ভবতীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবার। তাই দিনে এক কাপের বেশি কফি নয়। ক্যাফেইন পাওয়া যায় চা, চকলেট ও কোমল পানীয়তে।
গর্ভধারণের আগেই কিছু কিছু ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া জরুরি। রুবেলা ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত অনেক ত্রুটির জন্য দায়ী। যেমন জন্মগত হৃদরোগ, ছানি, গ্লোকোমা, অন্ধত্ব, কানে কম শোনা। গর্ভধারণের আগে ভ্যাকসিন দিয়ে এ সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি শরীরে রুবেলা এন্টিবডি কম থাকে বা না থাকে তাহলে একটি এমএমআর টিকা দিতে হবে। যদি এ টিকা দেয়ার তিন মাস পর্যন্ত কোনো ভাবে গর্ভধারণ করা যাবে না। কারণ এ সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ করলে শিশুর উপরের সমস্যাগুলো দেখা দিবে। তাই সাবধান। এ তিন মাস গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করুন। ছয় বছরের মধ্যে টিটেনাস টিকা নেয়া না থাকলে একটি টিকা নিতে হবে।
টাকার চেয়ে বড় বন্ধু কেউ নেই। তাই গর্ভধারণের আগেই হাতে জমিয়ে রাখুন টাকা-পয়সা।

 


আরো সংবাদ



premium cement