২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাতে ঝিমঝিম লাগা

-

গেল সপ্তাহে ২৪ বছরের একজন নারী আমার চেম্বারে এসে কান্না শুরু করলেন। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে যা জানালেন তার সারমর্ম হলো, তার গত বছর দেড়েক হতে দুই হাতে প্রচন্ড পরিমানে ঝিম ঝিম করে। গর্ভাবস্থায় এটা শুরু হয়েছে। বাচ্চার বয়স ৯-১০ মাস। প্রথমে ভেবেছিলেন বাচ্চা হলে ঝিম ঝিম কমে যাবে। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পর ঝিম ঝিম তো কমে নাই উল্টা দিন দিন বেড়েই চলছে। কোন কাজ করতেই পারেন না। মোবাইলে কথা বলতে গেলে ঝিমঝিম ব্যথা আরোও বেড়ে যায়। রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বাচ্চার কোন কাজ করতে পারেন না।
রোগীর হিস্টিরি ও পরীক্ষা করে আমার কাছে মনে হলো তিনি কার্পাল টানেল সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। চিকিৎসার পর তার অবস্থার বেশ উন্নতি হয়।
আজকে আমি এ রোগ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
আমাদের দুই হাতে অনেকগুলো নার্ভ বা স্নায়ু আছে। এদের মধ্যে একটি হলো মিডিয়ান নার্ভ। বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, থাইরয়েডের সমস্যা, অতিরিক্ত স্থুলতা, পেশাগত কারণ, রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, গ্যাংলিওন, হাতের কব্জিতে আঘাত ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিলেও প্রায় অর্ধেক রোগীর কোন কারণ জানা যায় না।
উপসর্গ দেখেই কিন্তু এ রোগ চেনা যায়। হাতে ঝিম ঝিম করা এ রোগের মুল উপসর্গ। একটু মোটা ভারী কিছু ধরলে, মোবাইলে কথা বলার সময় বা এমন কোন কাজ যাতে কব্জি ভাঁজ পড়ে তাহলে ঝিম ঝিম বেশি হয়। রাতের বেলা ঘুমের সময় হাত ঝিমঝিম করে ঘুম ভেঙে যাওয়া এ রোগের মুল উপসর্গ। কোন কোন ক্ষেত্রে হাতের ঝিমঝিম কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে তবে তা ঘাড় পর্যন্ত যাবে না। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় এ ধরনের রোগী কাঁধের সমস্যার চিকিৎসা পেয়ে থাকেন।
নিউরোলজিস্টরা খুব সহজ দুটো শারীরিক পরীক্ষা করে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলতে এ রোগের কারণ খুঁজে বের করার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রোগ নিশ্চিত হতে নার্ভের পরীক্ষা যাকে এনসিএস বলে তা করা প্রয়োজন হতে পারে।
এ রোগের চিকিৎসা খুবই সহজ। নিউরোপ্যাথিক পেইনের জন্য যেসব ওষুধ যেমন- প্রিগাবালিন, গাবাপেন্টিন, এমিট্রিপ্টিলিন, এনএসএআইডি, স্টেরয়েড ব্যবহার করা যায়। ঘুমের সময় হাতে রিস্ট স্প্লিন্ট ব্যবহার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। ওষুধ সেবনে ভালো না হলে কব্জিতে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেয়া যায়।
অনেকে জানতে চান এ রোগীদের অপারেশনের প্রয়োজন আছে কিনা?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। যদি ওষুধে ভালো না হয় বা হাতের মাংশপেশী শুকিয়ে যায় তাহলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার নিউরোলজিস্ট আপনাকে জানাবেন কখন অপারেশন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement