১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্যান্সারে আশার আলো

ক্যান্সারে আশার আলো -

ক্যান্সার সংক্রামক ব্যাধি নয়। এটি কোনো জীবাণু দ্বারা উৎপন্ন হয় না। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, ‘হরমোন’, তেজস্ক্রিয়তা, পেশা, অভ্যাস (ধূমপান, তামাক সেবন, মদ্যপান ইত্যাদি), সদা-ঘর্ষণ, আঘাত, প্রজনন ও বিকৃত যৌন আচারণ, বায়ু ও পানিদূষণ, খাদ্য (যেমন অত্যধিক চর্বি বা অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য), বিভিন্ন বর্ণগত, জীবন-যাপন পদ্ধতিগত, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রভাব, ‘প্যারাসাইট’ ও ‘ভাইরাস’ সাধারণত সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ এবং এর প্রায় ৯০ শতাংশই এড়িয়ে চলা সম্ভব।
বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রকোপ
বাংলাদেশ প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় দুই লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় দেড় লাখ লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। ক্যান্সারের সার্বিক প্রতিরোধ, দ্রুত ও সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে এ সংখ্যা অনেক কমানো সম্ভব।
ক্যান্সারের চিকিৎসা
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতির হয়।
১. সার্জারি : প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানকে শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে কেটে বাদ দিয়ে শারীরকে ক্যান্সারমুক্ত করা হয়।
বেশির ভাগ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রথমিক অবস্থায় চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়ের সম্ভাবনা সর্বাধিক।
২. বিকিরণ চিকিৎসা বা রেডিওথেরাপি : বেশির ভাগ ক্যান্সার রোগীই শল্য কিংবা অন্যান্য চিকিৎসার সাথে অথবা এককভাবে বিকিরণ পেয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে বিকিরণের সাহায্যে শরীরের ভেতরের ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়।
৩. কেমোথেরাপি : কোনো কোনো ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসা ও বিকিরণ চিকিৎসার সাথে অথবা আগে বা পরে ক্যান্সার কোষধ্বংসী ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।
বস্তুত রোগ ও রোগীর অবস্থাভেদে শল্য চিকিৎসা, রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। তবে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে ক্যান্সারের সম্পূর্ণরূপে নিরাময়ের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
ক্যান্সারের বিপদ সঙ্কেত
খুসখুসে কাশি কিংবা ভাঙা কণ্ঠস্বর।
সহজে সারছে না এমন কোনো ক্ষত।
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
স্তনে বা শরীরের অন্য কোথাও পিণ্ডের সৃষ্টি।
গিলতে অসুবিধা বা হজমের গণ্ডগোল।
মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন।
তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন।
সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়
ক্যান্সারের যেকোনো বিপদ সঙ্কেত দু’সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ।
প্রতি বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা করা।
জরায়ুর ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের পরামশ্য মতো প্রয়োজনে ‘ প্যাপটেস্ট’ করানো।
অন্ত্রে¿র ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনে ডাক্তার দ্বারা ‘এন্ডোস্কপি’ করানো।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
ধূমপান না যেন বিষপান। ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সার ও হৃদরোগের ন্যায় মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে। অতএব ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
তামাক পাতা , তামাক পাতার প্রস্তুত জর্দা, দোক্তা, কিমাম, ইত্যাদিসহ পান সেবনের ফলে এ দেশ মুখের ও গলার ক্যান্সারের হার অত্যধিক। অতএব এ অভ্যাস পরিহার করুন।
শুধু ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকলে বংলাদেশের ৪০ শতাংশ ক্যান্সার কমানো সম্ভব।
মদ্যপানে কেবল যকৃতের ক্যান্সারই হয় না, এতে খাদ্যনালী, কণ্ঠনালী, গলনালী ও ফুসফুসে ক্যান্সারের হারও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মদ্যপান বর্জন করুন।
অত্যধিক চর্বি বা অধিক চর্বিযুক্ত খাদ্য এবং যখন-তখন খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন। খাদ্যতালিকায় ‘ফাইবার’ ভিটামিন এ সি ও ই, জিঙ্ক এবং সেলিনিয়াম যুক্ত খাবার সংযোজন করুন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। শরীরের ওজন পরিমিত রাখুন। মন চিন্তামুক্ত রাখুন। পর্যাপ্ত নিদ্রা ও বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আশার আলো
এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।
বেশির ভাগ অনিরাময়যোগ্য ক্যান্সারের ব্যথা উপশম করা সম্ভব।
লেখক : অধ্যাপক, মেডিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।


আরো সংবাদ



premium cement